গাজীপুর প্রতিনিধি:
দুই সন্তানের জননী ফেরদৌসি। সন্তানের সুখের জন্য প্রথম স্বামীকে ছেড়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সংসারের স্বচ্ছলতার জন্য চাকরী করেন একটি বীমা কোম্পানীতে। নিজের ভাস্তীর সংসারের সুখের কথা চিন্তা করে অনেক দেন দরবার করে একই প্রতিষ্ঠানে ভাস্তী লিমাকে চাকরীর ব্যবস্থা করে দেন। তার এ চাকরী পাইয়ে দেয়াটাই কাল হলো। চাকরীর পাওয়ার পর লিমা তার স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায়। আর স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদের এ ঘটনায় ইন্দন দিয়েছেন ফেরদৌসি এমন সন্দেহে গাজীপুরের ঋষি পাড়ায় মা ফেরদৌসি ও তার নিস্পাপ মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। নিমর্ম মা ও মেয়েকে হত্যাকান্ডের মোটিভ (উদ্দশ্য) সম্পর্কে বলতে গিয়ে এমন তথ্য জানালেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) র উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) মো: জাকির হাসান।
শনিবার সকালে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি আরো জানান, হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজীপুর মহানগর পুলিশ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার ও মা ও মেয়েকে গলাকেটে হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে।
নিহতের নাম ফেরদৌসি (৩০)। তিনি তিনি গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার নরুন বাজার এলাকার বাসির উদ্দিন বেপারীর মেয়ে ও তার শিশু কন্যা তাসমিয়া (৫)।
গ্রেফতার আসামিরা হলো, গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার সালদিয়া গ্রামের ছাত্তার খানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম খান (২১) এবং একই এলাকার মনির হোসেনের ছেলে মোঃ মহিউদ্দিন ওরফে বাবু।
তিনি আরো জানান, নিহত ফেরদৌসী গার্ডিয়ান ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন। প্রতিষ্ঠানে তার সুনাম থাকায় সে গ্রেফতার আসামি বাবুর স্ত্রী লিমাকে একই কোম্পানিতে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। চাকরি পাওয়ার পর বাবুর সাথে লিমার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এ ঘটনায় বাবু ফেরদৌসীকে দায়ী মনে করেন। এ কারণে প্রতিশোধ নিতে সে ফেরদৌসীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। আর এ কাজে তার সহযোগী হিসেবে ফেরদৌসির পুর্ব পরিচিত ও বীমা গ্রহীতা জাহিদুল ইসলাম খানকে বেছে নেয়। ঘটনার দিন গত ২৪ নভেম্বর বিকেলে জাহিদুল ইসলাম ফেরদৌসীকে ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে নতুন একজনকে দিয়ে আরো একটি বীমা করিয়ে দিবে এই কথা বলে গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন দেশী পাড়া এলাকায় আসতে বলে। পরে ফেরদৌসী দিন সন্ধ্যার পরে নির্দিষ্ট জায়গায় জাহিদুলের সাথে দেখা করতে যায়। এসময় তার সাথে পাঁচ বছর বয়সী শিশু তাসিমিয়া ছিল। ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর ফেরদৌসী কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই জাহিদুল ও বাবু উভয়ে ফেরদৌসীর গলায় ছুরি দিয়ে পৃথকভাবে দুটি আঘাত করে। এতে ফেরদৌসী মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এসময় সাথে থাকা মেয়ে তাসমিয়া ঘটনা দেখে ফেলায় এবং কান্নাকাটি শুরু করলে জাহিদুল শিশু তাসমিয়ার গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে এবং একটি মোটর সাইকেল যোগে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
তিনি আরো জানান, স্থানীয়দের মারফত পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ব্যাপারে নিহতের ভাই ইজ্জত আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা ব্যক্তিদের আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করে।
তিনি আরো জানান, এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ আসামি গ্রেফতারের তৎপরতা শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ কালীগঞ্জ উপজেলার সালদিয়া নিজ বাড়ী থেকে প্রথমে জাহিদুল জাহিদুলকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় জাহিদুলের হাতে কাটা দাগ দেখতে পাওয়া যায়। পরে জাহিদুল ঘটনা স্বীকার করে এবং তার সহযোগী বাবুর নাম প্রকাশ করে। বাবুকে কেউ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জাঙ্গালিয়া এলাকায় একটি পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি ছুড়া এবং পালিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরো জানান, আজ শনিবার আসামিদের গাজীপুর আদালতে তোলা হবে।