গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের শ্রীপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে হত্যা মামলায় ফাঁসাতে পুত্রের পরিকল্পনায় পিতাকে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করলো পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হত্যাকান্ডে জড়িত দুইজনকে গ্রেফতারের পর তারা বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে।
নিহতের নাম গিয়াস উদ্দিন (৬০)। তিনি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার ভাংনাহাটি পশ্চিম পাড়া (নতুন বাজার) এলাকার মৃত হাজী আঃ মালেকের ছেলে।
গ্রেফতার আসামীরা হলো,ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার কোকসাইর এলাকার মৃত কেরামত আলীর ছেলে মো: আলম (৩৮) এবং একই জেলার ত্রিশাল থানার কুষ্টিয়া ২য় খন্ড এলাকার আবু কালামের ছেলে মো: আরাফত (২৬)। তাদের মধ্যে আলমকে গত ১৮ জুলাই ভোরে নিজ বাড়ী থেকে এবং আরাফাতকে শ্রীপুরের কেওয়া এলাকার ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে বিকালে আদালতে হাজির করা হলে তারা স্বীকারোক্তি দেয়।
মঙ্গলবার এসব তথ্য জানিয়েছেন গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান।
তিনি আরো জানিয়েছেন,নিহত গিয়াস উদ্দিন নিজ বসতবাড়ীর সামনে রাস্তার পাশে অটো রিক্সার গ্যারেজ চালাতেন। সেখানে অটোরিক্সা তৈরি ও ক্রয়-বিক্রয় করা হতো। উক্ত গ্যারেজে বিভিন্ন অটো রিক্সার চালক অটো চার্জসহ দৈনিক গ্যারেজ ভাড়া প্রদানের ভিত্তিতে গ্যারেজে গাড়ি রাখতো। গিয়াস উদ্দিন উক্ত গ্যারেজের ভিতর একপাশে কাঠের চৌকির উপর প্রতিদিন রাতে ঘুমাতো। তিনি প্রতিদিনের ন্যায় ঘটনার দিন ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর রাতে ঘুমাতে যান। পরদিন ১২ ডিসেম্বর ভোরে মাথায় রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত অবস্থায় পেয়ে পরিবারের সদস্যরা তাকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মামলার তদন্তকালে প্রকাশ পায়, ঘটনাস্থল থেকে একটি অটোরিক্সা ও ৫টি ব্যাটারি চুরি করা হয়েছে। উক্ত চুরির ঘটনাটি অনুসন্ধান করতে গিয়ে আসামী আলমকে গ্রেফতারের পর আমরা পিতা হত্যার নির্মম ঘটনার বিষয়টি জানতে পারি।
তিনি বলেন, আসামীরা স্বীকারোক্তিতে বলেছে, নিহত গিয়াস উদ্দিনের সাথে প্রতিবেশী মোঃ সাহাবুদ্দিন গংদের পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। একারণে সাহাবুদ্দিন গংদের ফাঁসাতে নিহত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আবুজর (৩২) এবং ভাই সিরাজের ছেলে সবুজ (৩২) মিলে ষড়যন্ত্রের জাল বুনে। এরই অংশ হিসাবে তারা গিয়াস উদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
গ্রেফতার আসামীরা অটোরিক্সা চালক। তারাও উক্ত গ্যারেজে তাদের অটোরিক্সা রাখতো। এ সূত্রে আসামীরা আবুজর ও সবুজের পূর্ব পরিচিত। সে সূত্রে গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়সহ ঘটনায় জড়িত অপরাপর আসামীরা সকলে একত্রিত হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক ঘটনার রাতে গ্যারেজে প্রবেশ করে ঘুমন্ত অবস্থায় মাথায় ধারালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনায় জড়িত আসামী আলম হত্যাকান্ডের পর তার অটোরিক্সার ব্যাটারী পুরাতন হওয়ায় ভিকটিমের গ্যারেজে রাখা অন্য একটি নতুন অটোরিক্সা হতে ৫টি ব্যাটারী খুলে ব্যাটারীসহ তার অটোরিক্সাযোগে চলে যায়।
তিনি আরো বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। মূলত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আবুজর এবং ভাতিজা সবুজ তাদের সহযোগিদের সাথে পরিকল্পনা করে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশী প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য ঘটনার রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ভিকটিমকে কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মোঃ অলিউল্লাহ বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় হত্যা মামলা রুজু করলে মামলাটি শ্রীপুর থানা পুলিশ ৩ মাস তদন্ত করে রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারায় মামলাটি পিবিআই গাজীপুরকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমানের সার্বিক সহযোগিতায় মামলা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ হাফিজুর রহমান তদন্ত করেন।