গণবাণী ডট কম:
আজ ১৪৪২ হিজরির ২৬তম রমজান। আজ রবিবার দিবাগত রাতে পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে শবে কদরের রজনী। মুসলমানদের কাছে শবে কদর অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি রাত। মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে সওয়াব হাসিল ও গুনাহ মাফের রাত হিসেবে শবে কদরের ফজিলত অতুলনীয়। এ রাত ‘হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’। কারণ, শবে কদরের এ রাতে পবিত্র কোরআন মজীদ অবতীর্ণ হয় এবং এই রাতকে কেন্দ্র করে কোরআন শরিফে ‘আল-কদর’ নামে একটি সূরাও নাজিল করা হয়। তাই মুসলিম উম্মাহর কাছে শবে কদর খুবই তাৎপযপূর্ণ ও পুণ্যময় রাত।
হাদিস শরিফে আছে, ২০ রমজানের পর যে কোনো বিজোড় রাত কদর হতে পারে। তবে, ২৬ রমজানের দিবাগত রাতেই লাইলাতুল কদর আসে বলে আলেমদের অভিমত।
হজরত আয়শা (রা.) নবিয়ে করিম (সা.) কে জিজ্ঞেস করেন যে, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.) আমি যদি ভাগ্যক্রমে শবে কদরের রাত পেয়ে যাই, তাহলে কী দোয়া পাঠ করবো। আল্লাহর রাসুল (সা.) আয়শা (রা.) কে বলেন, এই দোয়া পাঠ করিও। আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্না। অর্থাৎ, হে আল্লাহ তুমি বড় ক্ষমাশীল, আমাকে ক্ষমা করো। শবে কদরের রাতে মহান আল্লাহর কাছে বেশি করে খালিছ তাওবা করা উচিত। শবে কদরের রাত থেকে অনেক মানুষ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইতিকাফে বসতে চান। মহান আল্লাহ পাক সবার ইতিকাফ এবং মহান আল্লাহর নিকট খালিছ তাওবাকে কবুল করুন।
অতএব আমরা মানবজাতি কার কখন মৃত্যু আসে সেটা আমরা জানি না। তবে সব সময়ই আল্লাহর কাছে তাওবার হালতে থাকা খুবই জরুরি। মৃত্যুর আগে ঈমান নছিবের অপর নেক আমলের নাম হলো তাওবা।
পবিত্র ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, অন্যান্য সময় এক হাজার মাস ইবাদত করলে যে সওয়াব পাওয়া যায়, কদরের এই রাতে ইবাদত করলে তার চেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। পবিত্র শবে কদর সমগ্র মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বরকত ও পুণ্যময় রজনী। এ রজনীতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত লাভের আশায় ইবাদত-বন্দেগি করে রাত কাটান।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের মতো বাংলাদেশের মুসলমানেরাও নিজেদের গুনাহ মাফ এবং অধিক সওয়াব হাসিলের আশায় নফল ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকারের মধ্য দিয়ে রাতটি অতিবাহিত করবেন। পবিত্র এই রাতে অনেকে কবরস্থানে গিয়ে স্বজনদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন।
এ উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ সারাদেশের মসজিদে আলোচনা, মিলাদ ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আজ রবিবার বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র শবে কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। এ ছাড়া রাতে পবিত্র শবে কদরের ফজিলত ও করণীয়’ শীর্ষক ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ, কিয়াম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। মসজিদে মসজিদে করোনা মহামারি থেকে মুক্তির জন্য এবং দেশ জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হবে।
পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হবে।
পবিত্র শবে কদর উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়ে বলেছেন, পবিত্র কোরআনের শিক্ষা আমাদের পার্থিব সুখ-শান্তির পাশাপাশি আখিরাতে মুক্তির পথ দেখায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “লাইলাতুল কদর এক মহিমান্বিত রজনি। সিয়ামসাধনার মাসের এ রাতে মানবজাতির পথনির্দেশক পবিত্র আল-কোরআন পৃথিবীতে নাযিল হয়। শেখ হাসিনা বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এ রাতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্যলাভ করতে পারি। অর্জন করতে পারি তাঁর অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফেরাত।
শবে কদর উপলক্ষে আগামীকাল সোমবার সরকারি ছুটি থাকবে।