গণবাণী ডট কম:
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (সুরক্ষা) মো. মোকাব্বির হোসেন বলেছেন, কারা অভ্যন্তর হতে জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা যেন কোনরূপ সমাজ ও রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতা চালাতে না পারে সেলক্ষ্যে কারাগারের সক্ষমতা বাড়াতে কারা নিরাপত্তা আধুনিকায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। কারা ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করতে ’বাংলাদেশ প্রিজন্স এন্ড কারেকশনাল এ্যাক্ট’প্রনয়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তরিত করতে শুধু বন্দিদের উন্নয়নই নয়, পাশাপাশি কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ জন্য রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার গাজীপুরের কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে নবীন রিক্রুট ৫৮তম ব্যাচের কারারক্ষীদের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম, গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান, ময়মনসিংহ বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মোঃ জাহাঙ্গীর কবীর, ঢাকা বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মোঃ তৌহিদুল ইসলাম, রাজশাহী বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক অসীম কান্ত পাল, প্রশিক্ষণ একাডেমির ভারপ্রাপ্ত কমান্ড্যান্ট সুরাইয়া আক্তার, এ বুনিয়াদী প্রশিক্ষণের প্রধান প্রশিক্ষক ও কাশিপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. আব্দুল জলিল, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর সুপার (চলতি দয়িত্ব) ও কাশিপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মোঃ গিয়াস উদ্দিন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের সুপার হালিমা খাতুন প্রমুখ।
এসময় প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে কারাগারের বন্দি ও কারারক্ষীদের উন্নয়নে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, বন্দি পূনর্বাসনের জন্য ৩৯টি ট্রেডে ৫০ হাজার বন্দিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছ। তাদের খাবারের মান বাড়ানো হয়েছে, সন্তানদের বঙ্গবন্ধু বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। বন্দিদের স্বাচ্ছন্দের জন্য বালিশ ও মায়ের সঙ্গে আটক সন্তানের জন্য ডে কেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কারা বন্দিদের খাবারের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি, খোরাকী ভাতা বৃদ্ধিসহ যুগান্তকারী নানা সুযোগ-সুবিধা যৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে বন্দিরা পরিবারের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে ১০মিনিট করে টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়া কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর জন্য রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কেরানীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কারা প্রশিক্ষণ একাডেমী নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারাবন্দিদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সংশোধন ও পূনর্বাসনের পথ উন্মোচিত হচ্ছে। ২০১৪ সালের জুলাই হতে ২০২১সালের জুন পর্যন্ত ৩৯টি ট্রেডে মোট ৫০হাজার ৭১জন বন্দিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আর কারাগারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব কারান্দিদের দ্বারা উৎপাদিত পণ্যের লভাংশের ৫০শতাংশ বন্দিদের দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ বছরের জুন পর্যন্ত ৩৩হাজার ৭২৭ জন বন্দিকে ৯১ লাখ ৯০হাজার ৯৩৪টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের পূনর্বাসনের জন্য সরকার জীবিকায়ন সামগ্রী প্রদানের ব্যবস্থাসহ কারাবন্দি সন্তানদের বঙ্গবন্ধু বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
৫৮তম কারারক্ষী ব্যাচে ৬ মাস মেয়াদের বুনিায়াদী প্রশিক্ষণে ৩১৮ জন কারারক্ষী অংশ গ্রহন করেন। তাদের মধ্যে ৩১৪ জন পুরুষ এবং ৪ জন মহিলা কারারক্ষী রয়েছেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা পারফরমেন্সের জন্য কারারক্ষী মেহেদী হাসান, রফিকুল ইসলাম, নাজমুল হোসেন ও মো. সাইদ হাসানকে ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।