গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের মাটি ও মানুষের নেতা, প্রয়াত সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টারের ৭০তম জন্ম বার্ষিকী আজ। ১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর আজকের দিনে তিনি তৎকালীন ঢাকা জেলার (বর্তমান গাজীপুর) পুবাইল ইউনিয়নের হায়দরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
আহসানউল্লাহ মাস্টারের রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। তিনি গাজীপুর-২ (গাজীপুর সদর-টঙ্গী) আসন হতে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে দুবার সংসদ সদস্য, ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৩ ও ১৯৮৭ সালে দু’দফা পূবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য, শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। আহসান উল্লাহ মাস্টার শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ও সাধারণ সস্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
মরহুমের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সকল আনুষ্ঠানিকতা করোনার কারণে সীমিত করা হয়েছে।
শিক্ষা ও কর্মজীবন:
আহসানউল্লাহর শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের হায়দরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ করে টঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। আহসানউল্লাহ ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করে তৎকালীন কায়েদে আযম কলেজে (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ) একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালে ডিগ্রি পাস করার পর আহসানউল্লাহ টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে তিনি ওই বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক (১৯৭৭-১৯৮৪) ও প্রধান শিক্ষকের (১৯৮৪-২০০৪) দায়িত্ব আমৃত্যু পর্যন্ত পালন করেন। আহসানউল্লাহ মাস্টার টঙ্গী শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে সক্রিয় ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান:
আহসানউল্লাহ মাস্টার ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক ও নির্যাতিত হয়েছিলেন। ভারতের দেরাদুনের তান্দুয়া থেকে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে পুবাইল, টঙ্গী, ছয়দানাসহ বিভিন্ন জায়গায় গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ জয়দেবপুরের ক্যান্টনমেন্টের বাঙালী সৈন্যদের নীরস্ত্র করতে ঢাকা থেকে আসা পাকিস্তানী বাহিনীকে ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়ার জন্য জনতাকে উদ্বুদ্ধ করার কাজে তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
রাজনৈতিক জীবন:
১৯৬২ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন-এর বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। তখন তিনি ছাত্রলীগ করতেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যখন রাজপথে, তখনো আহসানউল্লাহ সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৯ সালে ১১ দফার আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।
১৯৮৩ সালের পুবাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ প্রতিটি নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছেন বিপুল ভোটে। ১৯৮৮ সালে পুবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এর আগে তিনি ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া আহসানউল্লাহ মাস্টার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) চেয়ারম্যান ছিলেন। তার জ্যেষ্ঠ ছেলে মো. জাহিদ আহসান রাসেল বর্তমানে জাতীয় সংসদের সদস্য এবং সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী।
সম্মাননা:
তার নাম অনুসারে গাজীপুর এর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর সম্মান (স্নাতক) ছাত্র হল এর নাম করণ করা হয়েছে এবং ২০১৩ সালে টঙ্গীতে শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়াম ও উড়াল সেতু, ২০১৯ সালে গাজীপুরের পিটিআই ক্যাম্পাসে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার অডিটরিয়াম নিমির্ত হয়েছে।
মৃত্যু :
২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ ও জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি পদে আসীন থাকাকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মদদ পুষ্ট একদল সন্ত্রাসী টঙ্গীস্থ নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় প্রকাশ্যে দিবালোকে আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনার পরদিন তার ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় ২০০৪ সালের ১০ জুলাই পুলিশ অভিযোগপত্র দায়ের করে। ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল এই মামলার রায়ে ২২ জনের ফাঁসি ও ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ হয়। ২০১৬ সালের ১৫ জুন হাইকোর্ট ডিভিশন আসামীদের ডেথ রেফারেন্স, জেল আপীল ও আবেদনের শুনাণি শেষে ৬ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল এবং ৮ জনের যাবজ্জীবন বহাল রেখে ১১ জনকে খালাস দেন। বিচার চলাকালে ২জন আসামী মারা যায়। যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত একজন পলাতক আসামীর আপিল না থাকায় তার ব্যাপারে আদালত পূর্বের রায় বহাল রাখেন।