গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের দেয়া ছাড় পত্রের শর্ত ভঙ্গ করে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা, নদী দখল, দূষণ, নদীর গতিপথ পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে একটি সিরামিক কারখানার বিরুদ্ধে। গাজীপুর পরিবশে অধিদপ্তর ওই কারখাানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরের নোটিশকে আমলে নিচ্ছে না। সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানের জবাব দিতে বলা হলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ দেড় মাসেও নোটিশের জবাব দেয়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুর জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বহেরারচালা গিলাবেড়াইদ এলাকায় ২০০৯ সালে গড়ে উঠে এক্স সিরামিকস লিমিটেড কারখানা। যার জমির পরিমাণ ৭৫ বিঘা। কারখানাটি কমলা ‘খ’ শ্রেণীভ‚ক্ত। ওই বছরের ১১ নভেম্বর কাখানাটি পরিবেশ ছাড়পত্র নেয়। গত বছর ১০ নভেম্বর এটির নবায়নের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরিবেশ দূষণের অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুর অফিস থেকে কারখানা কর্তৃপককে গত ২০ নভেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করলেও তারা দেড় মাসেও সে নোটিশের জবাবা দেয়নি। কারখানাটির বিরুদ্ধে স্থানীয়রা এবং পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো নদী, দখল, দূষণ, অবৈধভাবে নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণসহ নানা অভিযোগ তুলেন। এ প্রেক্ষিতে গত বছর ৮ ডিসেম্বর নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার সরেজমিনে ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি কারখানাটির দখল ও দূষণ দেখে চরম অসন্তোষ প্রকাশ এবং ক্ষুব্ধ হন। তাৎকÿণিকভাবে কারখানাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গাজীপুরের জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ প্রদান করেন। এ প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুরের জেলা কার্যালয় থেকে সরেজমিনে বিষয়টি তদন্ত করেন। তদন্তে পরিবেশ অধিদপ্তর দেখতে পায় কারখানাটি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের ১১টি শর্তাবলী ভঙ্গ করে উৎপাদন করে যাচ্ছে। তাছাড়া ইটিপির ইনলেট ও আউটলেট ফ্লো মেজারিং ডিভাইচ স্থাপন না করে স্থাপিত ইটিপিটি সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে বাইপাস লাইনের মাধ্যমে তরল বর্জ্য সম্পূর্ণ অপরিশেধিত অবস্থায় কাখানা সংলগ্ন লবলং নদীতে নির্গত করে কারখানার কার্যক্রম অনঅনুমোদিতভাবে সম্প্রসারণ করে। তারা কারখানা সংলগ্ন লবলং নদী দখল, দূষণ ও অনুমোদন ব্যাতীত নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণ করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করেছে। ফলে আশপাশের মাটি, পানি ও বায়ু দূষিত করে পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করছে।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আব্দুস সালাম সরকার জানান, কারখানাটিকে দেয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বাতিলসহ কারখানাটির মালিক ও পরিচালকগণের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের,ক্ষতিপূরণ আদায় কারখানাটির সকল সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং ভরাটকৃত লবলং নদীর ফোরসোরসহ সকল অংশ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদানের সুপারিশ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুর জেলা কার্যালয় থেকে ঢাকা অঞ্চল কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ নদী পরিব্ররাজক দলের সভাপতি ও প্রধান গবেষক মো. মনির হোসেন বলেন, লবণদহ নদী শ্রীপুর উপজেলাবাসীর হৃৎপিন্ড। লবণদহ বাঁচলেই এ জনপদের মানুষ বাঁচবে। তাই নদীটিকে বাঁচাতে কালক্ষেপন কাম্য নয়। নদীর সীমানা, ফোরসোর ও ফ্লাড প্লেইন চিহ্নিত করা এবং দখলদারদের উচ্ছেদ করা খুবই জরুরী। লবণদহ নদীর সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সিএস পর্চা অনুযায়ী নদীর প্রস্থ যদি হয় ৩০ ফুট তাহলে নদীর এ পাড় ওপাড় আরো ৩৩ ফুট (১০ মিটার ) করে ফোরসোর রাখতে হবে। আর ফ্লাড প্লেইন পানি উন্নয়ন বোর্ড গবেষণা করে নির্ধারন করে দিবে। নদী উদ্ধার ও সংরক্ষণে এর বিকল্প নেই।
এক্স সিরামিক কারখানার সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, আমরা নিয়ম মেনে কারখানা পরিচালনা করছি। আমরা নদী দখল করেনি। জেলা প্রশাসন নদীর সীমানা চিহ্নিত করে দিলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমাদের কারখানার ইটিপি সব সময় সচল আছে। মাঝে মধ্যে কিছু পানি সরাসরি নদীতে চলে যায়। তবে তা ÿতিকারক বা বিষাক্ত নয়। তিনি পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোন নোটিশ পাননি বলে দাবি করেন।