গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের কালীগঞ্জে সাইফুল হত্যার দীর্ঘ ৫ বছর পর হত্যা রহস্য উদঘাটন ও হত্যায় জড়িত এক আসামী গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুর। গ্রেফতারকৃত আসামী আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে।
নিহত মোঃ সাইফুল ইসলাম (৫০) গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার বাসাবাসি এলাকার রফিজ উদ্দিনের ছেলে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর নাম নজরুল ইসলাম (৩০)। সে কালীগঞ্জ থানার বাসাবাসি এলাকার মোঃ সাইজ উদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, গত ২০১৫ সালের ১৪ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে মোঃ সাইফুল ইসলামের মৃতদেহ বাসাবাসি এলাকার রাজউক সাইট অফিসের পাশে বালু নদীতে ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে পুলিশকে সংবাদ দেয়। এ সংক্রান্তে কালীগঞ্জ থানায় একটি অপমৃত্যূ মামলা রুজু হয়। ময়না তদন্ত রিপোর্টে সাইফুলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে মর্মে জানা গেলে উক্ত ঘটনায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় মামলা নং- ০৮, তারিখ-১১/১২/২০১৭ ইং ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দঃবিঃ রুজু হয়। মামলাটি তদন্ত শেষে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করলে বিজ্ঞ আদালত চূড়ান্ত রিপোর্ট আমলে না নিয়ে স্বপ্রনোদিত হয়ে ন্যায় বিচারের স্বার্থে মামলাটি পিবিআই গাজীপুর জেলাকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। পিবিআই এর ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এর সার্বিক সহযোগিতায় তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ সফিকুল ইসলাম ঘটনায় জড়িত আসামী নজরুল ইসলাম (৩০) কে কালীগঞ্জ থানাধীন বাসাবাসি এলাকা হতে আজ শনিবার (২৪ অক্টোবর) গ্রেফতার করেন। পরে সাইফুল ইসলামকে হত্যার বিষয়ে আসামী নজরুল ইসলাম (৩০) তার প্রদত্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নিজেকে জড়িয়ে অপর সহযোগী আসামীদের নাম প্রকাশ করে ঘটনা সংক্রান্তে স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃকাঃবিঃ এর ১৬৪ ধারা মোতাবেক আজই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। ধৃত আসামী নজরুল ইসলাম তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন যে, ঘটনার দিন গত ২০১৫ সালের ১৩ আগস্ট ভোর অনুমান সাড়ে ৪ টার সময় সাইফুলসহ গ্রামের ৪/৫ জন ধৃত আসামী নজরুলের ট্রলার নৌকায় করে কাঁচা তরকারী বিক্রির জন্য কাঁচকুড়া বাজারে গিয়ে ভোর সাড়ে ৬ টার সময় আবার তার নৌকা যোগে বাসাবাসি গ্রামে ফিরে আসে। আবার সকাল অনুমান সাড়ে ৭টার দিকে বাসাবাসি ঘাট হতে ডিসিস্ট সাইফুল তার পরিচিত ২জন সঙ্গীসহ বাংলা মদ নিয়ে পিকনিকের জন্য ২ হাজার টাকায় সারাদিনের জন্য তার নৌকাটি ভাড়া করে। নৌকা ভাসিয়ে তারা সকলে খালি পেটে মদ খেতে খেতে ইছাপুর বাজারে গিয়ে রুটি, গরুর মাংস কিনে আবার বাসাবাসি ঘাটে আসলে পরিচিত আরো ০২ জন তাদের সাথে নৌকায় উঠে। ডিসিস্ট সহ মোট ৬ জন, নৌকাটি বালু নদীতে ভাসিয়ে তারা সকাল ৯টায় রুটি, মাংস ও মদ খেয়ে ২/৩ ঘন্টা নাচানাচি করে ও সারদী বাজারের দিকে যায়, আবার বাসাবাসি ঘাটের দিকে ফিরে আসে। সবাই মদ খেলেও সাইফুল সবচেয়ে বেশী নেশাগ্রস্ত ছিল। ফেরার সময় নৌকার ছইয়ের উপরে ডিসিস্ট সাইফুলের সাথে অন্যান্যদের ঝগড়া হয়, কথা কাটাকাটি হয়। সে নৌকার অন্যান্যদের বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। বেলা সাড়ে ১২ টা -১ টায় সাইফুল ছাড়া সকলে নৌকার ভিতরে চলে এসে ডিসিস্ট সাইফুলকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। ধৃত আসামী নজরুল তখন নৌকার পানি সেচার সময় তাদের কথা শুনে এবং সেও হত্যার পরিকল্পনায় অংশ নেয়। কিছু সময় পরে সাইফুল নৌকার ভিতরে চলে আসলে, তার কোমরে থাকা গামছা নিয়ে তাদের একজন সাইফুলের গলায় প্যাঁচ দিয়ে ধরে শ্বাস রোধ করে তাকে হত্যা করে। এ সময় বাকী জনেরা সাইফুলের হাত-পা ধরে রাখে। সাইফুল শ্বাসরোধ হয়ে মারা গেলে আসামী ০৫ জন সকলে মিলে ধরাধরি করে সাইফুলের লাশ বালু নদীতে ফেলে দেয়। ধৃত আসামী নজরুল মৃত সাইফুলের লাশ নদীতে ফেলার সময় লাশের পায়ে ধরে তুলতে সহযোগিতা করে। পলাতক আসামীগন এ নিয়ে কাউকে কিছু বলতে নজরুলকে নিষেধ করে ও ভয়ভীতি দেখায়। তারপর সকলে বাসাবাসি ঘাটে এসে নৌকা হতে নেমে যে যার বাড়ীর দিকে চলে যায়। তারা গ্রামের লোকজনকে জানায়, সাইফুল নৌকায় অধিক মদ খেয়ে মাতলামি করে নাচানাচি করার সময় পানিতে পরে ডুবে গেছে। পরদিন বেলা ১১টায় সাইফুলের মরা লাশ পানিতে ভেসে উঠে।