গণবাণী ডট কম:
গত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে বিজেপি সরকার। এর মধ্য দিয়ে স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা হারায় জম্মু-কাশ্মির।
জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর সেখানকার স্বাধীনতাপন্থী ও ভারতপন্থী বিপুল সংখ্যক রাজনীতিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেখানে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এসবের কারণ হিসাবে নরেন্দ্র মোদি সরকার বলছে, ‘প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে জম্মু ও কাশ্মিরকে বিশাল নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জনসাধারণের প্রাণহানি ঠেকাতেই এই পদক্ষেপ। এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে নোবেলজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেন ‘এটি সর্বোত্তম ঔপনিবেশিক অজুহাত। ব্রিটিশরা এভাবেই ২০০ বছর ধরে দেশ শাসন করেছিল। স্বাধীনতা লাভের পর আমার চূড়ান্ত প্রত্যাশা ছিল, আমরা কখনও প্রতিরোধমূলক আটকের ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যে ফিরে যাব না।’ ১৯ আগস্ট ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তার আশা ছিল, স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ যুগের ‘প্রতিরোধমূলক আটক’ বন্ধ হবে।
সরকারি সিদ্ধান্তের বিভিন্ন ফাঁকফোকড়গুলোকে সামনে এনে ৮৫ বছর বয়সী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিশ্বের গণতান্ত্রিক মানদণ্ড অর্জনের জন্য ভারত এতো কিছু করেছে এবং ভারতই গণতন্ত্রের পক্ষে প্রথম প্রাচ্যের দেশ ছিল। তারপরও আমি এখন আর ভারতীয় হিসেবে এসব নিয়ে আর গর্বিত নই। কেননা যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাতে আমরা সেই খ্যাতি হারিয়ে ফেলেছি।’
এতোদিন কাশ্মির রাজ্যটির নিজস্ব সংবিধান, পতাকা, দণ্ডবিধি ছিল। অন্য রাজ্যের কেউ এসে সেখানে জমি কিনতে পারতো না। তবে ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ায় অন্য রাজ্যের মানুষদের কাশ্মিরে এসে জমি কেনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘রাজ্যের(জম্মু ও কাশ্মির) জনগণকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া উচিত। এটি এমন একটি বিষয় যেক্ষেত্রে কাশ্মিরিদের আইনসঙ্গত দৃষ্টিকোণ রয়েছে, কারণ এটি তাদের জমি।’
জম্মু ও কাশ্মিরের মূলধারার রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতারের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন অমর্ত্য সেন। তিনি বলেন, ‘জনগণের নেতাদের কণ্ঠস্বর না শুনে আপনারা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারেন বলে আমি মনে করি না। যারা একসময় দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ও সরকার গঠন করেছিলেন তারাসহ হাজার হাজার নেতাকে আপনারা যদি দমন করে রাখেন এবং তাদের অনেককে কারাগারে আটকে রাখেন… তাহলে আপনারা গণতন্ত্রের সেই মাধ্যমকে দমন করছেন, যা গণতন্ত্রকে সচল রাখে।’