গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে পুকুরে মশা উৎপন্ন হচ্ছে, এমন তুচ্ছ অজুহাতে প্রচলিত আইন ভেঙ্গে একটি বহু পুরনো পুকুর ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে কয়েকদিন রাতের আধারে পরে শুক্রবার থেকে প্রকাশ্যে দিনের বেলায় টঙ্গীর সাতাইশ দাড়াইল মধ্যপাড়া এলাকায় একটি বহু পুরনো পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মহানগরীর দাড়ালের ১ একর ৩ শতাংশ জমিতে একটি পুকুর রয়েছে। এটি তৎকালীন টঙ্গী পৌরসভার নিজস্ব সম্পত্তি থাকাকালে পুকুরটি লিজে নেন স্থানীয় বাসীন্দা হোসেন আলী। সেখানে মাছ চাষ করতেন তিনি। বর্তমান সিটি কর্পোরেশন গঠনের পর এটি সিটি কর্পোশেনর মালিকানায় চলে যায়। সর্বশেষ লিজের মেয়াদ দুই বছর শেষ না হতেই স্থানীয় প্রভাবশালীরা তাকে উঠিয়ে দেন। এর পর থেকেই জলাশয়ের একাংশ মাটি দিয়ে ভরাট করে কবরস্থান তৈরী করা হয়েছে। বাঁকি অংশে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। প্রভাবশালী মহলের দাবী, এটি স্থানীয়দের ঈদগাহ মাঠ হিসেবে তৈরী করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিন আগে গাজীপুর সিটি কপোরেশনের মেয়র এলাকার রাস্তার উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করতে এলে স্থানীয় কয়েকজন জলাশয়টি ভরাটের অনুমোতি চায়। এরপরই দুইদিন রাতের বেলায় এবং গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই মাটি দিয়ে জলাশয়টি ভরাটের কাজ চলছে।
গাসিক ৫২নং ওয়ার্ড কাউন্সিল আব্দুল আলীম মোল্লা বলেন, এটি সিটি কপোরেশনের সম্পত্তি। সিটি কপোরেশন তার প্রয়োজনে ভরাট করা হচ্ছে।
দাড়াইল কেন্দ্রীয় কবরস্থান ও ঈদগাহ কমিটির সভাপতি আকবর আলী বলেন, এলাকাবাসীর জন্য একটি কবরস্থান ও একটি ঈদগাহ মাঠ প্রয়োজন। পৌরসভা থাকাকালিন সময় থেকে এ জলায়শটি ভরাট করে কবরস্থান ও ঈদগাহ মাঠ তৈরীর জন্য পৌর মেয়র আমাদের মৌখিক অনুমোদন দিয়েছিলো। বর্তমানে আমরা স্থানীয় কাউন্সিল ও ভূমি মন্ত্রনালয়ের লিখিত আবেদন জানিয়েছি। তিনি আরো জানান, জলাশয়টির অধিকাংশ ভরাট কাজ শেষ হয়েছে।
টঙ্গী ভূমি কর্মকর্তা রোমান বলেন, জলাশয়ের ১ একর ৩শতাংশ জমিতে বহু পুরেনো পুকুরটি আগে ইউনিয়ন পরিষদের ছিলো। যা পরে পৌরসভার ছিল ও বর্তমানে গাজীপুর সিটি কপোরেশনের। তবে জলাশয় ভরাট প্রচলিত আইনে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
পরিবেশবিদ ও বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো: মনির হোসেন বলেন, জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ অনুয়ায়ী কোন ধরণের জলাধার পুকুর, খাল বিল এসববের শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। এটি শিাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাছাড়া এমনিতেই আমাদের জলাধার কমে যাচ্ছে। পরিবেশের প্রয়োজনে আমাদের জলাধার রক্সা করা প্রয়োজন। তা না হলে জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে। আমাদের স্বার্থে, নগরবাসীর স্বার্থে, জীব বৈচিত্র রক্ষার স্বার্খে জলাধার বা পুকুর রক্ষা করা প্রয়োজন। তাছাড়া জলাধার বা পুকুর খাল বিল এসব না ভরাট করতে উচ্চ আদালত এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। তাই আমরা টঙ্গীল আলোচিত পুকুরটি না ভরাটের জন্য দাবী জানাচ্ছি।
গাজীপুর জজ কোটের আইনজীবী রিপন শাহ বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৬ (ঙ) অনুযায়ী, জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরণের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতি ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে।
টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার ইকবাল হাসান বলেন, টঙ্গী একটি শিল্প নগরী।এ এলাকায় প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নগরীর ভেতরে বাইরে পানি সংরক্ষণের জায়গা গুলো ভরাট না করাই উত্তম। নগরীর বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে এসব জলাশয় থেকে পানি নিয়েই অাগুন নেভাতে হয়।
গাজীপুর সিটি কপোরেশন নির্বাহী কর্মকর্তা (টঙ্গী অঞ্চল-১) এস এম সোহবার হোসেন বলেন, জলাশয়টি সিটি কপোরেশনের নিজস্ব সম্পত্তি। জলাশয়ে পানিতে মশামাছির জন্ম হচ্ছে, তাই সিটি কপোরেশন মাটি ভরাট করছে। তাছাড়া টঙ্গীর মরকুন এলাকায় সিটি কপোরেশনের পক্ষ থেকে কবরস্থান রয়েছে। সিটি কপোরেশনের অনুমোতি ছাড়া কবরস্থান তৈরীর সুযোগ নেই।