গণবাণী ডট কম :
নিখোঁজ হওয়ার ২৮দিন পর গাজীপুরে শ্রীপুরে ময়লার স্তুপ হতে হতভাগ্য কিশোর সোহানের কঙ্কাল উদ্ধার পুলিশ। কঙ্কালের পাশে পড়ে থাকা কাপড় চোপর দেখে স্বজনরা তার পরিচয় শনাক্ত করে।
পরে জানা যায়, সে গাজীপুরের শ্রীপুরের আব্বাস আলী ও নাজমা বেগমের সন্তান সোহান (১৬)।
এঘটনার প্রায় আট মাস পর জানা গেল, পিতার সততা ও বন্ধুদের প্রতিশোধের বলি হতে হয়েছে সোহানকে। সোহানের পিতা মাদকসহ পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয় সোহানের বন্ধু সাগরকে। এর প্রতিশোধ নিতে সাগর অপর কয়েকজনের সহায়তায় সোহানকে খুন করে লাশ গুম করে।
এমন লোমহর্ষক ঘটনা জানালেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান। তিনি আজ মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, পিবিআই গাজীপুরে ময়লার স্তুপ হতে মানুষের কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনায় পরিচয় সনাক্ত এবং মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করার পর সে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধি দিয়েছে।
মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানিয়েছেন, ২০২০ সালের ৩ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সোহান নিখোঁজ হয়। পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে সোহানের কোন সন্ধান পায়নি। পরে সোহানের মা শ্রীপুর থানায় ৬ আগস্ট সাধারণ ডায়েরী (জিডি নং-২২০) দায়ের করে।
এ ঘটনার ২৮ দিনপর গত বছরের ৩১ আগস্ট সকাল ১১টায় সোহানের স্বজনরা লোক মূখে সংবাদ পায় যে, শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ী খালের ব্রীজ সংলগ্ন ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম পার্শ্বে নামা জায়গায় ময়লার স্তুপের মধ্যে একটি ছেলে মানুষের কঙ্কাল পড়ে আছে। পরে সোহানের পিতা মাতা ও আত্মীয় স্বজন ঘটনাস্থলে এসে একজন ছেলে মানুষের গায়ের চামড়া ও মাংসহীন অবস্থায় হাড়গুড় বিশিষ্ট একটি কঙ্কাল দেখতে পায়। কঙ্কালের পাশে একটা কালো রংয়ের ফুল প্যান্টের পোড়া অংশ বিশেষ, হালকা গোলাপী রংয়ের একটি ফুলহাতা পাঞ্চাবীর পোড়া অংশ বিশেষ, একটি প্লাষ্টিকের স্যান্ডেল এবং পোড়া কাপড় চোপড় ও জুতার অংশ বিশেষ দেখে কঙ্কালটি সোহান (১৪) বলে শনাক্ত করা হয়। পরে সোহানের মা মোসাঃ নাজমা বাদীনি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের নামে শ্রীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি শ্রীপুর থানা পুলিশ প্রায় ২ মাস তদন্তকালে আসামী মোঃ আজিজুল, মোঃ সাগর, হৃদয় ও সবুজ নামে ৪ জনকে গ্রেফতার করে।
পরবর্তী সময়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার নিদের্শে মামলার তদন্তভার পিবিআই গাজীপুর জেলার উপর ন্যস্ত হয়। পিবিআই গাজীপুর জেলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ সুমন মিয়া মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্তকাজে পিবিআইয়েল ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার ও পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমানের নির্দেশনা ও সার্বিক সহযোগিতায় মামলার তদন্তকালে প্রাপ্ত কঙ্কালের ডিএনএ প্রোফাইলের সাথে বাদীনি ও তার স্বামী আব্বাছ আলীদ্বয়ের ফরেন্সিক ডিএনএ প্রতিবেদন প্রাপ্ত হলে পর্যালোচনায় দেখা যায় ডিএনএ পরীক্ষায় সুদৃঢ়ভাবে প্রমানিত হয় যে, অজ্ঞাত মৃত দেহটি, বাদীনি নাজমা ও তার স্বামী আব্বাছ আলী যুগলের জৈবিক সন্তান।
পরবর্তীতে শ্রীপুর থানা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ সাগর (২০) কে পুলিশ রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে মামলার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ হেফাজতে আসামী সাগর ভিকটিম সোহান হত্যাকান্ডের বিষয়ে স্বীকার করে। এছাড়াও আসামী সাগর জিজ্ঞাসাবাদে সোহান হত্যায় ব্যবহৃত চাকু (সুইচ গিয়ার) এর সন্ধান দেয়। তার দেয়া তথ্যমতে চলতি বছরের ২৩ মে উক্ত চাকু (সুইচ গিয়ার) উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে সে নিজেকে জড়িয়ে অপর আসামীদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করে। আসামী মোঃ সাগর তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করে, সোহান ও ঘটনায় জড়িত আসামীরা পরস্পর বন্ধু। তারা একসাথে চলাফেরা করত। ঘটনার কিছু দিন পূর্বে সে সোহানকে মারপিট করে। সোহান তার পিতাকে মারপিটের কথা বলে দেয়ায় তার পিতা আসামী সাগরকে ময়মনসিংহ মহাসড়কের আইল্যান্ডের গাছের সাথে বেধে জুতা ও লাঠি দিয়ে মারপিট করায় তার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও ঘটনায় জড়িত আসামী আজিজুলকে সোহানের বাবা ২০০পিচ ইয়াবা সহ পুলিশকে ধরিয়ে দেয়। আজিজুল ০৩ মাস জেল খাটে। এই জন্য তার মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আসামীরা ঘটনার আগে সোহানকে হত্যার পরিকল্পনা করে। উক্ত পরিকল্পনা মোতাবেক ভিকটিম সোহানকে ডেকে এনে ঘটনাস্থলের পাশের জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে প্রথমে আসামী সাগর ভিকটিমের মাথায় বাঁশ দিয়ে বারি মারে পরে আজিজুল চাকু দিয়ে বুকে আঘাত করে। পরবর্তীতে তারা ভিকটিমকে নিয়ে অত্র মামলার ঘটনাস্থল ময়লার স্তুপের মধ্যে চাপা দিয়ে চলে যায়।