গণবাণী ডট কম:
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি বলেছেন, দেশে সাইবার ক্রাইম আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। এ ক্রাইম এতো বেশি বিস্তার লাভ করেছে যে, সবাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে আমাদের দেশের মেয়েরা সবচেয়ে বেশেী এ ক্রাইমের শিকার হচ্ছে। একারণে তারা এ নিয়ে সব সময় উদ্বিগ্ন থাকে। এ জন্য আমরা সাইবার ক্রাইম ইউনিট গঠন করেছি।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের চতুর্থ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওইসব কথা বলেন।
গাজীপুর পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ আখতার হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন আইজিপি ড.বেনজির আহমেদ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, গাজীপুরকে এক সময় আমরা জানতাম, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, টাকশালের জন্য। কিন্তু এখন গাজীপুর অনেক বদলে গেছে। এখানে অসংখ্য শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেছে। গাজীপুরকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউন বল্লে বেশী বলা হবে না। এখানে ইন্ডাস্ট্রি এমনভাবে ডেভেলপ করেছে যে, গাজীপুর এখন একটা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। আমরা গাজীপুরসহ মোট ৭টি মেট্রোপলিটন গঠন করেছি। শুধু মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠন করিনি। আমরা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ২০০৮ থেকে ২০২২সাল পর্যন্ত পুলিশের ৮২ হাজার ৫৮৩টি নতুন পদ সৃষ্টি করে ৮২হাজার ৫৮৩জন পুলিশ সদস্য নিয়োগ দিয়েছি। তৈরি করেছি ইন্ডাস্ট্রিজ পুলিশ, গঠন করা হয়েছে টুরিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশ, ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, আমরা এন্টিটেরিজম ইউনিট পুলিশ গঠন করেছি, ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট গঠন করেছি। আমরা সবকিছুই করেছি জনগণকে সেবা দেয়ার জন্য, তাদের নিরাপত্তার জন্য, তাদের শান্তিতে রাখার জন্য। আমি মনে করি এসব গঠনে আমাদের যে উদ্দেশ্য ছিল, সে উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
তিনি বলেন, নিশ্চয় আপনারা ৯৯৯-এর সুফল পাচ্ছেন। যে কোন সময়, দেশের যে কোন জায়গা থেকে ফোন করেই আপনারা পুলিশি সেবা পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ১৫ বছর আগের পুলিশ আর আজকের পুলিশ এক নয়। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পুলিশ গঠন করেছি। তিনি চেয়েছিলেন, পুলিশ কোন বৈদেশিক শক্তির নিয়োজিত পুলিশ হবে না। এদেশের পুলিশ হবে জনগণের পুলিশ। তারা মানুষের সেবার জন্য, মানুষের কল্যানের জন্য কাজ করবে। আপনারা গত কোভিডের সময় দেখেছেন। পুলিশ কিভাবে মানুষের পাশে থেকেছে। যখন সন্তান তার বাবা মার লাশ নিতে আসেনি, তখন পুলিশ তার দায়িত্ব নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে পুলিশের আইজি বেনজির আহমেদ বলেছেন, বাংলাদের রাজধানী যদি ঢাকা হয়, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে গাজীপুরকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে আমরা চিহ্নিত করতে পারি। এদেশের অর্থনীতির ফুসফুস হচ্ছে গাজীপুর। হাজার হাজার ইন্ডাস্ট্রি এবং লাখ লাখ শ্রমিক এখানে কাজ করছে। আমরা প্রতিবছর যে ১৫ মিলিয়ন ডলারের গার্মেন্ট প্রোডাক্ট রপ্তানি করছি। তার অধিকাংশই এ অঞ্চল থেকে রপ্তানী হয়ে থাকে। তাই গাজীপুরকে দেশের অর্থনীতির ফুসফুস বলা ভুল হবে না।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে মহানগর পুলিশ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এতে বাদ্যদল, বিপুল সংখ্যক মোটর সাইকেল, দুটি হাতি সকলের নজর কাড়ে। পরে পুলিশ লাইন্সে কেক কেটে ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এসময় আতশবাজি ফুটিয়ে অনুষ্ঠানকে উপভোগ্য করে তোলা হয়।
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের প্রথম কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, বিভিন্ন দপ্তরের সরকারী কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশার নেতৃবৃন্দ। আলোচনা সভা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এতে দেশের জনপ্রিয় শিল্পীগণ অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ৮টি থানা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের। থানাগুলো হলো- গাজীপুর সদর থানা, বাসন থানা, কোনাবাড়ী থানা, কাশিমপুর থানা, গাছা থানা, পূবাইল থানা, টঙ্গী পূর্ব থানা ও টঙ্গী পশ্চিম থানা।
‘গৌরবময় সেবার ৪ বছর’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হলো।