গণবাণী ডট কম:
শিল্প নগরী গাজীপুর থেকে বিদেশে রফতানির জন্য পণ্য বন্দরে প্রেরণের পথে একটি সংঘবদ্ধ চক্র মালামাল চুরি করে বিদেশ দেশের ভাবমূর্তী নষ্টের চেষ্টা করছে বলে মনে করছে গাজীপুর পুলিশ। গাজীপুরের একটি রফতানি মুখী তৈরী পোশাক কারখানার তৈরী প্যান্ট রফতানির উদ্দেশ্যে চট্রগ্রাম বন্দরে নেয়ার পথে প্রায় এক তৃতীয়াংশ পণ্য চুরির ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও চুরি হওয়া পণ্য উদ্ধারের পর আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এমন আশংকার কথা জানিয়েছেন গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানজিদা আফরিন।
আজ বুধবার দুপুরে গাজীপুর সদর উপজেলার জয়দেবপুর থানায় আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জয়দেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাতাব উদ্দিন এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ সহিদুল ইসলামসহ অন্যরা।
এসময় সানজিদা আফরিন আরো বলেন, কারখানার মালিকগণ বিশ্বাস করে বিভিন্ন পণ্য পরিবহণ সংস্থার মাধ্যমে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পণ্য চট্রগ্রামসহ অন্যান্য বন্দরে পাঠিয়ে থাকেন। কিন্তু পণ্য পরিবহণ সংশ্লিষ্ট একটি অসাধু চক্র পথে নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে লরি বা কাভার্ডভ্যান থেকে আংশিক কখনো পুরো পণ্য চুরি করে। ফলে অনেক সময় বন্দরে এ চুরির বিষয়টি ধরা না পড়লে বিদেশে রফতানির সময় চুক্তির চেয়ে কম পণ্য রফতানি করা হয়। অনেক সময় বন্দরে বিষয়টি ধরা পড়লেও সময় মত সম্পূর্ণ রফতানি করা সম্ভব হয় না। এতে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। অপরদিকে দেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে এসব বিষয়ে আরো সচেতন হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন, গত ১৬ মার্চ ভোরে গাজীপুরের বাঘের বাজার এলাকার এস.পি গার্মেন্টস্ এন্ড ওয়াশিং লিঃ হতে একটি কাভার্ড ভ্যান গাড়ীর (রেজিঃ নং-ঢাকা মেট্র্-ট-২০-৫১৩২) চালকের মাধ্যমে সর্বমোট ৬৪১ (ছয়শত একচল্লিশ) কার্টুন অর্থাৎ ১১ হাজার ৬৪০ পিস তৈরী পোশাক (প্যান্ট) রপ্তানীর লক্ষ্যে চট্টগ্রাম পোর্টে প্রেরণ করা হয়। পরে একই দিন বিকাল গাড়ীর চালক বর্নিত মালামাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌছায়। চট্টগ্রাম বন্দরে কে.ডি.এস ডিপো বর্নিত মালামাল হিসাবকালে অনুমান ৪ হাজার ৮শ পিস তৈরী পোশাক (প্যান্ট) (যার সর্বমোট মূল্য অনুমান ৬০ লাখ ৪৮ হাজার টাকা) পাওয়া যায়নি। মালিকপক্ষ গাড়ীর চালকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এতে মালিকপক্ষের ধারণা হয় যে, উল্লেখিত গাড়ীর চালক বাদীর মালামালসহ গাড়ী নিয়া যাওয়ার পর চাল তার সহযোগীদের সহায়তায় যে কোন স্থানে যে কোন উপায়ে গাড়ীতে থাকা অনুমান ৪ হাজার ৮শ পিস তৈরী পোশাক (প্যান্ট) চুরি করে কোথাও বিক্রয় করেছে। পরে এ বিষয়ে মালিক পক্ষ জয়দেবপুর থানার মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরো জানান, মামলা রুজু হওয়ার পর গাজীপুর জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার এস. এম. শফিউল্লাহর দিক নির্দেশনায় পুলিশ পরিদর্শক মোঃ সহিদুল ইসলাম তদন্ত শুরু করেন। পরে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে ৬ জন আসামী গ্রেফতার করা হয়। এরা হলো মোঃ জাবেদ (২০), মোঃ শাহীন (২৪), মোঃ মিনু @ মিনহাজ (৩৬), মোঃ মোমেন মিয়া (৪১), মোঃ আল মামুন (৩০), ও খায়রুল কবির মুন্না (২৪)। পরে তাদের মধ্যে মোঃ জাবেদ (২০), মোঃ শাহীন (২৪), মোঃ মিনু @ মিনহাজ (৩৬) ও মোঃ মোমেন মিয়া (৪১) ঘটনার সত্যতা স্বীকার র্প্বূক বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। আসামীদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কারাগারে বন্দি মোঃ সাইফুল ইসলাম @ রায়হান (৩২), মোতালিব হোসেন @ বাবু(৪৮), ফারুক হোসেন(২৮), বিল্লাল হোসেন (৩৪) ও কাউসার(৪২) কে অত্র মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে বিজ্ঞ আদালতের আদেশনামা মূলে ৪ জন আসামী মোঃ সাইফুল ইসলাম @ রায়হান (৩২), মোতালিব হোসেন @ বাবু(৪৮), ফারুক হোসেন (২৮), বিল্লাল হোসেন (৩৪) কে পুলিশ রিমান্ডে আনিয়া জিজ্ঞাসাবাদ করলে, তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। উক্ত আসামীদের স্বীকারোক্তি ও সনাক্ত করা মতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানজিদা আফরিনের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক মোঃ সহিদুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্সদের নিয়া পুলিশী অভিযান পরিচালনা করিয়া ১৭ মে বিকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন চন্দ্রিমা এভিনিউ-০১, বাসা নং-১৯ হতে চোরাইকৃত সকল মালামাল এবং ঘটনায় ব্যবহৃত ট্রাক গাড়ীটি উদ্ধার পূর্বক জব্দ করেন।