গণবাণী ডট কম:
বাংলাদেশের এক সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা, ঢাকাই সিনেমার ‘মিষ্টি মেয়ে’ খ্যাত অভিনেত্রী ও নির্মাতা সারাহ বেগম কবরী ইন্তকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে — রাজেউন)। শুক্রবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে তিনি মারা যান।
বাংলা সিনেমার কিংবদন্তী অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী এদেশের চলচ্চিত্রে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনেও তার ছিল সমান জনপ্রিয়তা।
কবরীর মৃত্যুর পর গভীর শোক প্রকাশ করছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ। অভিনেতা অভিনেত্রীরা ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষ তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে।
গত ৫ই এপ্রিল করোনাভাইরাস পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পর ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। পরে আটই এপ্রিল তাকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়। এরপর অবস্থার আরও অবনতি হলে বৃহস্পতিবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শুক্রবার মধ্যরাতে মারা যান কবরী।
মৃত্যুকালে কবরীর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। সিনেমায় অভিনয় ছাড়াও সিনেমা প্রযোজনা এবং পরিচালনার সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার।
১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের সুতরাং ছবির মাধ্যমে মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে নায়িকা হিসেবে তার অভিনয় জীবনের সূচনা হয়েছিল। ২০০৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নারায়ণগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সর্বস্তরেই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফেসবুক সয়লাব হয়ে যায় তাকে ঘিরে দেয়া নানা ধরণের পোস্টে। কেউ কেউ কবরী অভিনীত গান বা চলচ্চিত্রের ক্লিপ জুড়ে দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার প্রতি।
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, বাংলা চলচ্চিত্রের বিকাশে তার অবদান মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এদেশের চলচ্চিত্রে কবরী এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনৗতি ও সংস্কৃতি অঙ্গনে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাংলা চলচ্চিত্রের প্রবল জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বিরোধী দল বিএনপিও। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল কবরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এর বাইরেও মধ্যরাতে কবরীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক হয়ে ওঠে বিষাদময়।
চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলাতে জন্মগ্রহণ করেন অভিনেত্রী কবরী সারোয়ার৷ জন্মস্থান বোয়ালখালী হলেও শৈশব ও কৈশোর বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম নগরীতে। তার আসল নাম মিনা পাল৷ পিতা শ্রীকৃষ্ণ দাস পাল এবং মা শ্রীমতি লাবণ্য প্রভা পাল৷
১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সুতরাং’ ছবির মধ্যে দিয়ে যখন সিনেমায় অভিষেক হয় তখন তার নতুন নাম হয় কবরী।
এরপরের দুই দশকে অভিনয় করেছেন ‘রংবাজ’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘দ্বীপ নেভে নাই’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘সুজন সখী’, ‘সারেং, হীরামন, ময়নামতি, চোরাবালি, পারুলের সংসার, বিনিময়, আগন্তুক -সহ জহির রায়হানের তৈরি উর্দু ছবি ‘বাহানা’ এবং ভারতের চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের ছবি ‘তিতাস একটি নদীর নাম’সহ বহু ব্যবসা সফল এবং আলোচিত সিনেমায় প্রধান নারী চরিত্রে।
১৯৭৫ সালে নায়ক ফারুকের সঙ্গে ‘সুজন সখী’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর কবরীকে আর পেছনে ফিরে দেখতে হয়নি। এই সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছে যান তিনি। পরবর্তীতে তিনি রাজ্জাক, সোহেল রানা, ফারুক, উজ্জ্বল, জাফর ইকবালের মত অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
২০০৬ সালে তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘আয়না’মুক্তি পায়। ইদানীং তিনি দ্বিতীয় সিনেমা ‘এই তুমি সেই তুমি’নির্মাণ করছিলেন।
সিনেমায় অভিনয় ছাড়াও সিনেমা প্রযোজনা এবং পরিচালনার সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার।
কবরী প্রথম বিয়ে করেন চিত্ত চৌধুরীকে। সেখানে বিচ্ছেদের পর ১৯৭৮ সালে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী শফিউদ্দিন সারওয়ারকে বিয়ের পর তিনি কবরী সারওয়ার নামে পরিচিত পান। ২০০৮ সালে তাদের বিয়েবিচ্ছেদ হয়। কবরী পাঁচ সন্তানের জননী।
এরপর যখন রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং সংসদ সদস্য হন, তখন থেকে তিনি সারাহ বেগম কবরী নামে পরিচিত। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক`।