নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপাসিয়া (গাজীপুর):
গত দুদিন ধরে ঠান্ডা জ্বরে ভুগছিলেন মা তাসমিনা। মা তাসমিনার খাওয়ার জন্যই আনারস কিনে আনা হয়েছিল বাড়িতে। কিন্তু ছেলে আনারস দেখে বায়না ধরেছে সে আনারস খাবে। ছেলেকে কিছুক্ষণ আগে দুধ খাইয়েছেন এই জন্যে ছেলেকে আনারস কেটে দেওয়ার জন্য সময় ক্ষেপণ করছিলেন মা। গ্রামে কথা প্রচলিত আছে,দুধের সাথে আনারস খেতে নেই।
৫ বছর বয়সী ছেলের কান্নাকাটিতে এক পর্যায়ে আনারস কাটতে ধারালো বটি নিয়ে বসেন তাসমিনা। গায়ে অনেক জ্বর নিয়ে ছেলের জন্য আনারস কাটতে গিয়ে হঠাৎ পড়ে যান ধারালো বটির উপর। গ্রামে বটিগুলো ব্যবহার করা হয় কাঠের উপর আটকিয়ে। কাঠের উপর বসে তারপর বটি ব্যবহার করা হয়। সেই বটিতে তাসমিয়া পড়ে গেলে বটির ধারালো অংশ গিয়ে গলায় বিধে। ৫ বছরের ছেলে তাওহীদ ছাড়া তখন বাসায় কেউ ছিল না। তাওহীদ মায়ের এই অবস্থা দেখে কেটে যাওয়া অংশে কাপড় চেপে ধরে। সেই সাথে ডাক চিৎকার করে কান্না করতে থাকে।
পাশের বাড়িতে চলছিল বিয়ে অনুষ্ঠান। তাওহিদের কান্নার শব্দ বিয়ে বাড়ির বাদ্যযন্ত্রের শব্দের কারণে কেউ শুনতে পায়নি। মায়ের কোন সারা শব্দ না পেয়ে তাওহীদ তখন চেয়ার এনে বাড়ির দরজার উপর দিয়ে বের হয়ে পাশের বাড়ির লোকজনকে ডেকে এনে মায়ের এই দুর্ঘটনার কথা জানান। ততক্ষণে তাসমিনা (২৮) ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। কথাগুলো বলছিলেন, মৃত তাসনিয়ার ভাসুর মো. সিরাজুল আলম।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের ভেড়ারচলা গ্রামের এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তাসমিনা আশরাফুল আলমের স্ত্রী। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে মেয়ে সিনহা (১১) ও ছেলে তাওহীদ (৫)।
নিহত তাসমিনা ভাসুর মো. সিরাজুল আলম জানান, ছোট ভাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করে। কর্মস্থল বগুড়ায় সেখানেই ছিল। সংবাদ পেয়ে সকালে বাড়ি আসে। ছোট ছেলে তাওহীদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে আমরা জানতে পারি। আনারস কাটতে গিয়ে তার মা গলায় আঘাত পান। সে অনেক কান্নাকাটি করে এবং মাকে অনেক ডাকাডাকি করেন কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে পাশের বাড়ির লোকজনকে ডেকে আনে। এ বিষয়ে আমাদের কোন অভিযোগ নেই কারো বিরুদ্ধে। শনিবার সকাল দশটায় জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাহমিনা কে দাফন করা হয়।
কাপাসিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম নাসিম জানান, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। এটি একটি দুর্ঘটনা। বাচ্চাকে আনারস কেটে দিতে গিয়ে অসাবধানতা বসত তিনি বটিতে পড়ে গিয়ে গলার ডানপাশে আঘাত পান। তখন পাঁচ বছরের ছেলে সন্তানটি ছাড়া বাড়িতে কেউ ছিল না। নিহতের স্বামী ও বাবার পরিবারের পক্ষ থেকে কারো কোন অভিযোগ না থাকায় বিনা-ময়নাতদন্তে মৃতদেহ দাফন কাজ সম্পূর্ণ করার হয়।