গণবাণী ডট কম:
অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে দেশজুড়ে বায়ুদূষণ বাড়ছে এমন অভিযোগের পরে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দিনব্যাপী পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এসময় সরকারের মেগা উন্নয়ন প্রকল্প বাস র্যা পিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং একটি শিল্প কারখানাকে বায়ু দূষণের দায়ে অর্থদন্ড করা হয়েছে।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক নয়ন মিয়া জানান, বায়ু দূষণ বিরোধী এ অভিযান পরিবেশ অধিদপ্তরের সদর দপ্তরের মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট উইং এর পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারী ও বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী তামজীদ আহমেদের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন গাজীপুর ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে পরিচালনা করে। অভিযানে গাজীপুর মহানগরীর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নির্মিত বাস র্যা পিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে নিয়োজিত দুইটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্মাণ সামগ্রী দ্বারা বায়ু দূষণের দায়ে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ এর ১৫(২) ধারা ও বিধিমালা ৪(১) ক ও ৪(১) খ মোতাবেক অর্থদন্ড প্রদান করা হয়। তাদের মধ্যে China Gezhoula Group Companing Limited (সিজিজিসি) প্যাকেজ-১ কে ৭০ হাজার টাকা এবং Jiavgsu Provincial Transportation Enginineering Group Limited (জেপিইজি) কে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা সাথে সাথে নগদ আদায় করে সরকারী কোষাগারে জমা প্রদান করা হয়।
তিনি আরো জানান, গাজীপুর মহানগরীল টঙ্গী স্টেশন রোড, কলেজ গেট ও সাইনবোর্ড এলাকায় বায়ু দূষণ বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এসময় ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে উন্মুক্ত স্থানে যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী রেখে বায়ু দূষণ করায় ও পানি না ছিটানোর কারণে বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জরিমানা করা হয়।
তিনি আরো জানান, এছাড়াও মহানগরীর সাইনবোর্ড এলাকায় অতিরিক্ত দূষক নির্গত করে বায়ু দূষণের দায়ে এলিট আয়রন অ্যান্ড স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কারখানাকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটিকে মহাসড়কে নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখাসহ নিয়মিত পানি ছিটানোর এবং স্টিল কারখানাকে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অভিযানের আরো উপস্থিত ছিলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (মনিটরিং) মো. আব্দুস সালাম সরকার, উপ-পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) আহমেদ কবীর, পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নয়ন মিয়াসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
উল্লেখ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে দেশজুড়ে বায়ুদূষণ বেড়েই চলছে। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে বায়ুদূষণের শীর্ষে রয়েছে গাজীপুর। গত ৩ ফেব্রুয়ারি বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এর প্রকাশিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গাজীপুরে বাস র্যাশপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পসহ অনেকগুলো বড় বড় উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। এসব কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে রোদ ওঠলেই প্রচুর ধোলা বালি ও ইটের কণা মানুষের চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়ে। অনেক সময় সড়ক-মহাসড়কে দৃষ্টি সীমা সীমিত হয়ে পড়ে। এসব উন্নয়ণ কাজ বাস্তবায়নের সময় নির্মাণ সামগ্রী উম্মুক্তভাবে সড়কে ফেলে রাখা হয়। সড়কের ওপর বিছানো উন্নয়ণ সামগ্রী বালি বা ইটের খোয়ায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ পাণি ছিটানো হয় না। ফলে যানবাহন চলাচল কার সময় প্রচুর ধুলা-বালি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা বাতাসে ওড়ে বেড়ায়। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ক্যাপসের দেশব্যাপী ৬৪ জেলার বায়ুদূষণ সমীক্ষা বিষয়ক প্রকাশিত একটি জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ৬৪ জেলার বায়ুমান বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করে। গবেষণা থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সর্বমোট ৩ হাজার ১৬৩টি স্থানের গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১০২.৪১ মাইক্রোগ্রাম। এটি দৈনিক আদর্শ মানের (৬৫ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে প্রায় ১.৫৭ গুণ বেশি। পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ৬৪ জেলার মধ্যে গাজীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি দূষণ পরিলক্ষিত হয়, যার মান ছিল প্রতি ঘনমিটারে ২৬৩,৫১ মাইক্রোগ্রাম।