গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরে তাকওয়া পরিবহনের চলন্ত বাসে স্বামীকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার পাঁচ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। রোববার বিকেলে গাজীপুরের চারজন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামিদের জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়।
জবানবন্দিতে আসামিরা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার আসামিদের রোববার বিকেলে গাজীপুর আদালতে হাজির করা হয়। পরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশে গাজীপুরের পৃথক ৪জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারী কার্যুবিধির ১৬৪ ধারায় পাঁচজন আসামের জবানবন্দী রেকর্ড করেন। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার আসামি সজীব ও শাহিনের জবানবন্দী রেকর্ড করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক এখলাস উদ্দিন, আসামি মোঃ রাকিব মোল্লা ও সুমন হাসানের জবানবন্দি রেকর্ড করেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক ইসরাত জেনিফার জেরিন এবং আসামি সুমন খানের বক্তব্য জবানবন্দি রেকর্ড করেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এর বিচারক জুবাইদা নাসরিন বর্ণা।
তিনি আরো জানান, জবানবন্দীতে আলাদা আলাদাভাবে আসামিগণ তাদের অপরাধ স্বীকার করেন এবং ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন।
এছাড়া একই দিন বিকেলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৫ এর বিচারক রিফাত আরা সুলতানা ২২ ধারায় ভূক্তভোগী নারীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। ভুক্তভোগী নারী তার ধর্ষণের ঘটনার মর্মান্তিক ও করুন বর্ণনা তুলে ধরেন।
তিনি আরো জানান, জবানবন্দীতে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ বলেন, তিনি তার স্বামীকে নিয়ে নওগাঁ এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে বেড়ানো শেষে ময়মনসিংহ জেলা ভালুকা উপজেলার মাস্টার বাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। পথে তিনি গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস এলাকায় নামেন। পরে সেখান থেকে নিজ গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তাকওয়া পরিবহনের একটি বাসে উঠেন। পরে বাসটিতে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা থেকে আরো তিনজন যাত্রীবেশে পরিবহন শ্রমিক ওঠেন। পথে বিভিন্ন স্থানে বাসের অন্য যাত্রীরা নেমে যান। পরে বাসটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে শ্রীপুরের মাওনা ফ্লাইওভারের কাছে পৌছালে বাসে থাকা লোকজন তার স্বামীকে মারধর করে জোর করে বাস থেকে ফেলে দেন। পরে উক্ত গাড়িটি ঘুরিয়ে আবার গাজীপুরের দিকে আসার পথে উক্ত বাসে থাকা পাঁচজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি ঐ নারীর হাত মুখ বেঁধে বাসের মঝেতে ফেলে তাকে পালাক্রমে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এসময় ওই নারী বাধা দিলে তাকে মারধর করা হয় এবং তিনি কপালে আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে বাসটি ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা এলাকায় আসলে নির্জন স্থানে তাকে ১০০ টাকা দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে এ ঘটনায় গাজীপুর পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ রোববার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা এলাকায় মহানগর পুলিশের একটি টহল দল শনিবার ভোররাতে ওই নারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তারা তাদের কাছে আসলে তিনি পুলিশকে পুরো ঘটনা জানান। পরে টহল পুলিশ বিষয়টি জেলা পুলিশের জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানালে তিনি পুলিশ সুপারসহ অন্যতম কর্মকর্তাদের ঘটনা জানান। ঘটনা জানার পর তিনি তাৎক্ষণিকভাবে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এর নেতৃত্বে একাধিক পুলিশের দল পৃথকভাবে মহাসড়ক থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, তথ্যপ্রযুক্তি এবং অন্যান্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা থেকে শনিবার দুপুরে বাসটি উদ্ধার করে জব্দ করা হয় এবং এ সময় ২জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গাজীপুরের শ্রীপুর থানাধীন কদমতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ধর্ষণে জড়িত অপর ৩ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো, নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার দরিপাড়া গ্রামের আলী আকবরের ছেলে রাকিব মোল্লা (২৩), নেত্রকোনা জেলা সদর উপজেলার গুপিরঝুপা গ্রামের মৃত সানোয়ার হোসেনের ছেলে সুমন খান (২০), ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাঁঠালকাচারি গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনের ছেলে মো: সজিব (২৩), একই জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার বিলডোলা গ্রামের তুলা মিয়ার ছেলে মো: শাহীন মিয়া (১৯) এবং খুলনার রূপসা উপজেলার খান মোহাম্মদপুর এলাকার মৃত নূর আলমের ছেলে মো: সুমন হাসান (২২)।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতারের সময় লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার মালামালের মধ্যে রয়েছে একটি বাটন মোবাইল, ভেনিটি ব্যাগ, ৪ হাজার টাকা, ট্রাভেল ব্যাগ ২টি, চাউল ২ কেজি, ১/২ কেজি+ভুট্টা, ২৫০ গ্রাম পোলার চাউল, এটিএম কার্ড ১টি, এক বয়ম আমের আচার।
পুলিশ সুপার আরও জানান, গ্রেফতারের পর আসামিদেরকে ধর্ষণের শিকার নারী সনাক্ত করেছেন। এবং আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের নিকট তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে। তারা আদালতে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তাদেরকে বিকালে গাজীপুর আদালতে হাজির করা হয়।
এদিকে, দুপুরে ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। রোববার দুপুরে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। উক্ত মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডা: এ এন এম আল মামুন ও ডা: সানজিদা হক ঐ নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: এ এন এম আল মামুন জানান, প্রাথমিকভাবে পরীক্ষায় ভিকটিমের ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তারপরও ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিকটিমের ডিএনএ পরীক্ষা জন্য আলামত সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে এবং ভিকটিনের কপালে একটি আঘাতের চিহ্ন থাকায় তার মাথার এক্স-রে করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা ভিকটিমের জবানবন্দি গ্রহণ করেছি। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, তারা নওগাঁয় আত্মীয়ের বাড়ি বেড়ানো শেষ করে শনিবার রাত তিনটার দিকে মহানগরের প্রোগ্রাম বাইপাস এলাকায় এসে নামেন। পরবর্তীতে তারা ভালুকার মাস্টার বাড়ি এলাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভোগড়া এলাকা থেকে তাকওয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে ওঠেন। বাসটি শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় গিয়ে বাসের চাল হেলপার এবং তার অন্য অজ্ঞাতনামা সহযোগীরা ভিক্টিমের স্বামীকে মারধর করে বাস থেকে ফেলে দেয়। পরে পুনরায় বাসটি গাজীপুর আসার পথে অজ্ঞাতনামা পাঁচজন তার হাত মুখ বেঁধে তাকে বাসের মেঝেতে ফেলে পালাক্রমে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে তাকে তারা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় নির্জন স্থানে ১০০ টাকা দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে দেয়।
গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন জানান, গত শনিবার ভোররাতে নওগাঁ থেকে স্বামীর সাথে এক যাত্রী মহানবী গুলির বোগরা বাইপাসে এসে বাস থেকে নামেন। ঘরে তিনি মাওনা যাওয়ার উদ্দেশ্যে তাকওয়া পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসটি গাজীপুর মহানবীর অতিক্রম করে শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় পৌঁছে বাসের চালক হেলপার এবং অন্যরা মিলে উত্তর নারীর স্বামীকে বাস থেকে নামিয়ে দেন। পরে চলন্ত বাসে উক্ত নারীকে ধর্ষণ করা হয় এবং তার সাথে থাকা ব্যাক এবং নগদ টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় উক্ত নারীর স্বামী বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।