গণবাণী ডট কম :
আসামীদের ফেলে যাওয়া পায়ের সেন্ডেল ও ছাতার সূত্র ধরে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার বেড়াইদেরচালা এলাকার বহুল আলোচিত ছাত্রনেতা সৈয়দ মাছুম আহাম্মেদ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতার করল গাজীপুর জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই।
গ্রেফতার আসামীরা হলো গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার বেরাইদের চালা এলাকার মৃত হাবিবুল্লাহ ক্বারীর ছেলে মোঃ আবুল কালাম (৪১), একই এলাকার পিতা-মোঃ শামসুদ্দিনের ছেলে আসামী মোঃ শফিকুল ইসলাম (৩২) ও মোঃ আব্দুল জলিলের ছেলে মোঃ নাজির হোসেন জয় (২৯)। তাদের গত ২৮ জুলাই বিকালে নিজ নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গত ৩০ জুলাই একই এলাকার আব্দুর রশিদের ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম (৪০) গ্রেফতার করে পিবিআই। এছাড়া ঘটনায় জড়িত অপর আসামী একই এলাকার মো: আজাহারুলের ছেলে মোঃ হারুন অর রশিদ (৩৮) কে ৩০ জুলাই সকালে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন ফুলবাড়ীয়া এলাকা হতে গ্রেফতার করে গাজীপুরের র্যা ব-১, স্পেশালাইজড কোম্পানী পোড়াবাড়ী ক্যাম্প এর একটি অভিযানিক দল।
গাজীপুর জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান।
তিনি আরো জানান, পূর্ব শত্রুতার কারণে জমির মূল কাগজপত্র চুরি করার উদ্দেশ্যে মাছুমের ঘরে প্রবেশ করলে মাছুম আসামীদেরকে চিনে ফেলায় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে। মাছুমকে আঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যাবার সময় আসামীরা ঘটনাস্থলে নিজেদের ব্যবহৃত ৩ জোড়া সেন্ডেল ও ২ টি ছাতা ফেলে রেখে যায়। আর এসবের সূত্র ধরেই মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আবুল কালাম, শফিকুল ইসলাম ও হারুন অর রশিদ গতকাল রোববার আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। এতে তারা ঘটনার সাথে নিজেদের জড়িত করে গ্রেফতার অপর আসামীদের নাম প্রকাশ করেছে। তবে, অপর দুই আসামী আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে রাজী হওয়ায় রোববার শুনানী শেষে সকলকে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
তিনি আরো জানান, নিহত সৈয়দ মাছুম আহাম্মেদ (২৭) ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় সদস্য ছিল এবং শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিল। গত ঈদের দিন রাতে (২১ জুলাই দিবাগত রাত অনুমান ৩টা) অজ্ঞাতনামা কিছু দুষ্কৃতিকারী সৈয়দ মাছুম আহাম্মেদ (২৭) এর বসত বাড়ীতে ঢুকে প্রত্যেকটি ঘরে বাহির দিয়ে সিটকারী আটকিয়ে ভিকটিমের কক্ষের তালা ভেঙ্গে তার ঘরে প্রবেশ করে। দুষ্কৃতিকারীগণ ভিকটিম মাসুমকে হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে নীলাফুলা মারাত্মক জখম করে এবং ভোঁতা যে কোন অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে। এসময় তার ডাক চিৎকারে আশপাশ হতে লোকজন এগিয়ে আসলে দুষ্কৃতিকারীগণ দৌঁড়ে পার্লিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার ভিকটিমের অবস্থা আশংকাজনক দেখিয়া ঢাকায় রেফার্ড করলে ভিকটিমকে আগারগাঁও ন্যাশনাল নিউরো সাইন্স অব ইন্সটিটিউটে ভর্তি করে।
এ সংক্রান্তে মাছুমের চাচা মোঃ মোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে বিবিধ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৩ জুলাই সকালে মাছুম মৃত্যূবরণ করলে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। পরে শ্রীপুর থানা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং শ্রীপুর থানায় তদন্তাধীন থাকাকালে পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার নির্দেশে মামলাটি অধিগ্রহন করে।
গ্রেফতারের পর আসামীরা জানায়, ঈদুল আযহার দিন ২১ জুলাই রাত দেড়টার দিকে (২২ জুলাই) আসামী কালাম তার সহযোগী আসামীদের সাথে স্থানীয় একটি ফ্যাক্টরীতে ইলেকট্রিক তার চুরি করতে গিয়ে ব্যার্থ হয়। পরে স্থানীয় মারুফ ও জহিরদের সাথে জমিজমা সংক্রান্তে বিরোধের কারনে মারুফ ও জহিরদের নির্দেশে আসামী কালাম এবং তার সহযোগীরা মাছুমের বাসায় জমির কাগজপত্র চুরি করতে যায়। ঈদের দিন থাকায় মাছুম বাসায় না থাকার সুযোগে আসামীরা মাছুমের বাড়ীতে প্রবেশ করে। কিন্তু পরে চুরি করাকালীন রাত ৩টার দিকে মাছুম তার বাসায় এসে তার কক্ষের সামনে গেলে ভিতর থেকে একজন আসামী দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে মাছুম তাকে ধরে ফেলে। তখন অন্যান্য আসামীরা ইট দিয়ে ভিকটিমের মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে থাকে। তখন মাছুম চোর চোর বলে চিৎকার দিলে আসামীরা ভয়ে সবাই দৌড়ে চলে যায়। এসময় ঘটনাস্থলে আসামীরা তাদের ব্যবহৃত ৩ জোড়া সেন্ডেল ও ২ টি ছাতা ফেলে রেখে যায়। পরে গ্রেফতারকৃত আসামী কালাম ও তার সহযোগী পুলিশ হেফাজতে থাকা অন্যান্য আসামীগণ প্রত্যেকেই ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত এবং জব্দকৃত সেন্ডেল ও ছাতা সনাক্ত করে। এছাড়াও পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদকালে অন্যান্য আসামীরা ও ঘটনার সাথে জড়িত আছে মর্মে স্বীকার করে।