গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় জমিজমার বিরোধের জের ধরে আপন ভাগনেকে ফাঁসাতে ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে ইদ্রিসকে হত্যার দায় স্বীকার করলো মামা রবিন ভূইয়া। গত ১০ মে গাজীপুরের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি নিজেকে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামীদের নাম উল্লেখ করে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
নিহত ইদ্রিস গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সালুয়াটেকি গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে।
গ্রেফতার আসামী আব্দুর রব ভূইয়া @ রবিন ভূইয়া একই এলাকার মৃত হাজী আব্দুল মোতালিব ভূইয়ার ছেলে।
গাজীপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর ইউনিট ইনচার্জ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বুধবার বিকালে এসব তথ্য জানান।
তিনি আরো জানান, ২১ মাসের মাথায় গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার সালুয়াটেকি এলাকার বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ইদ্রিস হত্যা মামলার মূল রহস্য উদ্ধার ও মূল পরিকল্পনাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, গত ২০২০ সালেল ২৫ আগষ্ট সকালে কাপাসিয়া থানাধীন সালুয়াটেকি সাকিনস্থ পুকুর পাড়ে ইদ্রিসের ইদ্রিস (৩০) মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাকে গলায় ধারালো অস্ত্র দ্বারা গুরুতর জখম অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে এ সংক্রান্তে নিহতের মাতা মোর্শেদা বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় এজাহারনামীয় ১০ জন ও অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন আসামীর বিরুদ্ধে কাপাসিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি কাপাসিয়া থানা পুলিশ প্রায় ৪ মাস তদন্ত করে। পরে তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে পিবিআই তদন্তভার গ্রহণ করে।
তিনি আরো জানান, পিবিআই এর অতিরিক্ত আইজিপি প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় এবং পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমানের সার্বিক সহযোগীতায় মামলাটির তদন্ত করেন পুলিশ পরিদর্শক মোঃ হাফিজুর রহমান।
তিনি আরো জানান, এজাহারনামীয় ১নং আসামী সৈয়দ জহির আহসান জাহিদের সাথে তার নানার বাড়ীর সম্পত্তির ওয়ারিশ নিয়ে তার সাথে বিরোধ দেখা দেয়। ভিকটিম ইদ্রিস ও তার মামা রফিক তার বড় বোনের ছেলে মামলার এজাহারে উল্লেখিত ১নং আসামী জাহিদের পক্ষ নিয়ে তাকে তার মায়ের প্রাপ্য সম্পত্তি দখলে সহযোগীতা করে। পরবর্তীতে আসামী সৈয়দ জহির আহসান জাহিদের সাথে ইদ্রিসের মনোমালিন্য হলে ইদ্রিস আলী আসামী সৈয়দ জহির আহসান জাহিদের মামা রবিন ভূঁইয়ার সাথে যোগ দেয়। পরবর্তীতে ঘটনার ৩ দিন আগে টোক বাইপাস মোড়ে এজাহারে উল্লেখিত আসামী সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে টোক বাইপাসে ভিকটিম ইদ্রিসকে ভয় দেখায়। এই সুযোগে এজাহারে উল্লেখিত আসামী সৈয়দ জহির আহসান জাহিদের মামা রবিন ভূইয়া তার সহযোগী আসামীদের নিয়ে নিজের কাঠের মিলে বসে ইদ্রিসকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ভিকটিম ইদ্রিসের বন্ধু আসামী মেজবাহ উদ্দিনকে দিয়ে টাকার বিনিময়ে ঘটনার দিন রাত ২টায় ঘটনাস্থলে ডেকে আনার জন্য পরিকল্পনা করে। উক্ত পরিকল্পনা মোতাবেক পূর্বে গ্রেফতারকৃত এজাহার বর্হিভূত আসামী মেজবাহ উদ্দিন ঘটনার দিন রাতে সু-কৌশলে ভিকটিম ইদ্রিস আলীকে অত্র মামলার ঘটনাস্থল রবিন ভূইয়ার বাড়ীতে নিয়ে আসে। পূর্ব থেকে উক্ত স্থানে অবস্থানরত ঘটনায় জড়িত আসামীরা রবিন ভূইয়ার নিকট থেকে ১২ লক্ষ টাকা চুক্তির বিনিময়ে গলা চেপে ধরে ছুরি দিয়ে গলায় আঘাত করে ও এলোপাথারীভাবে মারপিট করে ইদ্রিসকে হত্যা করে। এজাহারে উল্লেখিত আসামী সৈয়দ জহির আহসান জাহিদের নানা বাড়ীর যে ঘরে মাঝে মধ্যে সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ ঘুমাতো ঐ ঘরের পিছনে পুকুরপাড়ে ঘটনাস্থলে ইদ্রিস এর মৃতদেহ ফেলে রেখে চলে যায়।
পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান আরো বলেন, এজাহারে উল্লেখিত জহির আহসান জাহিদ তার মায়ের ওয়ারিশ প্রাপ্ত সম্পত্তি নেওয়া জন্য তার মামা রবিন ভূইয়াকে বললে তার মামা রাজি না হওয়ায় সে স্থানীয় রফিক এবং রফিকের ভাগিনা ভিকটিম ইদ্রিস আলীর সহযোগীতা নেয়। এই সুযোগে ভিকটিম ইদ্রিস আলী জাহিদের দখলকৃত সম্পত্তি বিক্রয়ের কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে এজাহারনামীয় আসামী জাহিদের কথা বলে তার অগোচরে টাকা নেয়। এই বিষয়টি জাহিদ বুঝতে পারায় ভিকটিম ইদ্রিস ও তার মামা রফিকের সাথে তার বিরোধ হয়। ভিকটিম ইদ্রিস ও তার মামা রফিক পুনরায় এজাহার নামীয় আসামী জাহিদের মামা রবিন ভূইয়ার পক্ষ অবলম্বন করে। পরবর্তীতে রবিন ভূইয়া তার পৈত্রিক সম্পত্তি তার ভাগ্নে এজাহারনামীয় আসামী সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ কে না দেওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মেজবাহ উদ্দিনের সহযোগীতায় ভিকটিম ইদ্রিস আলীকে ডেকে এনে তার সহযোগী আসামীদের দিয়ে ভিকটিম ইদ্রিসকে হত্যা করে মৃত দেহ রবিন ভূঁইয়ার নিজের বাড়ীর যে ঘরে মাঝে মধ্যে সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ ঘুমাতো ঐ ঘরের পিছনে পুকুরপাড়ে ঘটনাস্থলে ইদ্রিস এর মৃতদেহ ফেলে রেখে চলে যায়।
তিনি আরো জানান, তদন্তকালে মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী আব্দুর রব ভূইয়া @ রবিন ভূইয়া গাজীপুর বিজ্ঞ আদালতে আত্মসমর্পন করলে বিজ্ঞ আদালত উক্ত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১ (এক) দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে গত ১০ মে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে উক্ত আসামী নিজেকে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামীদের নাম উল্লেখ করে এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে পরিকল্পনা এবং অন্যান্য আসামীদের কার কি ভূমিকা ছিল বিস্তারিত বর্ণনা করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।