গাজীপুর ও কাপাসিয়া প্রতিনিধি:
বহুল প্রচলিত প্রবাদ আছে, মামা ভাগিনা যেখানে-আপদ নাই সেখানে। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও স্বার্থের দ্বন্ধে অনেক প্রবাদ বদলে যাচ্ছে। গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বোনের ওয়ারিশের জমি আত্মসাত করতে ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুন করে ভাগিনাকে খুনের মামলায় ফাঁসাতে গিয়ে মামা নিজেই ফেঁসে গেছেন। ভাড়াটে খুনি গ্রেফতার হওয়ার পর আদালতে স্বেচ্চায় প্রদত্ত জবানবন্ধিতে খুনের চাঞ্চল্যকর এমন ঘটনা প্রকাশ করেছে।
গাজীপুর জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বৃহস্পতিবার বিকালে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার সালুয়াটেকি এলাকার বহুল আলোচিত ইদ্রিস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই গাজীপুর। এ ঘটনায় জড়িত ভাড়াটে খুনিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী মোঃ দুখু মিয়া @ সুমন (২২)। সে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার টোক ইউনিয়নের শহরটোক গ্রামের মোঃ লিটন মিয়ার ছেলে।
নিহতের নাম ইদ্রিস (৩০)। তিনি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার টোক ইউনিয়নের সালয়াটেকি গ্রামের পিতা-মফিজ উদ্দিনের ছেলে।
তিনি আরো জানান, এক বছর আগে ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট সকালে ইদ্রিসের মৃতদেহ সালুয়াটেকি সাকিনস্থ সৈয়দ জহির আহসান জাহিদের নানার বাড়ীর দক্ষিণ পাশে পুকুর পাড়ে গলায় ধারালো অস্ত্র দ্বারা গুরুতর জখম অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে এ ঘটনায় ইদ্রিসের মা মোর্শেদা বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় এজাহারনামীয় ১০ জন ও অজ্ঞাতনামা ০৩/০৪ জন আসামীর বিরুদ্ধে কাপাসিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি কাপাসিয়া থানা পুলিশ প্রায় ৪ মাস তদন্ত করে এবং তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকার মাধ্যমে পিবিআই গাজীপুর জেলায় পরবর্তী তদন্তের জন্য প্রেরণ করে।
পিবিআই এর ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের তত্ত্বাবধন ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমানের সহযোগীতায় মামলাটির তদন্ত করেন পুলিশ পরিদর্শক মোঃ হাফিজুর রহমান।
তদন্তকালে মোঃ দুখু মিয়া @ সুমন (২২) গত ২৫ আগষ্ট ভোরে কাপাসিয়ার টোক বাইপাস এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এ বিষয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান আরো বলেন, এজাহারনামীয় ১নং আসামী সৈয়দ জহির আহসান জাহিদের সাথে তার নানার বাড়ীর সম্পত্তির ওয়ারিশ নিয়ে তার মামা রবিন ভূইয়ার সাথে বিরোধ দেখা দেয়। জাহিদ তার মামা রবিন ভূইয়ার কাছে মায়ের ওয়ারিশের সম্পত্তি চাইলে তার মামা রাজি না হওয়ায় জাহিদ স্থানীয় রফিক এবং রফিকের ভাগিনা নিহত ইদ্রিসের সহযোগীতায় জমি দখল নেয়। এই সুযোগে ভিকটিম ইদ্রিস জাহিদের দখলকৃত সম্পত্তি বিক্রয়ের কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে জাহিদের কথা বলে তার অগোচরে টাকা নেয়। এই বিষয়টি জাহিদ বুঝতে পারায় ইদ্রিস ও তার মামা রফিকের সাথে তার বিরোধ হয়। একারণে ইদ্রিস পরে জাহিদের মামা রবিন ভূঁইয়ার পক্ষ নেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যাকান্ডের ৩ দিন আগে ঘটনাস্থলের পাশে জাহিদ তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে টোক বাইপাসে ইদ্রিসকে ভয় দেখায়। এই সুযোগে রবিন ভূইয়া তার পৈত্রিক সম্পত্তি তার ভাগ্নে জাহিদকে না দেওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ দুখু মিয়া @ সুমন সহ তার সহযোগী আসামীদের দিয়ে ভিকটিম ইদ্রিসকে হত্যার পরিকল্পনা করে। জাহিদের মামা রবিন ভূইয়া ভাগিনা জাহিদকে ফাঁসানোর জন্য গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ দুখু মিয়া @ সুমন ও তার সহযোগী আসামীদের সাথে ইদ্রিসকে হত্যার জন্য ১২ লক্ষ টাকার চুক্তি করে। ঘটনার দিন গত ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট দিবাগত রাত ২টার সময় আসামীরা ইদ্রিসকে ইয়াবা ট্যাবলেট আনার জন্য মোবাইল ফোনে ঘটনাস্থলে ডেকে আনে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইদ্রিসের গলা চেপে ধরে ছুরি দিয়ে গলায় আঘাত করে ও এলোপাথারীভাবে মারপিট করে ইদ্রিসকে হত্যা করে। পরে জাহিদের নানা বাড়ীর যে ঘরে মাঝে মধ্যে জাহিদ ঘুমাতো ঐ ঘরের পিছনে পুকুরপাড়ে ঘটনাস্থলে ইদ্রিসের মৃতদেহ ফেলে রেখে চলে যায়।
তিনি জাজান, আসামী মোঃ দুখু মিয়া @ সুমন (২২) কে ২৫ আগস্ট বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে উক্ত আসামী নিজেকে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামীদের নাম উল্লেখ করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। পরে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।