গণবাণী ডট কম:
সংক্রমণ রোধ করার জন্য ঘোষিত লকডাউনের মধ্যেও গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতালটিতে করোনা ইউনিটে ধারণক্ষমতার দেড়গুন রোগী ভর্তি করা হয়েছে। ইউনিটের ভিতরে জায়গা না হওয়ায় অনেক রোগীকে ফেরত না পাঠিয়ে জীবন বাঁচানোর জন্য ভর্তি করে বারান্দায় রাখা হয়েছে।
গাজীপুর শহীদ তাজ্উদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিসক ডা: রফিকুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে করোনা রোগীর বিছানা আছে ১০০ জনের। আইসিইউ আছে ৮টি। গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতালে করোনা পজিটিভ ৫৬ জন এবং উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে ভর্তি আছেন ১০৩ জন রোগী। অর্থাৎ একশ জনের জায়গায় ভর্তি আছেন ১৫৯ জন রোগী।
জানা যায়, মহামারী করোনা সংক্রমণ রোধ কল্পে জেলায় গত ২১ জুন থেকে সরকারের কঠোর বিধি নিষেধ বা লকডাউন চলমান রয়েছে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে জেলায় করোনার সংক্রমণের লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। প্রশাসনের কঠোর নজরদারী, সেনা, বিজিবি, র্যা ব, জেলা ও মহানগর পুলিশের টহল ও চেকপোস্ট, ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা, কোন কিছুই তোয়াক্কা করছে না মানুষ। নানা অজুহাতে জেলাবাসী ঘরের বাইরে আসছে। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। ফলে জেলায় করোনার সংক্রমণ আশংকাজনকভাবে বাড়ছে। নগর থেকে প্রত্যন্ত পল্লী গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা।
গাজীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘন্টায় জেলা নতুন করে আরও ২৬৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের জন্য মোট ৬৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হা্র ৪২ দশমিক ২৭ শতাংশ। তার আগের গত ২৪ ঘন্টায় অর্থাৎ গত বুধবারে সংক্রমণের হার ছিল ৬২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ঐদিন করোনা শনাক্তের জন্য ৪৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩০৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
ডা: রফিকুল ইসলাম আরো জানান, গত বুধবার হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট ১৪৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে 44 জন করোনা আক্রান্ত রোগী হিসেবে ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে আটজন ছিলেন আইসিইউতে। এছাড়াও করোনার উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে ছিলেন 103 জন রোগী। তাদের মধ্যে গতকাল মারাগেছেন ৮ জন। মারা যাওয়াদের মধ্যে ১ জন করোনা পজিটিভ ও ৭ জন আইনোলেশনে ছিলেন।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: হাফিজ উদ্দিন জানান, হাসপাতালে ১০০ করোনা রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করার মতো সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। সেখানে আমাদের দেড়গুনের বেশী রোগী ভর্তি করা হয়েছে। অনেক রোগীকে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থার মাধ্যমে অক্সিজেন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাদের আমরা অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে চিকিসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। সক্ষমতার বেশী রোগী নিয়ে আমরা তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
এসময় তিনি আরো বলেন, আমাদের সকলের স্বাস্থ্য বিধি মানা উচিত। করোনার উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
করোনা আক্রান্তের চেয়ে উপসর্গ নিয়ে বেশী রোগী কেন মারা যাচ্চে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপসর্গ নিয়ে রোগীরা বাড়ীতে বসে থাকে। যখন স্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, অবস্থা বেশী খারাপ হয়, তখন তারা হাসপাতোলে আসে। হাসপাতালে আসার পর কারণ নির্ণয় করে চিকিসা শুরুর জন্য আমরা বেশী সময় পাইনা। এ জন্য তিনি উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়ার এবং প্রাথমিক অবস্থায় প্রয়োজন হলে হাসপাতালে আসার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন, এ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য 6 হাজার লিটারের একটি কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা রয়েছে, যা দিয়ে একশ জন করোনা রোগীর অক্সিজেন চাহিদা মেটানো সম্ভব। তাছাড়া ৪৫৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। যার তিনভাগের একভাগ রোগীদের সেবায় ব্যবহার করা যায়। বাকী দুইভাগের একভাগ রিফিল করতে ও আনা-নেওয়ার জন্য হাসপাতালের বাইরে থাকে। প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। রোগীর চাপ আরো বাড়লে পরিস্থিতি কি হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়।