গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরে ১৬ মাস পর পোশাক কর্মী শফিকুল ইসলাম হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জড়িত ৩ আসামীকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর পুলিশ ব্যারো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।গ্রেফতারকৃত আসামীগণ নিজেদেরকে জড়িয়ে ঘটনার সাথে জড়িত অপর সহযোগী আসামীদের নাম উল্লেখ করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলো, শেরপুর জেলার সদর থানার তেতুলতলা গ্রামের মৃত আজগর আলীর ছেলে মোঃ শাজাহান আলী (২৪), জামাল পুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ থানার মিয়াপাড়ার মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে মোঃ রাজিব হোসেন (২১) এবং গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন পশ্চিম দিঘিীরচালা এলাকার মোঃ সাইফুল ইসলামের ছেলে মোঃ আলামিন (২৭)।
পিবিআই গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বুধবার দুপুরে এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, গত ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর শরিফুল ইসলাম একদিনের জন্য গাজীপুর হতে তার শশুড় বাড়ি বগুড়া জেলাধীন শেরপুর থানার দুবলাগাড়ি এলাকায় বেড়াতে যায়। সেখান থেকে শশুড় বাড়ি হতে পরদিন ২০ নভেম্বর গাজীপুর আসার জন্য রওনা হয়ে ভোরে গাজীপুরে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু তিনি বাড়ী ফিরেননি। পরে সকালে দিঘিরচালা সাকিনস্থ সেবা হাসপাতালের পিছন থেকে বাসন থানা পুলিশ মোঃ শরিফুল ইসলামের মৃতদেহ উদ্ধার করে। ধারণা করা হয় ২০ নভেম্বর ভোর ৫টা হতে হতে ৬টার মধ্যে কোন সময় অজ্ঞাতনামা খুনিরা পায়ে এবং পিঠে ছুরিকাঘাত করে তাকে হত্যা করে মরদেহ সেখানে ফেলে রেখে গেছে। পরে পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে স্বজনরা তার লাশ শনাক্ত করে। এঘটনায় মোঃ শরিফুল ইসলামের বড় ভাই মোঃ সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে বাসন থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি ৪ মাস ১৩ দিন গাজীপুর মহানগরের বাসন থানা পুলিশ তদন্ত করে কোনো রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকা পিবিআই গাজীপুর জেলাকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন।
তিনি আরো জানান, পিবিআই তদন্তকালে ২২ মার্চ বিকালে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহানগরীর বাসন থানাধীন দিঘীরচালা এলাকা থেকে মোঃ শাজাহান আলীকে গ্রেফতার করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তার স্বীকারোক্তি মতে একদিন একই এলাকা থেকে ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামী মোঃ রাজিব হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামী মোঃ আলামিনকে গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন শিমুলতলী এলাকা একই দিনে সন্ধ্যার সময় গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীগণ আদালতে স্বীকারোক্তিতে জানায়, ঘটনায় জড়িত মোঃ শাজাহান আলী, রাজিব হোসেন ও মোঃ আলামিন ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর রাতে মহানগরীর ভাওয়াল কলেজের উত্তরে দিঘীর পাড়ে অন্যান্য সহযোগিদের নিয়ে বসে আড্ডা দেয় এবং গাঁজা সেবন করে। তখন তাদের এক সহযোগী বলে তার হাতে টাকা পয়সা নেই চলো সবাই মিলে ছিনতাই করি। পরে তারা সবাই ভাওয়াল কলেজের সামনের রাস্তায় আসে এবং সবাই মিলে ঐ রাতে ২/৩ টা ছিনতাই সংঘটিত করে পথচারীদের টাকা এবং মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। পরে একই রাতে ভোর ৪-৫টার মধ্যে একটি অটোযোগে ভিকটিম মোঃ শরিফুল ইসলাম গাজীপুর চৌরাস্তার দিকে যাইতেছিল। তখন গ্রেফতারকৃত আসামী এবং তাদের সহযোগীগণ ভিকটিম শরিফুল ইসলামকে বহনকারী অটোটি থামায় এবং ভিকটিমকে বলে তোর নিকট যা আছে, সব দিয়ে দে। তখন ভিকটিম ছিনতাইকারীদের মধ্যে একজনকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার অপর দিক দিয়ে দৌড়ে সেবা হাসপাতালের দিকে চলে যায়। তখন গ্রেফতারকৃত আসামীগণ এবং তাদের সহযোগীগণ ভিকটিমের পিছন পিছন দৌঁড়ে সেবা হাসপাতালের সামনে গিয়ে ভিকটিমকে ধরে ফেলে। ছিনতাইকারীগণের কাছে থাকা গামছা দিয়ে ভিকটিম মোঃ শরিফুল ইসলামের মুখ চেপে ধরে টানতে টানতে সেবা হাসপাতালের পিছনে নিয়া যায়। এরপর ছিনতাইকারীগণ ভিকটিমের কাছে ১টি মোবাইল ফোন ও কিছু টাকা পায়। তখন এসব দিতে না চাইলে ছিনতাইকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। পরবর্তীতে ছিনতাইকারীদের হাতে থাকা চাকু (সুইচ গিয়ার) দিয়ে ভিকটিমের পিঠে ও পায়ে আঘাত করলে ভিকটিম মাটিতে লুঠিয়ে পড়ে। এরপর ছিনতাইকারীগণ লুন্ঠিত মালামাল নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে । পরবর্তীতে ছিনতাইকারীগণ মোবাইল বিক্রি করে বিক্রিত টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়।