গণবাণী ডট কম:
দাবানলের আগুনে পুড়ছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির প্রায় প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে দাবানলের আগুনে পুড়ে ছাই বাড়ি-ঘর, বনাঞ্চল, ফসলি জমি। মারা গেছে অন্তত ৫০ কোটি বন্যপ্রাণী।
দাবানলের আগুনে নিরীহ বণ্যপ্রাণীর মৃত্যু ও তাদের কষ্ট দেখে বিশ্ববাসী যখন ব্যথিত, ঠিক তখনই শুধুমাত্র পানি খেয়ে ফেলে এমন অভিযোগে ১০ হাজার উট গুলি করে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। প্রশাসন জানিয়েছে, অতিরিক্ত পানি পান করায় উট হত্যার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া এ হত্যাযজ্ঞে হেলিকপ্টার থেকে স্নাইপার দিয়ে গুলি করে মারা হচ্ছে বুনো উট৷ প্রথম দিনে প্রায় দেড় হাজার উট মারা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ তবে এ প্রক্রিয়ায় উটকে কোনো কষ্ট দেয়া হচ্ছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের৷ প্রশিক্ষিত স্নাইপারদের সহায়তা করছেন পরিবেশ বিভাগের কর্মকর্তারা৷
অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী অধ্যুষিত আনাঙ্গু পিটজানটজাটজারা ইয়ানখানজাটজারা (এপিওয়াই) অঞ্চলের স্থানীয় সরকারের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মারিতা বাকের গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দাবানলের কারণে পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় উটের জন্য স্থানীয় মানুষ সমস্যায় পড়ছেন। কারণ উট স্থানীয় জলাশয়ের সমস্ত পানি পান করে ফেলছে। এমনকি এসির পানিও খেয়ে ফেলছে বলে জানান বাকের।
অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বুধবার থেকেই উট নিধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে যা চলবে পাঁচ দিন। এ কাজ করতে হেলিকপ্টার পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দাবানলের কারণে উটের পালের স্বাভাবিক বাসস্থানে দেখা দিয়েছে পানির সংকট৷ ফলে বিপুল সংখ্যক উট শহরের দিকে চলে আসছে, আদিবাসীদের পানি এবং খাবারে হামলা চালাচ্ছে৷ কোথাও কোথাও উটের মরদেহ পানি দূষিত করে ফেলছে৷ ধারণা করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বুনো উটের আবাসস্থল অস্ট্রেলিয়া৷ সঠিক সংখ্যা জানা না থাকলেও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যবর্তী মরু এলাকায় প্রায় ১০ লাখ উট ঘুরে বেড়ায় বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের৷ উট অস্ট্রেলিয়ার প্রাণী না৷ ফলে এ অঞ্চলে উটের কোনো স্বাভাবিক খাবারও নেই৷ একসময় ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল অস্ট্রেলিয়া৷ তখনই আফ্রিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ বর্তমানে স্বঘোষিত সোমালিল্যান্ড থেকে উট সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় বলে মনে করা হয়৷ কেউ কেউ ভারত, আফগানিস্তান বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে অস্ট্রেলিয়ায় উট নেয়া হয়েছে বলেও মনে করেন৷
অস্ট্রেলিয়ার এমন পদক্ষেপকে ‘নির্মম’বলে আখ্যা দিয়েছে আফ্রিকার সোমালি উট পালক সমিতি৷ উট হত্যা না করে বরং তাদের যেখান থেকে নেয়া হয়েছিল, সেখানে ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সমিতির চেয়ারম্যান মোস্তাফে কালি দিক। এদিকে অস্ট্রেলীয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে নিন্দার ঝড় উঠেছে গোটা বিশ্ব জুড়ে। পরিবেশ প্রেমীরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। এর ফলে অস্ট্রেলিয়া ফের নিজেদের পরিবেশের ভারসাম্য নিজেরাই ধ্বংস করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।