গণবাণী ডট কম:
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বহুল প্রত্যাশিত নিরবাচন আগামী ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন কেয়ামত থেকে কেয়ামত চলচ্চিত্র খ্যাত জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমী। নির্বাচনে সন্তোষজনক প্রার্থী না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচন করার স্বিদ্ধান্ত নিয়েছেন মৌসুমী।
সভাপতি পদে নিজের মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে নায়িকা মৌসুমী বৃহস্পতিবার খুবই হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “এখানে আনন্দ হবে, উৎসব হবে। শিল্পীরা হাসতে হাসতে ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচন করবেন। কিন্তু, এই নির্বাচনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে নানাভাবে। যা আমাকে অবাক করেছে, হতাশ করেছে।” তিনি আরো বলেন, “শিল্পী সমিতি একটা পরিবার। এমনটাই জেনে এসেছি সব সময়। সেই আবেগ থেকেই বহুবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিতও হয়েছি। কিন্তু, এবার নির্বাচন করতে এসে অনেককিছু দেখছি যা একজন শিল্পী হিসেবে আমি প্রত্যাশা করিনি।” “যারা আমাকে সভাপতি পদে নির্বাচন করতে পরামর্শ ও সাহস দিয়েছিলেন তাদের কেউ নেই আমার পাশে”।
সভাপতি পদে মৌসুমী ও মিশা সওদাগর এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ইলিয়াস কোবরা, জায়েদ খান ও ডি এ তায়েব মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়াও, বিভিন্ন পদের জন্যে ডিপজল, ইমন, জয় চৌধুরী, জ্যাকি আলমগীর, অঞ্জনা, রোজিনাসহ অনেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এ জন্য প্রতিপক্ষ মিশা-জায়েদ প্যানেলের প্রতি অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে। তাদের দাবি, প্যানেলের সম্ভাব্য সদস্যদের ভয়ভীতি দেখানোয় অনেকেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। এবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
অপরদিকে নিয়ম অনুযায়ী শিল্পী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনাগ্রহের কারণে ক্ষমতার দুই বছর পার হয়ে গেলেও বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম অনুষ্ঠিত হয়নি । এ নিয়ে কমিটির সদস্যদের মধ্যে চাপা ক্ষোভও ছিল। এ অবস্থায় শুক্রবার এফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাব চত্বরে এজিএম অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে কমিটির চল্লিশ ভাগ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন না। মিশা সওদাগর, জায়েদ খান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি রিয়াজ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অঞ্জনা, নাসরিন, জেসমিনসহ আরও কয়েকজন। তবে এজিএমে উপস্থিত ছিলেন প্রায় দুই শতাধিক সাধারণ সদস্য।
জানা গেছে, এজিএমে বেশকিছু বিষয় নিয়ে হট্টগোল বাঁধে। এর মধ্যে সহ-সভাপতি রিয়াজসহ অন্য সদস্যদের কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। একপর্যায়ে রাগে ও ক্ষোভে এজিএম থেকে ওয়াক আউট করে চলে যান চিত্রনায়ক রিয়াজ। এ সময় উপস্থিত সদস্যরা রিয়াজের পক্ষে কমিটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।
চিত্রনায়ক রিয়াজ কথা বলার জন্য প্রায় আধাঘণ্টা চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কিন্তু তাকে কথা বলতে দেয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে রিয়াজ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আসলে আজ যা হলো, সমিতিতে যা হচ্ছে তা নিয়ে বলার ভাষা নেই। কেমন একটা একনায়কতন্ত্রভাব। সবকিছুতে সভাপতি আর সেক্রেটারিই যেন মুখ্য! সব অর্জন কী তাদের দুজনের? তারা দুজন কি একা একা জয়ী হতে পারতেন বা দুটা বছর একাই চলতে পারতেন?’ যদি তা-ই হবে তাহলে ঘটা করে ২১টি পদের নির্বাচনের কী দরকার? এ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এজিএম করার কথা প্রতি বছর। সেটা হয়নি। দুই বছর শেষে হচ্ছে, সেখানেও যদি কথা বলার সুযোগ না থাকে তাহলে তো মেনে নেয়া যায় না। সভাপতি আর সেক্রেটারির বাইরে এজিএমে আর কোনো পদের লোক কথা বলতে পারবেন না, এমন গঠনতন্ত্রের কথা আমার জানা নেই। তারা কেন ভয় পাচ্ছেন? কীসের এত ভয়? কেন অন্যের কণ্ঠরোধ করতে চান? আমরা তো শিল্পী সমিতিতে গণতন্ত্র ও সুন্দর কিছু চর্চার জন্যই এক হয়েছিলাম। তাহলে এত রাজনীতি কেন সবকিছু নিয়ে?’
এ বিষয়ে মিশা সওদাগর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এজিএম হলো যারা কমিটিতে থাকে তাদের দায়-দায়িত্ব নিয়ে কৈফিয়তের অনুষ্ঠান। সাধারণ সদস্যদের কাছে এদিন কমিটি জবাবদিহি করবে। সভাপতি ও সেক্রেটারি সব প্রশ্ন বা অভিযোগের উত্তর দেবেন। এখানে সবার কথা বলার কিছু নেই৷ এমন কোনো নিয়মও নেই৷’
কিন্তু সহ-সভাপতি হিসেবে রিয়াজ কথা বললে কী এমন ক্ষতি হতো- এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি মিশা সওদাগর। এই অভিনেতার দাবি, সিনেমায় এখন সবদিক থেকেই ভালো সময়ের আগমন ঘটছে। এখন মন্দ বা ত্রুটি না খুঁজে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
এদিকে অনেক সদস্যই বলাবলি করেন, এজিএমের আড়ালে আজ মূলত মিশা-জায়েদ প্যানেলের নির্বাচনী প্রচারণাই চালানো হয়েছে। মঞ্চে মিশা-জায়েদের প্যানেলের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। এজন্য হুট করে এ আয়োজন। তবে এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মিশা বলেন, ‘এটা ভিত্তিহীন।’