গণবাণী ডট কম:
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী কোভিশিল্ড টিকার ২০ লাখ ডোজ গেল রাতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে ক্রয় করা ৩ কোটি ডোজের দ্বিতীয় চালান এটি।
মুম্বাই থেকে স্পাইস জেটের একটি বিমানে টিকার চালান নিয়ে সোমবার রাত সোয়া ১২টার পর ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এ চালানসহ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকার ৯০ লাখ ডোজ বাংলাদেশে এলো।
ভারতে সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশ সরকার ৩ কোটি ডোজ টিকা ক্রয় করে।চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ৬ মাসে ৩ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী গত ২৫ জানুয়ারি প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ এসেছিল। তার আগে ভারত সরকার উপহার হিসেবে দিয়েছিল ২০ লাখ ডোজ টিকা।
নতুন আসা টিকা বহন করতে বেক্সিমকোর পাঁচটি ফ্রিজার ভ্যান ঢাকা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিল। উড়োজাহাজ থেকে নামানোর পর টিকা নিয়ে এসব ভ্যান যায় টঙ্গীতে বেক্সিমকোর ওয়ারহাউজে। রাত দেড়টার দিকে ফ্রিজার ভ্যানগুলো টিকা নিয়ে বিমানবন্দর ত্যাগ করে। সেখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা থাকলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কেউ কথা বলেননি।
পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আবু নাঈম মোহাম্মদ সোহেল গণমাধ্যমকে ২০ লাখ ডোজ টিকা আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, স্পাইস জেটের একটি ফ্লাইটে অন্যান্য মালামালের সঙ্গে টিকার চালানও এসেছে। “এই চালানে ২০ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। এগুলোর মেয়াদ আছে মধ্য জুন পর্যন্ত। এই ভ্যাকসিন এখান থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ওয়ারহাউজে নেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়ার পরে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হবে। যেসব কেন্দ্রে টিকা কম আছে সেখানে আগে যাবে।”
হাতে থাকা টিকার পুরোটাই প্রথম ডোজ :
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলছেন, টিকার যথেষ্ট সরবরাহ নিশ্চিত রয়েছে। তাই প্রথম দফায় ৩৫ লাখ টিকা দেবার যে চিন্তা ছিল তা পরিবর্তন করে এখন সংরক্ষণে থাকা পুরোটাই প্রথম ডোজ হিসেবে দেবার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, “টিকার চালান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তবে টিকার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে কিনা - সেই আশঙ্কাতেও দ্রুত হাতে থাকা সব ডোজ সরকার শেষ করতে চায়, মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।
এপ্রিল মাস থেকে দ্বিতীয় ডোজ :
এপ্রিল মাস থেকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া শুরু হবে বলে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। আর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শেষ হওয়ার আগেই একই সাথে আরও নতুন নিবন্ধনকারীকে প্রথম ডোজ দেয়া শুরু করতে চায় সরকার।
শীঘ্রই প্রথম সারির কর্মী হিসেবে শিক্ষকদের টিকা দেয়া শুরু করার ঘোষণা এসেছে। অন্যদিকে সংরক্ষণের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ টিকার চালান একটু বিরতি দিয়ে আসার পক্ষপাতী বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আগামী কয়েক মাসে যত ডোজ আসার সম্ভাবনা
২৭ জানুয়ারি কোভিশিল্ড টিকা প্রথম দেয়া হয় পর্যবেক্ষণের জন্য। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একযোগে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর পর থেকে গড়ে প্রতিদিন দুই লাখ ডোজের মত টিকা দেয়া হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ২৩ লাখ ৮ হাজার ১৫৭ জন মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত নিবন্ধন হয়েছে ৩৫ লাখের বেশি।
বাংলাদেশে শুরুর দিকে টিকার ব্যাপারে মানুষজনের অনাগ্রহ থাকলেও এখন আগ্রহ অনেকটাই বেড়েছে।
বাংলাদেশ কি পর্যাপ্ত টিকা পাবে?
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর ধারণা দিয়েছেন কী পরিমাণে টিকা আগামী কয়েক মাসে বাংলাদেশে এসে পৌঁছাতে পারে।
“সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে কেনা টিকা সহ আমাদের পাইপলাইনে দশ কোটির যা পাঁচ কোটি মানুষকে দুই ডোজে দেয়া হবে” - বলছেন তিনি।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা বণ্টনের জন্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাক্সিন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে তৈরি হয়েছে কোভ্যাক্স। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ২৭ শতাংশের জন্য টিকা তারা সরবরাহ করবে।
মি.আলমগীর বলছেন, “ছয় কোটি আশি লাখ টিকা বাংলাদেশকে দেবে কোভ্যাক্স।” এর প্রথম চালান এ মাসের শেষে আসতে শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
‘বাংলাদেশের টিকা কর্মসূচী অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে’ :
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মাহফুজা রিফাত মনে করছেন, বাংলাদেশ টিকা দেবার ক্ষেত্রে অনেক দেশের থেকে এগিয়ে থাকলেও বারবার সংখ্যা ও পরিকল্পনা পরিবর্তন না হলে ভাল হত।
তিনি বলছেন, “বিশ্বব্যাপী টিকার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সবকিছু অতিক্রম করেও যেভাবে আমাদের টিকা কর্মসূচী চলছে, আমি বলবো সেটা আশানুরূপ। কিন্তু এখনো পর্যন্ত যে পরিমাণ টিকা পাওয়া যাবে বলে বলা হচ্ছে তা বাংলাদেশে জনসংখ্যার জন্য যথেষ্ট নয়।”
“তাই সামনে আমাদের এই সেবার মান ও গতি ধরে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে যাতে কোন চ্যালেঞ্জের মধ্যে আমরা না যাই।” খবর : বিবিসি ও অন্যান্য।