গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ৫টি লাইসেন্স প্রাপ্ত ও ২৫টি লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা আসন্ন মৌসুমে চালু করতে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহায়তা কামনা করেছেন ইটভাটা মালিকরা। রবিবার দুপুরে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা আয়োজন করে কাপাসিয়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ এ সহায়তা কামনা করেছেন।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপজেলার ৪৫জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। আর এ মতবিনিময় সভা আয়োজন করতে তাদের প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
এ সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো: আসাদুজ্জামান আসাদ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রওশান আরা সরকার।
এ সভায় কাপাসিয়া উপজেলার ৩০টি ইটভাটার মালিকদের মধ্যে মো: মোশারফ হোসেন, ফকির ইস্কান্দর আলম জানু, মো: বদরুজ্জামান বেপারী, মোজাম্মেল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো: মোশারফ হোসেন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কাপাসিয়া উপজেলার ৩০টি ইট ভাটায় প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করে। অনেকে বিদেশ থেকে দেশে এসে ইটভাটায় বিনিয়োগ করেছে। অনেকে ব্যাংক ঋণ নিয়ে সর্বশান্ত হবার পথে। বর্তমানে সরকারী বিধি মানার কারণে অধিকাংশ ইটভাটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই সরকারের কাছে তাদের আবেদন সরকার ইটভাটা আইনের কিছু শর্ত ছাড় দিয়ে আগামী দুই বছর ইটভাটা চালু রেখে ব্যবসা করার জন্য সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানান।
রবিবার রাতে কাপাসিয়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো: মোশারফ হোসেনের সাথে মুঠোফোনে গণবাণীর কথা হয়। এসময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপজেলায় সকল ইটভাটার সঠিক কাগজপত্র নেই। ৩০টি ইটভাটার মধ্যে ৫টির লাইসেন্স রয়েছে, বাকী ২৫টি ইটভাটার লাইসেন্স নেই। ৩০টি ইটভাটায় লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করলে একটি ইটভাটায় ৩ হাজার ৩শর বেশী শ্রমিক কাজ করে। বাস্তবে এটা কি সত্য? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাটি কাটা, আনা, ইট বানানো, পুড়ানো ইত্যাদি কাজ করে, তাছাড়া শ্রমিকদের উপর তাদের পরিবারের লোকজন জড়িত তাই বলেছি, তবে হিসাবে ভূল হতে পারে। বিদেশ থেকে কেউ এসে অবৈধ ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে তার দায় সরকার কেন নিবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর দেননি। তবে, তিনি আরো বলেন, আমরা অনেক টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছি, তাই আমাদের একটা সুযোগ দেয়া হোক যাতে আগামীতে সবকিছু ঠিক করে নিতে পারি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্সসহ বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে শত শত একর কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। এসব ইট ভাটায় প্রতি বছর ফসলি জমি ও এলাকার ছোট বড় টেক টিলা কেটে মাটি নিয়ে তৈরী করা হয় ইট। নিয়ম নীতি না মেনে অবৈধ এসব ভাটায় ইট পোড়ানোর ফলে ব্যাপক বায়ু দূষণে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অপরদিকে সরকার বঞ্চিত হয় বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে।
নিয়ম অনুযায়ী ইটভাটা চালু করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে লাইলেন্স নিতে হয়। এছাড়া গত বছরের ২০ নভেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে প্রচারিত ‘ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা সংক্রান্ত’গণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকার ইট প্রস্তুত কার্যক্রমকে পরিবেশ সম্মতভাবে পচিালনার লক্ষে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) জারি ও কার্যকর করেছে। উক্ত আইনে নিম্নরূপ বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত/পরিবেশগত ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসককর্তৃক ইস্যুকৃত লাইসেন্স ব্যতিত কোনো ব্যক্তি ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা করতে পারবেন না। আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা; সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর; সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি; কৃষিজমি; প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না। নিষিদ্ধ এলাকার সীমারেখা হতে ন্যূনতম এক কি.মি. দূরত্বের মধ্যে; সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা হতে দুই কি.মি. দূরত্বের মধ্যে; বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান হতে এক কি.মি. দূরত্বের মধ্যেও ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।
বাস্তবে কাপাসিয়ার ইটভাটার মালিকরা এ আইন ও নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কাই করছেন না। উপজেলার কাপাসিয়া সদর, দুর্গাপুর, তরগাঁও, কড়িহাতা, সনমানিয়া, ঘাগটিয়া, রায়েদ, সিংহশ্রী ও টোক ইউনিয়নে ইটভাটা রয়েছে। ইটভাটার মালিকরা কোন নিয়ম নীতি না মেনে শত শত একর ফসলি জমি নষ্ট করে ইটভাটা তৈরী করেছেন। তাছাড়া নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বনাঞ্চলের পাশে, লোকালয়, হাট বাজার ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশেও গড়ে তোলা হয়েছে বহু ইটভাটা। নদীর তীর দখল করেও অনেক ইটভাটা গড়ে উঠেছে।
গেল মৌসুমে গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কাপাসিয়ায় কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে মোট ১২টি ইটভাটা বন্ধ করে দেয়। কয়েকটিকে জরিমানাও করে। তারপরেও আসন্ন মৌসুমে আবারও সরকারের আইন নিয়ম না মেনে অবৈধ ইটভাটা চালু হলে এলাকায় কৃষি জমি ও পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতির ঝুকি সৃষ্টি হবে।