গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরবাসীর দু:খ জয়দেপুর বেল ক্রসিং। মহানগরীর প্রাণ কেন্দ্র জয়দেবপুর রেল ক্রসিংয়ে একটি ফ্লাইওভারের অভাবে জেলাবাসীকে যানজটে আটকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। রেল ক্রসিং এ একটি ফ্রাইওভার নির্মাণে দাবী ছিল জেলাবাসীর। দীর্ঘদিনের দাবী ও স্বপ্ন অবশেষে পুরণ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় গাজীপুরের জয়দেপুর রেল ক্রসিং এ ফ্লাইওভার নির্মাণসহ মোট ১২ হাজার ১৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেষ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৭ হাজার ৯৯০ কোটি ১৪ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ৩ হাজার কোটি ৩৯ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৫৯৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান এসব তথ্য জানান।
জানা যায়, গাজীপুর জেলার সকল কার্যক্রম রাজবাড়ী কেন্দ্রিক। জেলা সদর বলতে এ রাজবাড়ীকেই বুঝায়। এখানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা পর্যায়ের অধিকাংশ সরকারী অফিস, সকল বিচার-আদালত, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয় (নগর ভবন) রয়েছে। এসবের আশে পাশেই রয়েছে জেলা পরিষদ কার্যালয়, শহীদ তাজউদ্দিন আহমদে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়, জেলার একমাত্র স্টেডিয়াম, নামি দামি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জেলার সবচেয়ে অভিজাত আবাসিক এলাকা প্রভৃতি। ফলে জেলার ও মহানগরীর বিভিন্ন অঞ্চলের জনগোষ্ঠিকে নানা প্রয়োজনে এখানে আসতে হয়। এ জেলার বিভিন্ন এলাকায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিল্পনগরী গাজীপুরে রয়েছে হাজার হাজার শিল্প-কল-কারখানা, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি। দিন দিন গাজীপুরের গুরুত্ব ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। ঢাকাসহ জেলার ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গাজীপুর শহরে প্রবেশের প্রধান এবং একমাত্র সড়ক হচ্ছে শিববাড়ী-জয়দেবপুর-রাজবাড়ী সড়ক। সড়কটির প্রবেশ পথেই মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে জয়দেবপুর রেল ক্রসিং। এ রেল ক্রসিংয়ের দক্ষিণ পাশেই রয়েছে জয়দেবপুর রেল জংশন। প্রতিবার যদি গড়ে ৬ মিনিট সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে তাহলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৯ ঘন্টা নিয়মিত যানজটের কবলে পড়তে হয়। সড়কটি দিনের শুরু থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত যানবাহনে ঠাসা থাকে। তবে অফিস সময়ের শুরুতে ও বিকালে ছুটির পর বিভিন্ন যানবাহন ও রিক্সায় যানজট প্রকট আকার ধারণ করে। এসময় পায়ে হেটে চলাও দুস্কর হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বিদ্যালয়গামী ছোট ছোট ছেলে মেয়ে, মহিলাদের অবনর্ণীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়।
জয়দেবপুর রেল জংশন দিয়ে প্রতিদিন ৭০টি শিডিউল ট্রেন ৮৬ বার আপ-ডাউন পথে যাতায়াত করে। এছাড়া ময়মনসিংহ ডেমু ট্রেন ও তুরাগ ট্রেন এখান থেকে ২ বার করে ৪ বার যাতায়াত করে। এছাড়া রয়েছে আর্মি স্পেশাল ট্রেন, মালবাহী ট্রেন, কলকাতাগামী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন এ জংশন হয়ে যাতায়াত করে। ফলে প্রতিবার ট্রেন যাতায়াত করার জন্য দৈনিক প্রায় ১০০ বার জয়দেবপুর রেল ক্রসিংয়ে সিগন্যাল বার নামিয়ে সর্বনিম্ন ৫ মিনিট থেকে কখনো ১৫ মিনিট পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। ফলে এ সময় রেল লাইনের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও এ সময়টা গাজীপুরবাসীর সময় থেকে অনেকটা জোর করে অপচয় হয়ে যায়। এজন্য এখানে একটি ফ্লাই ওভার ব্রীজ খুবই দরকার ছিল।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকীতে জয়দেবপুর রেল জংশনে ফ্লাইওভার ব্রীজ নির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্ধ দিয়েছেন। এজন্য আমি ও আমাদের সিটি কর্পোরেশনের সকল নাগরিক অত্যন্ত খুশি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। গাজীপুরবাসী প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করি মহান আল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে দীর্ঘ নেক হায়াত দান করুন। তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রী নিজে এ প্রকল্পের কাজের ভিত্তি স্থাপন করতে সদয় সম্মতি প্রদান করবেন।
একনেক সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্প:
আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সিটি গভর্নেন্স (ইউডিসিজি) প্রকল্প। এ প্রকল্পের মধ্যে রয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুর রেল ক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ ও গাজীপুর মহানগরীর নাওজোড় কামিশপুর-নবিনগর সংযোগ সড়কে তুরাগ নদী ওপর সেতু নির্মাণ। এছাড়াও সভায় ঝিনাইদহ জেলা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং বৃহত্তর পাবনা ও বগুড়া জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্প।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শিল্পকলা একাডেমি ও আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মিঠামইন, কিশোরগঞ্জ প্রকল্প, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (২য় পর্যায়), সরকারি শিশু পরিবার এবং ছোটমনি নিবাস হোস্টেল নির্মাণ/পুনঃনির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এগুলো হলো ইরিগেশন ম্যানেজমেন্ট, তজুমদ্দিন ও লালমোহন উপজেলায় উপকূলীয় বাঁধ পুনর্বাসন, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সংরক্ষণ, নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার সেচ প্রকল্প এবং কিশোরগঞ্জ জেলার ১০ উপজেলায় নদীতীর প্রতিরক্ষা কাজ, ওয়েভ প্রটেকশন এবং খাল পুনঃখনন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
ঢাকায় ডেসকো এলাকায় বৈদ্যুতিক অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প এবং এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের, মানিকগঞ্জ প্ল্যান্ট স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
জানা গেছে, জয়দেবপুর রেল ক্রসিংয়ে একটি ফ্লাইওভার না থাকায় দৈনিক প্রায় ৯ ঘন্টা সময় চলে যায় নগরবাসীর। এখাণে সিগন্যাল দেয়ার কারণে সৃষ্ট যানজটে অতিষ্ঠ গাজীপুর মহানগর তথা জেলাবাসী। জেলা শহরে আগত সকলকেই অলিখিত ও অলংঘনীয় এ দুর্ভোগ প্রতিদিন মোকাবিলা করতে হয়। তাই দ্রুত রেল ওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবী ছিল নগরবাসীর।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসেও এখানে নির্মিত হয়নি এক ফ্লাইওভার ব্রীজ।