গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর কুনিয়া বড়বাড়ি এলাকায় বন্ধ ঘোষণা করা একটি তৈরী পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শনিবার সকালে বিক্ষোভ করেছে কারখানার শ্রমিকরা। পরে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেঢ ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
বিক্ষোভকারী শ্রমিকরা জানায়, গাজীপুর মহানগরীর কুনিয়া বড়বাড়ি এলাকায় অবস্থিত নাসা গ্রুপের লিজ এপারেলস লি: নামের তৈরী পোশাক কারখানাটিতে ৩ হাজার ৮শত শ্রমিক কাজ করে। নতুন বছরের বেতন ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে পুরো মাস জুড়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে শ্রমিকরা বার বার কথা বলে আসছিল। এ মধ্যেই হঠাৎ গত ২৬ জানুয়ারি কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে কর্মস্থল থেকে কারখানার কম্পাউন্ডে অবস্থান নেয়। এসময় কারখানার কর্মকর্তারা শ্রমিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে পুনরায় কারখানায় কাজে যোগ দিতে বলেন। কর্মকর্তারা বেশ কিছু শ্রমিককে গালাগালি ও মারধর করেন। একপর্যায়ে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে ফ্যাক্টরি থেকে বের হয়ে যায়। পরদিন শ্রমিকরা কাজে যোগদিতে কারখানায় এসে কোনরকম দিক নির্দেশনা না পেয়ে অলস সময় কাটিয়ে বিকেল ৫টার দিকে ফিরে যায়। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি শেষে গতকাল শনিবার কাজে যোগদিতে এসে কারখানার প্রধান ফটকে বন্ধের (লে অফ) নোটিশ দেখতে পায়। এসময় কারখানার বাইরে শিল্প পুলিশ মোতায়েন দেখতে পায়। পরে কারখানা খুলে দেওয়ার ও বার্ষিক বর্ধিত বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ শর্টগান ফায়ার, টিয়ার শেল ও রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ও লাঠিপেটা করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এঘটনায় প্রায় ২০ জন শ্রমিক আহত হয়েছে।
অপরদিকে ওই কারখানা পরিচালক গাজী মোহাম্মদ জাবের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কারখানার শ্রমিকেরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে কাজ বন্ধ রেখেছে এবং আশরাফ নামের এক কর্মকর্তাকে বেধড়ক মারধর ও কারখানার ফ্লোরে ঢুকে আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে। কম্পিউটার, সিসি টিভি, ল্যাপটপ ও সার্ভারসহ কর্মকর্তাদের ১২টি মোবাইল এবং অফিস থেকে ১৫ লাখ টাকা চুরি করেছে। এসব কারণে ২০০৬ সালের শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরী জানান, গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন কুনিয়া বড়বাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত লিজ এপারেলস লি: নামের একটি কারখানায় গত বুধবার ব্যাপক ভাংচুর হওয়ায় মালিকপক্ষ ১৩(১) ধারা মোতাবেক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। একারণে শ্রমিক অসন্তোষ হতে পারে এমন ধারণা থেকে গতকাল শনিবার সকাল থেকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও শিল্প পুলিশ-২, গাজীপুরের সম্মিলিত ২শ জন ফোর্স নিয়ে কারখানার গেটে অবস্থান নেওয়া হয়। সকালে শ্রমিকরা সকালে কারখানার গেটের সামনে মহাসড়কে অবস্থান নেবার চেষ্টা করলে কয়েক দফা তাদের বিরত রাখা হয়। পরে শ্রমিকরা ২ভাগে ভাগ হয়ে কারখানার গেট থেকে কয়েকশ গজ দূরে উত্তর ও দক্ষিণ উভয় পাশে মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে এবং আশেপাশের বেশ কয়েকটি কারখানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। তাদের উত্তর ও দক্ষিণ উভয় পাশে বাধা দেওয়া হলে তারা সরকারি অথরিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর ও মহাসড়কে আটকে থাকা ৮-১০ টি গাড়ীর উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
তিনি আরো জানান, এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্তণের প্রয়োজনে ৪২ রাউন্ড শর্টগান ফায়ার, ৫ রাউন্ড টিয়ার শেল ও ৩ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে মহাসড়ক অবরোধ চেষ্টা নিরসন করা হয়। এসময় শ্রমিকদের ছোড়া ইটের আঘাতে ৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।
তিনি আরো জানান, কারখানার মালিকপক্ষকে চাপ দিয়ে দ্রুত সমস্যার কার্যত সমাধান নিশ্চিতকরণের জন্য গাজীপুর জেলা প্রশাসন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, শিল্প পুলিশ এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সম্মিলিতভাবে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।