গণবাণী ডট কম:
বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শুক্রবার গভীর রাতে ঢাকায় ইউনাইটেড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে — রাজেউন)।
দীর্ঘদিন তিনি নানা ধরনের জটিল রোগে ভুগছিলেন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮।
২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়লাভের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মুহিতকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর তিনি টানা ১০ বছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় যাবত অর্থমন্ত্রী ছিলেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত ১২টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন।
সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আবুল মাল আবদুল মুহিতের দুটি জানাজা হবে ঢাকায়। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশান আজাদ মসজিদে তাঁর প্রথম জানাজা, সকাল সাড়ে ১১টায় সংসদ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
দুপুর ১২টায় তাঁর মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহিদ মিনারে নেয়া হবে এবং এরপর দাফনের জন্য মরদেহ সিলেটে নেয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ও সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরীর ১২ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তার ছোট ভাই। স্ত্রী সৈয়দা সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তিন সন্তানের মধ্যে কন্যা সামিনা মুহিত ব্যাংকার ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ। বড় ছেলে সাহেদ মুহিত বাস্তুকলাবিদ এবং ছোট ছেলে সামির মুহিত একজন শিক্ষক।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া আবদুল মুহিত বরাবরই একজন মেধাবী ছিলেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। পরের বছর একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫২ সালে অংশ নেন ভাষা আন্দোলনে। ছাত্রজীবনে তিনি সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৫৬ সালে আবদুল মুহিত যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। সিএসপিতে যোগ দিয়ে তিনি ওয়াশিংটন দূতাবাসে পাকিস্তানের কূটনীতিকের দায়িত্ব নেন এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের জুনে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করেন। ওই সময় তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আবুল মাল আব্দুল মুহিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, কেন্দ্রীয় পাকিস্তান ও পরে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে তিনি পরিকল্পনা সচিব হন। এর আগে পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনের উপসচিব থাকাকালে তিনি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের ওপর ১৯৬৬ সালে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে এটিই ছিল এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন।
১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সদস্য হলে সেপ্টেম্বরে মুহিত হন বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের পক্ষে ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা গ্রুপের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক।
১৯৭৭-৮১ পর্যন্ত তিনি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ছিলেন এবং ১৯৮১ সালে স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন। তিনি বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন।
তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। স্বাধীনতাযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে সরকার তাকে ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে। মুক্তিযুদ্ধ, জনপ্রশাসন, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক বিষয়ে তিনি ৪০টি বই লিখেছেন।