গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় জুয়া খেলার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যুবককে নদীর পানিতে ফেলে হত্যা করার প্রায় দুই বছর পর হত্যার রহস্য উদঘাটন ও এক আসামীকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে গ্রেফতার আসামী আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধি দিয়েছে।
নিহত যুবকের নাম রুবেল মিয়া (৩২)। তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার টোক নয়ন বাজার এলাকার মোঃ মফিজ উদ্দিনের ছেলে।
গ্রেফতার আসামী মোঃ কামরুল ইসলাম (৩১)। তিনি ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বারইহাটি এলাকার মৃত আব্দুস সাহিদের ছেলে।
গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, রুবেল মিয়া (৩২) কাপাসিয়ার টোক নয়ন বাজারে পেঁয়াজু, নিমকি, মুড়ালী ইত্যাদি তৈরি ও বিক্রির ব্যবসা করতো। গত ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল দুপুরে রুবেল মিয়া এবং মোঃ রিপন, বিমল বর্মন, নাছির উদ্দিন, মোঃ আরিফ, আরিফ মিয়া, দিলিপ ঘোষ টোক নয়ন বাজারস্থিত শীতলক্ষ্যা নদীর ঘাট হতে একটি ইঞ্জিন চালিত যাত্রীবাহী নৌকা যোগে শ্রীপুর থানাধীন বরমী যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পরে বিকেল কাপাসিয়া থানাধীন টোক নগর সাকিনস্থ মৃত আব্দুল হাই মুন্সির চর জমি সংলগ্ন নদীর কিনারে পৌঁছলে গ্রেফতার আসামীসহ তার অপর সহযোগীরা অপর একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা যোগে গফরগাঁও থানা এলাকা হতে এসে রুবেল মিয়া ও তার সঙ্গীয় যাত্রীদেরকে গালিগালাজ করে এবং লাঠি দিয়ে এলোপাথারীভাবে মারপিট করে নৌকা হতে পানিতে ফেলে দেয়। রুবেলের সহযাত্রীরা সাঁতরিয়ে নদীর তীরে উঠতে পারলেও বাদীর ছেলেকে পাওয়া যায়নি। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে গত ৯ এপ্রিল সকালে কাপাসিয়া থানাধীন টোক নগর সাকিনস্থ মৃত আব্দুল হাই মুন্সির চর জমি সংলগ্ন নদীর কিনারে ভিকটিম রুবেল মিয়ার অর্ধ গলিত লাশ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে নিহতের পিতা বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় এজাহার দায়ের করেন। মামলাটি থানা পুলিশ প্রায় ০৬ মাস তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পিবিআই গাজীপুর জেলার উপর ন্যাস্ত হয়।
তিনি আরো জানান, পিবিআই তদন্তকালে গত ৫ ফেব্রুয়ারি কামরুল ইসলামকে তার নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, কামরুলের সহযোগী আসামীরা তাকে বারইহাটি বাজার সংলগ্ন নদীর ঘাটে নিয়ে গিয়ে বলে শীতলক্ষ্যা নদীতে বোটে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা চলে। চল গিয়ে ওদের দাবড়ানি দেই এবং জুয়ার বোর্ডের টাকা ছিনিয়ে নিয়ে আসি। পরে সে ও তার সহযোগীরা একটি নৌকা নিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে রুবেলের নৌকার নিকট যায়। পরে গ্রেফতারকৃত আসামীসহ ও অন্যান্য আসামীরা রুবেলের নিকট থেকে টাকা ছিনিয়ে নিতে চাইলে সে বাধা দিলে আসামীরা তাদের হাতে থাকা লাঠি সোটা দিয়ে ভিকটিম রুবেল মিয়ার মাথায় এবং শরীরের এলোপাথারীভাবে মারধর করে ভিকটিম এর নিকট থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে নেয়। ভিকটিম রুবেল মিয়া অচেতন হয়ে পড়লে আসামীরা ভিকটিমকে মৃত ভেবে নৌকা থেকে শীতলক্ষ্যা নদীর পানিতে ফেলে দেয়। আসামীরা তাদের নৌকা নিয়ে বারইহাটি বাজারে ফিরে যায় এবং আসামীদের প্রত্যেকে ছিনতাইকৃত টাকা ভাগাভাগি করে নেয়।
এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, মামলার গ্রেফতারকৃত আসামী তার সহযোগীদের নিয়ে জুয়ার বোর্ডের টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ভিকটিম রুবেল মিয়াকে তাদের হাতে থাকা লাঠি সোটা দিয়ে এলোপাথারীভাবে মারপিট করে হত্যা করতঃ লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ কামরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে উক্ত আসামী নিজেকে জড়িয়ে মামলার ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামীদের নাম উল্লেখ করে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।