গণবাণী ডট কম:
দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের প্রবেশদ্বার ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা হতে রাজধানীর উত্তরা পর্যন্ত চলমান যানজটের কারণে যাত্রী দুর্ভোগ লাঘবের বিকল্প হিসেবে কমলাপুর থেকে জয়দেদবপুর পর্যন্ত বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের অনুরোধে এই ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়।
গত বুধবার (১৬ জুন) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ ঘোষণা দেয়ার পর যোগাযোগ করা হলে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এই ট্রেন সার্ভিস চালু হলে গাজীপুরবাসীর দীর্ঘদিনের যানজটের যে দুর্ভোগে, তা কিছুটা লাঘব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা হলো রাজধানীতে উত্তরাঞ্চলের মানুষের আসা-যাওয়ার প্রবেশদ্বার। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এই অংশে ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক এসে মিলিত হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক হিসেবে ঢাকা অভিমুখে দক্ষিণ দিকে প্রবেশ করেছে। এই মহাসড়কের জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে রাজধানীর উত্তরা (গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদ পর্যন্ত) এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিলোমিটার। গাজীপুর তথা উত্তরাঞ্চলের ৩৭টি জেলার মানুষের রাজধানীতে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্ব উপলব্ধি করে সরকার ২০১২ সালে হাতে নেই বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প। আশা করা হয়েছিল নির্ধারিত সময়ে বিআরটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ যানজটমুক্ত ভাবে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে রাজধানীতে আসা-যাওয়া করতে পারবে। কিন্তু বিআরটি প্রকল্পের ধীরগতি নানা কারণে কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি এসব কারনে এই প্রকল এখন এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে এ সড়কের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিআরটি প্রকল্প চালু হবার পর থেকে এ মহাসড়কে বছরের সব সময় যানজট লেগে থাকে। শুস্ক মৌসুমে ধুলাবালীর ও বড় বড় গর্তের কারণে, কোথায় নির্মাণ কাজের কারণে সড়কের জায়গা দখল হয়ে থাকার কারণে সড়ক সংকুচিত হয়ে যানজট সৃষ্টি হয়ে থাকে। আবার বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে, কাদা ময়লা ও খানাখন্দকের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়ে থাকে। এছাড়া সরকারি ছুটির দিনে ও বিভিন্ন উৎসবের আগে ও পরে যানজটের কারণে মানুষকে সীশাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এ বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে রাজধানী ঢাকার উত্তরা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার সড়কের অংশে অব্যাহত যানজটের কারণে মানুষের দূর্ভোগের বিষয়টি চিন্তা করে গাজীপুরের জয়দেবপুর রেল স্টেশন থেকে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামি রোববার থেকে এ বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। বুধবার (১৬ জুন) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনটাই ঘোষণা দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, এমপি।
এ বিষয়ে মন্ত্রী ফেসবুকে লিখেন, ‘এই দুর্ভোগের হাত থেকে মানুষদের কিছুটা হলেও রক্ষা করতে আজ (১৬ জুন) রাতে মাননীয় রেলমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে কথা বলে আগামী রবিবার থেকে গাজীপুর থেকে টঙ্গী হয়ে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে টঙ্গী হয়ে গাজীপুর পর্যন্ত বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। মাননীয় রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন মহোদয় এর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। জনগণের দুর্ভোগ লাগবে আমার পক্ষ থেকে ভবিষ্যতেও সকল ধরণের উন্নয়ন প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
তিনি আরও লিখেন, ‘গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত রাস্তাটিকে যানজট মুক্ত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিআরটি প্রজেক্ট আমাদেরকে উপহার হিসাবে দিয়েছেন। কিন্তু ঠিকাদারদের ক্রমাগত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে অনেক বছর ধরে ধীর গতিতে কাজ করায় মানুষের দুর্ভোগের কোনো সীমা নেই। আবার যখন বর্ষাকাল আসে এই দুর্ভোগ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়।’
তিনি বলেন, বিআরটি প্রজেক্টে দায়িত্ব পালনরত সচিব, পিডি সহ সকলকে প্রায় প্রতিদিনই কয়েকবার করে ফোন করছি যাতে টঙ্গী গাজীপুরবাসীসহ এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী প্রায় ৩৭টি জেলার মানুষদের এই দুর্ভোগের হাত থেকে দ্রুত রক্ষা করা যায়। সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা প্রশাসনসহ সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন। উপরন্তু গাজীপুর যাওয়ার সকল বিকল্প রাস্তাগুলোতে একসাথে কাজ চলমান থাকায়, সেই রাস্তাগুলো বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে না পারায় এই দুর্ভোগ যেন আরও বেড়ে গেছে।
তিনি রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, জনগণের দুর্ভোগ লাগবে আমার পক্ষ থেকে ভবিষ্যতেও সকল ধরণের উন্নয়ন প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
এ বিষয়ে গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শারফ উদ্দিন জানান, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজ এখন পুরোদমে চলছে। ২০২২ সালের জুনে গাজীপুর-বিমানবন্দর অংশটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে। এ রুটটি চালু হলে গণপরিবহন ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। সাড়ে ২০ কিলোমিটার পথ যেতে সর্বোচ্চ আধা-ঘণ্টা লাগবে। ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আসবে। যাত্রীরা দ্রুত কর্মস্থলে পৌঁছতে পারবেন।