গণবাণী ডট কম:
আজ ১০ই এপ্রিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে গঠিত হয় বাংলাদেশর প্রথম সরকার, যা মুজিবনগর সরকার হিসাবে পরিচিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ১৯৭০ এর নির্বাচনের রায়কে ভিত্তি করে এই সরকার গঠন করা হয় এবং এর ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথ তলায় সরকার শপথ গ্রহণ করে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের ৫০ বছর পূর্ণ হলো আজ।
বাংলাদেশের প্রথম সরকারে রাষ্ট্রপতি করা হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ সরকারে সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপতি (তিনি পরে ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন), তাজউদ্দীন আহমদ প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ছাড়াও প্রতিরক্ষা, তথ্য, সম্প্রচার ও যোগাযোগ, অর্থনৈতিক বিষয়াবলি, পরিকল্পনা বিভাগ, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, শ্রম, সমাজকল্যাণ, সংস্থাপন এবং অন্যান্য যেসব বিষয় কারও ওপর ন্যস্ত হয়নি তার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। এছাড়া এম মনসুর আলী-মন্ত্রী, অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ এইচ এম কামরুজ্জামান-মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়। এম এ জি ওসমানী প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব পান।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
পরে পাকিস্তানের নির্বাচিত জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি গোপন স্থানে মিলিত হয়ে প্রবাসী সরকার গঠন করেন। ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। একই সাথে প্রবাসী সরকারের এক অধ্যাদেশে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। ঘোষণা করা হয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ঘোষণা পত্র। পৃথিবীর ইতিহাসে শুধু মাত্র দুইটি রাষ্ট্র জন্ম লাভ করেছে স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রের মাধ্যমে। তার একটি হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, অপরটি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বৈদ্যনাথ তলার নাম রাখেন ‘মুজিব নগর’। সেই থেকে কলকাতায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ‘মুজিবনগর’সরকার নামে পরিচিতি পায়। এই সরকারের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়।
এই সরকার গঠনের পর তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে সকল শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রতি রাষ্ট্রপতির আদেশ জারি হয়। এইদিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি নজরুল ইসলাম ‘আইনের ধারাবাহিক আদেশ’জারি করেন। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র উপস্থিত নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের দ্বারা গৃহীত হয়।
১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ জাতির উদ্দেশে বেতার ভাষণ দেন, যা আকাশবাণী থেকে প্রচার করা হয়। দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারে, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। এ ভাষণে তিনি দেশব্যাপী পরিচালিত প্রতিরোধ যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন।
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের এই প্রথম সরকারের চেষ্টায় ভারত এবং ভুটান এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়।