গণবাণী ডট কম:
প্রায় ১১৬ বছর বয়সে আজ থেকে ১২৯ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন ফকির লালন শাহ। এই দীর্ঘ সময়েও মানুষ তাঁকে ভূলতে পারেননি। বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাননি তিনি। বরং তার সৃষ্টির ঔজ্জ্বল্য বেড়েছে, বেড়েছে পরিধি। লালন শাহ শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে এক ঐন্দ্রজালিক মোহময়তা বিস্তার করে চলেছেন। দিনে দিনে তার সেই ঐন্দ্রজালিক বলয়ের বিস্তৃতি ঘটছে।
অগণিত মানুষ তার বিশাল সৃষ্টি জগতে প্রবেশ করে সন্ধান করছেন যেন লালনেরই। বুধবার কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালন শাহের ১২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী লালন স্মরণ উৎব। সারাদেশ থেকে আসা লালন অনুসারীদের মিলনমেলায় জমে উঠেছে ছেঁউড়িয়া। এবার উত্সবের শিরোনাম করা হয়েছে ‘বাড়ির পাশে আরশিনগর, সেথা এক পড়শি বসত করে…’।
কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার এক গভীর জঙ্গলে সাধক শিরোমণি ফকির লালন শাহ তার অনুসারী ভক্তদের নিয়ে যে আখড়া গড়ে তুলেছিলেন, তা এখন সারা বিশ্বের মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তার গান এক গভীর দ্যোতনায় এই বিশ্ব সংসার, মানবধর্ম, ঈশ্বর ও ইহলৌকিক ও পারলৌকিকতা সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে বাধ্য করে। সব মরমি সাধকেরই পরম্পরা থাকে। তবে লালনের দ্যুতি এমনই তীব্র ও রহস্যময় যে তার পরে আর কোনো মরমি সাধক নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। দুই শতাব্দী ও চার দশক পেরিয়ে গেলেও আজও লালন মরমি জগতের সার্বভৌম ব্যক্তি। লালন উৎবে আসা বাউল সাধক ফকির মোতালেব সাধু বলছিলেন, ‘লালনের গানে সবার ওপরে রয়েছে মানুষ। সবকিছুর সন্ধান পাই তার গানে। কোরান, বেদ, মানবধর্ম, জগতের সব ভাবনার উত্তর। কিন্তু লালনকে আমরা বুঝতে পারি না। সারাজীবন ধরে লালনেরই সন্ধান করে চলেছি।’
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়ায় লালন আখড়াবাড়িতে গতকাল বুধবার থেকে শুরু হয়েছে বাউলসম্রাট মহামতি ফকির লালন সাঁইয়ের ১২৯তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী স্মরণোত্সব। লালন একাডেমির আয়োজনে এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বুধবার রাতে লালন আখড়াবাড়ির মূল আঙিনার সামনে মরা কালীগঙ্গা নদীর তীরে প্রধান অতিথি হিসেবে উত্সব উদ্বোধন করেন ও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ, খুলনার ডিআইজি ড. খ. মহিদ উদ্দিন বিপিএম (বার), লালন মাজারের প্রধান খাদেম মোহাম্মদ আলীসহ আরো অনেকে।