গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরে তাকওয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে শনিবার ভোররাতে চলন্ত অবস্থায় এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
রোববার সকালে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। উক্ত মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডা: এ এন এম আল মামুন ও ডা: সানজিদা হক উক্ত নারীর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসক ডা: এ এন এম আল মামুন জানান প্রাথমিকভাবে পরীক্ষায় ভিকটিমের ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তারপরও ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিকটিমের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আলামত পাঠানো হয়েছে এবং ভিকটিনের কপালে একটি আঘাতের চিহ্ন থাকায় তার মাথার এক্সরে করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা ভিকটিমের জবানবন্দি গ্রহণ করেছি। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, তিনি তার স্বামীসহ নওগাঁয় আত্মীয়ের বাড়ি বেড়ানো শেষ করে শনিবার রাত তিনটার দিকে মহানগরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় এসে নামেন। পরবর্তীতে তারা ভালুকার মাস্টার বাড়ি এলাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভোগড়া এলাকা থেকে তাকওয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে ওঠেন। বাসটি শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় গিয়ে বাসের চালক, হেলপার এবং তাদের অন্য অজ্ঞাতনামা সহযোগীরা ভিকটিমের স্বামীকে মারধর করে বাস থেকে ফেলে দেয়। পরে পুনরায় বাসটি গাজীপুর আসার পথে অজ্ঞাতনামা পাঁচজন তার হাত মুখ বেঁধে তাকে বাসের মেঝেতে ফেলে পালাক্রমে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে তাকে তারা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় নির্জন স্থানে ১০০ টাকা দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। পরে তিনি জয়দেবপুর থানায় গিয়ে ঘটনা পুলিশকে জানান এবং তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ হয়।
এ ঘটনায় ঐ নারীর স্বামী বাদী হয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
পরে পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে এবং লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো, নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার দরিপাড়া গ্রামের আলী আকবরের ছেলে রাকিব মোল্লা (২৩), নেত্রকোনা জেলা সদর উপজেলার গুপিরঝুপা গ্রামের মৃত সানোয়ার হোসেনের ছেলে সুমন খান (২০), ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাঁঠালকাচারি গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনের ছেলে মো: সজিব (২৩), একই জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার বিলডোলা গ্রামের তুলা মিয়ার ছেলে মো: শাহীন মিয়া (১৯) এবং খুলনার রূপসা উপজেলার খান মোহাম্মদপুর এলাকার মৃত নূর আলমের ছেলে মো: সুমন হাসান (২২)।
গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন জানান, নওগাঁয় আত্মীয়র বাড়ি বেড়ানোর শেষে উক্ত নারী স্বামীর সাথে বাসে করে এসে শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাসে এসে নামেন। পরে তিনি মাওনা যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্বামীকে নিয়ে তাকওয়া পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসটি গাজীপুর মহানগরী অতিক্রম করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় পৌঁছে বাসের চালক ও হেলপার এবং অন্যরা মিলে উক্ত নারীর স্বামীকে জোর করে বাস থেকে নামিয়ে দেন। পরে চলন্ত বাসে উক্ত নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয় এবং তার সাথে থাকা ব্যাগ এবং নগদ টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ধর্ষণের পর উক্ত নারীকে মাওনা থেকে গাজীপুরের দিকে আসার পথে হোতাপাড়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের নির্জন স্থানে নামিয়ে দেয়া হয়। পরে উক্ত নারী হোতাপাড়া এলাকায় অবস্থিত জয়দেবপুর থানায় গিয়ে ঘটনা পুলিশকে জানায়। পরে জয়দেবপুর থানা পুলিশ বিষয়টি উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও শ্রীপুর থানা পুলিশকে অবহিত করে।
এ দম্পতি ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানাধীন স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনার ছয় ঘন্টার মধ্যে জেলা পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণের সাথে জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। এবং লুণ্ঠিত সকল মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার মালামালের মধ্যে রয়েছে একটি বাটন মোবাইল, ভেনিটি ব্যাগ, ৪ হাজার টাকা, ট্রাভেল ব্যাগ ২টি, চাউল ২ কেজি, ১/২ কেজি+ভুট্টা, ২৫০ গ্রাম পোলার চাউল, এটিএম কার্ড ১টি, এক বয়ম আমের আচার।
গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা থেকে বাসটি আটক করা হয়। থেকে দুইজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কদমতলী এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন আরো জানান, গ্রেপ্তার আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসা করে অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃত ৫ জনকে আজ গাজীপুর আদালতে তোলা হবে। আসামিরা আদালতে তোলার পর স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী প্রদান করলে তাদেরকে আদালতে নির্দেশনা অনুযায়ী কারাগারে পাঠানো হবে অন্যথায় তাদেরকে ১০ দিনে রিমান্ড আবেদন করা হবে।