গণবাণী ডট কম:
দেশে আবিস্কৃত মহামারি করোনা ভাইরাসের টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ এর গবেষণায় ব্যবহারের জন্য গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজার এলাকায় বানর ধরতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ। আজ রবিবার সকালে এ ঘটনার পর উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে অনুরোধ পেয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।
গবেষণায় ব্যবহারের জন্য সরকারি অনুমোদন নিয়ে গাজীপুরে বানর ধরতে গিয়ে যারা লাঞ্চিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের মিডিয়া কনসালটেন্ট ও গ্লোবাল টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর আনিসুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, ক্যামেরাপার্সন ফাহাদ আল কাদরিসহ তাদের দুই গাড়ি চালক।
উদ্ধার হওয়ার পর গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের মিডিয়া কনসালটেন্ট আনিসুর রহমান জানান, আপনারা সকলেই অবগত আছেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক বঙ্গভ্যাক্স নামে একটি করোনার টিকা আবিষ্কার করেছে। এটি মানবদেহে পরীক্ষার অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। সরকারের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী মানবদেহের আগে বানর অথবা শিম্পাঞ্জির দেহের পরীক্ষা করার নির্দেশনা এসেছে।
সারা পৃথিবীতে মানবদেহে পরীক্ষার আগে যেকোনো ভ্যাকসিন /ঔষধ পশুপাখির দেয় পরীক্ষা করা হয়। এটি বিজ্ঞানসম্মত বৈজ্ঞানিক রীতি। পরীক্ষাকালীন পরীক্ষা কাজে ব্যবহৃত সকল পশুর যথাযথ যত্ন ও চিকিৎসা এবং খাবার দাবারের ব্যাবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। তাদেরকে সুস্থ রেখেই গবেষণা করা হয়।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া আমরা সকলেই অবগত আছি বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি নাজুক অবস্থার দিকে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমাদের টিকা উদ্ভাবন অথবা আমদানি অপরিহার্য।
এমতাবস্থায় আমরা সরকারি অনুমতি নিয়ে বানর সংগ্রহ করার জন্য আসি। বরমী এলাকায় অনেক বানর এবং এগুলো স্থানীয় লোকজনকে অনেক বিরক্ত করে, তাই আমরা ভেবেছিলাম স্থানীয় লোকজন হয়ত আমাদের সহযোগিতা করবে। কিন্তু কতিপয় লোকের কারণে আমরা অন্যায় আচরণ ও লাঞ্চিত হয়েছি।
তিনি জানান, ১০টি বানর ধরার পর স্থানীয় কয়েকজন লোক প্রতি বানরের জন্য আমাদের কাছে টাকা দাবি করেন। আমরা টাকা তাদের বুঝানোর চেষ্টা করি, কিন্তু তারা টাকা না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে লোকজন জড়োকরে এবং আমাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। পরে তাদের কাছ থাকা টাকাপয়সা, সংগ্রহ করা কয়েকটি বানর, বানর ধরার ফাঁদ, খাঁচা এসব স্থানীয়রা ছিনিয়ে নেয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। এসময় তিনি আরও বলেন, এসব ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণে আছে। ঢাকায় ফিরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে আইনি ব্যবস্থা নেবেন তারা।
শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে আনার পর বানর সংগ্রহ করার জন্য মন্ত্রণালয় ও বনবিভাগের অনাপত্তিপত্রসহ কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের লোকজনকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান জানান, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ বঙ্গভ্যাক্স বানরের দেহে পরীক্ষার নির্দেশনা দেয়। এজন্য গত ২৬ জুন গ্লোব বায়েটেক লিমিটেড পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে ৫৬টি বানর ধরার আবেদন করার পর মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দীপক কুমার চক্রবর্তী প্রধান বন সংরক্ষককে ‘প্রয়োজনীয় সংখ্যক বানর ধরার এবং ব্যবহারের জন্য চিঠি পাঠান। এর অনুলিপি সংশ্লিষ্ট সকলকে দেয়া হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে বরমী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আবুল হাশেম জানান, রবিবার সকালে ১০টার দিকে বাজারের ব্যবসায়ীসহ বরমী এলাকার স্থানীয়রা বানর ধরার খবরটি তাকে জানায়। সেখানে গিয়ে খাঁচায় আটকানো কয়েকটি বানর দেখতে পেয়ে তিনি এই ওষুধ কম্পানির লোকজনের কাছে বানর ধরার কারণ জানতে চান। তখন তিনি জানতে পারেন, বঙ্গভ্যাক্স টিকার কার্যকারিতা যাচাইয়ে বানর ধরার জন্য বন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের অনুমতি রয়েছে।
টাকা চাওয়ার এবং লুটপাটের অভিযোগ কথা অস্বীকার করে ব্যবসায়ী নেতা আবুল হাশেম বলেন, স্থানীয়দের আপত্তি উপেক্ষা করে বানর ধরায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে উত্তেজিত এলাকাবাসীকে শান্ত করে গ্লোব বায়োটেকের লোকদের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখান থেকে শ্রীপুর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
মহামারী করোনা বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশের একমাত্র ওষুধ কম্পানি গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড টিকা আবিষ্কার করে। ইতিমধ্যে টিকাটি ইদুরের দেহে সফল বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটি। এরপরে মানবদেহে পরীক্ষার অনুমতি চাইলে সরকার বানর অথবা শিম্পাঞ্জির দেহে পরীক্ষার জন্য শর্ত দেয়। তারপর প্রতিস্ঠানটি সরকারের অনুমতি নিয়ে বানর সংগ্রহ করা চেষ্টা করছে।