গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় অপরিকল্পিত খাল খননের কারণে চলতি বর্ষায় অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি, পাকা রাস্তা ও কবরস্থান হুমকির মুখে পড়েছে। যে কোন সময় খালের পার ভেঙ্গে বড় রকমের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসি। এতে গৃহহারা হওয়ার ভয়ে রয়েছেন খাল পাড়ের মানুষ। আতঙ্কে দিন কাটছে অনেক পরিবারের।
কাপাসিয়া উপজেলা স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া হতে তরগাাঁও ইউনিয়নের ধলাগড় খাল এবং কড়িহাতা ইউনিয়নের ইকুরিয়া হতে কাটাখালী-ধলাগড় পর্যন্ত প্রবাহিত খাল সম্প্রতি পুন:খননের কাজ শুরু হয়। জাপানী দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্বাবধানে বাস্তবায়িথ এ প্রকল্পের অধীনে খাল পুন:খনন করা হয়। এ জন্য প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় ৩ কোটি ৮২ লাখ ৮৬ হাজার ৫৮৯ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয় উপজেলা স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত একটি স্থানীয় সমিতিকে।
কিন্তু খাল খনন করার সময় যথাযথ ঢাল সংরক্ষণ না করা এবং খাল খননের মাটি দিয়ে খালের পাড় না বেধে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কারণে বা অন্যত্র বিক্রি করে কারণে চলতি বর্ষায় খাল দুটির বিভিন্ন অংশে খালের পাড় ভেঙ্গে পড়েছে। একারণে অনেক স্থানে খালের পাশের এলজিইডি নির্মিত পাকা রাস্তা, অসংখ্য গাছ, কৃষি জমি ইতিমধ্যেই ভেঙ্গে খালের পেটে চলে গেছে। তরগাঁও ধলাগড় ব্রীজের কাছে খালের পাশের পাকা রাস্তাটি. ইকুরিয়া এলাকায় অনেক জায়গায় ব্রিকসলিং ও এলজিডি পাকা রাস্তার পাড় ভেঙ্গে খালের তলায় নেমে গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ ও যানবাহন চলাচলে ব্যহত হচ্ছে। বাড়ি-ঘর ও কবরস্থান রক্ষায় এবং রাস্তা সংস্কারে সংশ্লিষ্টরা তেমন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। ফলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কড়িহাতা ইউনিয়নের ইকুরিয়া এলাকায় খালের পাড় ভেঙ্গে আতিকুল ভূইয়ার বাড়ি হতে কড়িহাতা খালপাড় ঈদগা মাঠ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার পাকা সড়কটি বিভিন্ন জায়গায় ৭-৮ ফুট দেবে গেছে। খালের পূর্বপাড়ে সামাদ মাস্টারের বাড়ির পাশে কবরস্থান ভেঙ্গে খালের তলায় বসে গেছে। এ ছাড়া পূর্ব পাশে সাইফুল মোল্লার বাড়ি হতে সুলতানের বাড়ি পর্যন্ত আধাপাকা রাস্তা ও বিদ্যুৎ লাইনের খুটি ভেঙ্গে খালের পেটে চলে গেছে। কাটাখালী দরগারটেক এলাকায় খালের ভাঙ্গন লেগে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিয়ত ছোট-বড় ভাঙ্গন হচ্ছে। এজন্য এলাকার ভূক্তভোগীরা অপরিকল্পিত খাল খননকে বলে দায়ি মনে করছেন। তাদের অভিযোগ এক্সকাভেটর (ভেকু) দিয়ে খাল খনন কাজ করা হয়েছে। ফলে খালের ঢাল সংরক্ষণ করা হয়নি। খালের পার বাধাঁ হয়নি। খাল খননের পর ড্রেসিং করে সেখানে গাছ লাগানোর কথা থাকলেও কোথায় তা করা হয়নি। তাদের দাবী যদি সব জায়গায় শ্রমিকের মাধ্যমে খাল খনন কাজটি করা হতো, তবে সড়কের ও খাল পাড়ে বসতি বাড়ি- ঘরের কোনো ক্ষতিই হতো না। তাছাড়া বেশী ঝুকিপূর্ণ জায়গায় আগে প্যালাসাইটিং বা ব্রিক ওয়াল বা বিকল্পপ ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরে খনন কাজ পরিচালনা করলে এ ধস ও ভাঙ্গণ এড়ানো যেত।
স্থানীয় মুসলে উদ্দিন, রহিম উদ্দিন, আফাজ উদ্দিন, বাদল মিয়াসহ শতাধিক লোক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমন খাল খননের চেয়ে খাল খনন না করাই ভাল ছিল। মুসলে উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, আমার বসতভিটি ছাড়া আর কোনো জমি নেই। খালের ভাঙ্গনে মুখে পড়ে যদি বাড়ি- ঘর হারাই তবে ছেলে-মেয়ে নিয়ে পথে থাকতে হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো: আব্দুর রহমান মুহিম জানান, তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানানোর পাশাপাশি খাল খননকারী সমিতির লোকজনকে ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা সংস্কার এবং যেসব জায়গায় ভাঙ্গন হয়েছে তা মেরামতের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। তাদের এখনো সম্পূর্ণ বিল প্রদান তরা হয়নি। ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা ও অন্যান্য অংশ মেরামত করা না হলে বিল দেয়া হবে না।