গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার হিসাবে যোগদানের পর গত একমাসে জিএমপির বিভিন্ন সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম। এসময় তিনি সাংবিাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এবং নগরীর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মতামত ও পরামর্শ শুনে সেগুলো সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন।
মোল্যা নজরুল ইসলাম, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) গত ১৩ জুলাই গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পরদিন তিনি সাংবাদিকদের সাথে প্রথম মতবিনিময় করেন। এসময় গাজীপুরের যানজট, মাদক, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন দাবীর প্রেক্ষিতে যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা তিনি তুলে ধরেন।
রোববার বিকালে জিএমপি সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, যানজট মুক্ত নগর উপহার দেয়ার এবং মাদক নির্মূলকে তাঁর অন্যতম এজেন্ডা হিসেবে চিহ্নিত করেন। যেকোন অপরাধজনক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রনে ‘জিরো টলারেন্স’ মেনে চলবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কটি যানজটমুক্ত এবং মহাসড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত কর, এই মহাসড়ক ব্যবহারকারী ৩৬ টি জেলার যানবাহন এবং জনগণকে অসহনীয় যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা ও অনাকাঙ্খিত উদ্ভুত পরিস্থিতি ও সীমাহীন দুর্ভোগ লাঘবে মহাসড়কের পাশে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ, অবৈধ ইজিবাইক, অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণের ফলে এ পথে এখন স্বস্তি ফিরেছে। মহাসড়কে ব্যাটারীচালিত অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিক্সা চলাচল বন্ধে গত ১ মাসে ২৮৭৫ টি ইজিবাইক ও অটোরিকশা ডাম্পিং, ১০৮২ টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা এবং ডকুমেন্টস্ প্রদর্শনে ব্যর্থ হওয়ায় ১২৯ টি যানবাহন আটক করা হয়।
তিনি আরো বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স” নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সামান্য মাদক নিয়ে ধরা পড়লেও তার প্রাপ্তিস্থানসহ এর সাথে জড়িত যত সাপ্লাই চেইন রয়েছে সকলকেই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। গত ১ মাসে বিভিন্ন থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর বিভিন্ন ধারায় ৫৫ টি মামলা হয় যেখানে ১২৮ জন মাদকসেবী এবং মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার হয়। সেই সাথে ২০০.২৫ গ্রাম হেরোইন, ২৪ কেজি ১৪০ গ্রাম গাঁজা, ৪০৫০ পিস ইয়াবা, ৮৫.৫ মিলি লিটার চোলাই মদ, ৪৯৭ বোতল ফেন্সিডিল ও ১ বোতল হুইস্কি উদ্ধার করা হয়। মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকায় কুখ্যাত মাদক সম্রাজ্ঞী মধু (৪৫) কে তার মাদক ব্যবসায়ী স্বামী, ছেলে, মেয়ে এবং জামাতাসহ গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুসারে আইনগত ব্যবস্থাও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এছাড়া সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি ও জমি দখলসহ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত ১৬ টি মামলার আসামী রবিন সরদারকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া গাজীপুর চৌরাস্তার বিভিন্ন সিএনজি স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি করার সময় ২ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। ৬ টি ডাকাতি প্রস্তুতি মামলার বিপরীতে ২৭ জন, ৮ টি দস্যূতা প্রস্তুতি মামলার বিপরীতে ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ছিনতাইয়ের শিকার ডুয়েটের সহকারী অধ্যাপক মিরাজুল ইসলাম ভূইয়ার ছিনতাইকৃত ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার এবং ছিনতাইয়ে জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। শিমুলতলি এলাকায় সংগঠিত কাপড় ব্যবসায়ী জনৈক ওয়ালিউল্লাহ ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন এবং ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয় এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ক্ষুর ও ইট উদ্ধার করা হয়। গত ১ মাসে ওয়ারেন্টভুক্ত ৩৫৪ জনকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়।
তিনি আরো বলেন, মহাসড়ক অবরোধ করে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে রাষ্ট্র বিরোধী বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীর ৫৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রবিরোধী যেকোন অপতৎপরতা মোকাবেলা করতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের মধ্যে মজিবুর রহমান, খায়রুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান টিটো, আবুল হোসেন, রিপন শাহ, এম. আসাদুজ্জামান সাদ, মাহমুদা শিকদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) জিয়াউল হক ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মো: দেলোয়ার হোসেন, উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) মো: জাকির হাসান,উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-দক্ষিন) ইলতুৎমিশ, উপ পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো: নুরে আলম, উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী কমিশনার (ডিবি-মিডিয়া) আবু সায়েম নয়নসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ।