গণবাণী ডট কম:
দেশে সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা চেরী টমোটের জন্য আর বিদেশ থেকে আমদানীর উপর নির্ভর করতে হবে না। দেশের মানুষ এখন থেকে দেশী জাতের চেরী টমোটোর স্বাদ নিতে পারবেন। দেশে উদ্ভাবিত নতুন চেরী টমোটো শীতকালে চাষযোগ্য, উচ্চফলনশীল, আকর্ষনীয় আকৃতি, বর্ণ, খেতে অত্যান্ত সুস্বাদু, মিষ্টি, কম বীজযুক্ত বা প্রায় বীজ বিহীন এবং পুষ্টিকর। এর উৎপাদন খরচ কম হবে, ফলে সস্তায় এটি অচিরেই দেশের বাজারে পাওয়া যাবে।
আর এটি বাস্তবে সম্ভব করে তুলেছেন গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ও পরিচালক (গবেষণা) প্রফেসর ড. এ. কে. এম আমিনুল ইসলাম। তিনি সম্প্রতি বিউ চেরি টমেটো ২, বিউ চেরি টমেটো ৩, বিউ চেরি টমেটো ৪ ও বিউ চেরি টমেটো ৫ নামে ৪টি চেরী টমোটোর নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন।
প্রফেসর ড. এ. কে. এম আমিনুল ইসলাম জানান, দেশের কৃষক এবং ভোক্তাদের চাহিদার প্রতি লক্ষ রেখে বড় সাইজের দেশীয় টমেটোর পরে নতুন করে জনপ্রিয় হচ্ছে চেরি টমেটো। একারণে দেশে চেরী টমোটের নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। উদ্ভাবিত চেরি টমেটোর জাত ৪টি এ মাসে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বাণিজ্যিকভাবে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন লাভ করেছে।
তিনি আরো জানান, আমাদের দেশে ভোক্তা ও চাষি পর্যায়ে চেরি টমেটোর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদের প্রায় বেশির ভাগই বিদেশী কোন জাতকে দেশী আবহাওয়ায় উপযোগী করে চাষ করা হচ্ছে। এই জাত গুলোই দেশে প্রথম বিদেশী জাতের চেরি টমেটোর সাথে দেশীয় টমেটোর সংকরায়ন এবং পরবর্তীতে পিউর লাইন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাপ্ত একেবারেই নতুন জাত হিসাবে উদ্ভাবন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশীয় স্বাদকে অক্ষুন্ন রেখে চেরি সাইজ আনতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭-৮ বছর। বিউ চেরি টমেটোর জাতগুলো দেশী আবহাওয়ায় কোন প্রকার অতিরিক্ত যত্নবিহীনভাবে দেশী টমেটোরমতই শীতকালে চাষযোগ্য, উচ্চফলনশীল, আকর্ষনীয় আকৃতি, বর্ণ, খেতে অত্যান্ত সুস্বাদু, মিষ্টি, কম বীজযুক্ত বা প্রায় বীজ বিহীন এবং পুষ্টিকর। গাছ প্রতি ফলন ২.৫-৩.৫ কেজি। এছাড়াও সুপার শপ গুলোতে যে বিদেশী বীজ বিহীন বা কম বীজযুক্ত চেরি টমেটো পাওয়া যায় তার বেশির ভাগই প্রায় ১০০০ থেকে ১৩০০ টাকা/কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়। সেক্ষেত্রে এই জাতগুলো আমাদের জন্য হতে পারে বিদেশী জাতগুলোর পরিপূরক। তাছাড়া যেকোন সবজির মধ্যে রান্নার পর টমেটোর এন্টিঅক্সিডেন্ট গুনাবলী সবচেয়ে বেশি অক্ষুন্ন থাকে। আর নতুন উদ্ভাবিত জাত গুলোর রান্না ছাড়াই পাকা অবস্থায় আঙ্গুরের মত খাওয়া যায়, বিধায় এবং এদের এন্টিঅক্সিডেন্ট গুনাবলী বেশী থাকায় মানবদেহে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করবে। তাছাড়া টমেটোতে বেশী পরিমানে লাইকোপিন থাকায় ত্বকের যত্নে চেরী টমেটো খুবই উপকারী। চেরি টমেটো গাছের ক্যানোপি কম হওয়ায় ছাদ বাগানেও এ জাতগুলো সহজেই উৎপাদন করা যাবে।
এই জাত গুলোর একজন সহযোগী ব্রিডার হিসেবে একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারজানা মোস্তফা ইরা বলেন, স্যারের গবেষনা বরাবরই ভিন্ন ধর্মী থাকায়, ছাত্র অবস্থায়ই এই চেরি টেমটো নিয়ে গবেষনায় আগ্রহী হই এবং পরবর্তীতে এর উদ্ভাবন প্রক্রিয়ায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকি। দেশের মানুষের উৎপাদন ও খাদ্য চাহিদায় এটি কৃষকের এবং ভোক্তার প্রথম পছন্দ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে বশেমুরকৃবি এর উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ গিয়াসউদ্দীন মিয়া বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক গুলো জাতই এসেছে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের এই অধ্যাপকের হাত ধরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিক জাত উদ্ভাবনে তিনি এবার উচ্চমূল্যের চেরি টমেটোর চারটি জাত যোগ করলেন। চেরী টমোটোর চাষ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে মানুষ উপকৃত হবে। জাতগুলোর আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য এরা বাণিজ্যিক উৎপাদন কিংবা ছাদ বাগান, উভয়ক্ষত্রেই সমান জনপ্রিয়তা পাবে। দেশী আবহাওয়া উপযোগী করে উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল এ জাতগুলো দেশের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকরা চেরি টমেটো চাষ করে বেশী লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করেন।