গণবাণী ডট কম:
একটি মিসড কল। শুরু হয় দুজনের আলোচনা গল্প। কথা এগিয়ে যায় প্রেমের সম্পর্কের দিকে। না দেখেই গাজীপুরের কিশোরী তিথি (ছদ্মনাম) প্রেমে পড়ে বগুড়ার এক লম্পটের। সরলমনা এই তিথি মায়ের সাথে মিথ্যে বলে বগুড়ার কথিত সেই প্রেমিকের ডাকে সাড়া দিয়ে দেখা করার জন্য চলে যায় বগুড়ায়।
এরপর প্রেমিকের সাথে দেখা করতে এসে জীবনের মূল্যবান সম্পদ হারাতে হয় তাকে। সেখানে সে হয় ধর্ষিত, ভন্ড প্রেমিক তাকে ফেলে যায় রাস্তার পাশে। ধর্ষিত এই কিশোরীকে পুলিশ উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসা দেয়। আর চতুর লম্পট কথিত ভণ্ড প্রেমিক শুভকে অনেক চেষ্টার পর গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। পরে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
হতভাগ্য কিশোরী মেয়েটি ঠিকমত কথা বলতে পারে না এবং চোখেও কম দেখে। এক ভন্ড প্রেমিকের কবলে পড়ে পিতা-মাতার ১৬ বছরের সম্পর্ক ভুলে তাদের সাথে মিথ্যা কথা বলে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি সে তার পিতার সাথে আবার নিজ বাড়িতে ফিরে আসে এক বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা সাথে নিয়ে।
স্থানীয় সাংবাদিকদের তিথি জানায়, একটি মিসড কলের সূত্র ধরে বেশ কয়েক মাস কথার্বাতা হয় শুভ সন্ধ্যা নামধারী এক ভন্ড প্রতারক এর সাথে। বেশ কিছুদিন কথাবার্তা হওয়ার প্রেক্ষিতে তিথি সেই লম্পটের প্রতি বেশ দূর্বল হয়ে যায়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের সন্ধ্যায় একটু বেশিই কথা হয় তাদের মধ্যে। টিনেজ মেয়েটির মধ্যে বিচক্ষণতার চেয়ে আবেগ বেশি কাজ করে। পরের দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি ছেলেটার সাথে দেখা করার জন্য উতলা হয়ে যায়। বাসায় মায়ের সাথে মিথ্যা বলে স্কুলের নাম করে গাজীপুর থেকে বগুড়ার গাড়িতে চেপে বসে। কিন্তু ভুল করে আসার সময় সে তার মায়ের ফোন যেটা দিয়ে সে কথা বলত সেটা ফেলে রেখে আসে। বগুড়া এসে মেয়েটি পাশের যাত্রীর ফোন থেকে তার কথিত প্রেমিক শুভ’র (২৫) সাথে যোগাযোগ করে। পরে তারা প্রথমে বগুড়া শহরের মাটিডালি মোড়ে দেখা করে। এরপর থেকেই তিথির জীবনের কালো অধ্যায় শুরু। প্রতারক শুভ প্রেমিক সেজে তিথির সাথে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে। তাকে বেড়ানোর কথা বলে বগুড়ার মহাস্থানগড় নিয়ে যায়। এভাবে ঘুরেফিরে সময় কাটাতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর প্রতারক শুভ তিথিকে নিয়ে যায় বগুড়া সদরের গোকুল এলাকার তার বাড়ির পাশের জঙ্গলের ভেতরে। ভন্ড শুভ সেখানে তিথিকে জোরর্পূবক ধর্ষণ করে। রক্তাক্ত তিথিকে নিয়ে শুভ অন্ধকারে আরো কিছুক্ষণ জঙ্গলের ভেতরে ঘুরাঘুরি করে। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিথি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় কথিত শুভ। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবস্থা বুঝতে পেরে তাকে সরকারি হাসপাতালে যেতে বললে লম্পট শুভ তিথিকে নিয়ে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের মাটিডালি মোড়ে রেখে পালিয়ে যায়। তখন রাত গভীর হয়ে গেছে।
মাটিডালি মোড়ের লোকজন রক্তাক্ত তিথিকে দেখে থানায় জানালে পুলিশ গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ পৃথিবীর কাছ থেকে এসব ঘটনা শুনে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে। পরে তার পিতা মামলা দায়ের করে। শজিমেক হাসপাতালের ভর্তি করে চলে তিথির চিকিৎসা।
বগুড়া জেলা পুলিশ এরপর শুরু করে অসাধ্য সাধনের কাজ। কারণ হাবাগোবা মেয়েটির বর্ণনা পরিষ্কার ছিলো না। প্রেমিক শুভর নামটিও ছিলো ছদ্মনাম। আর রাতে তাকে যে স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে সেই স্থানটিও মেয়েটি চিনতে পারছিলো না। মামলা রেকর্ড হবার পর তদন্তের দায়িত্ব পরে ফুলবাড়ি ফাঁড়ির এসআই শহীদুল ইসলামের ওপর। তবে ফুলবাড়ি ফাড়ির ইন্সপেক্টর সফিকুল, সদর থানার ওসি বদিউজ্জামানসহ একাধিক টিম ঘটনাটি নিয়ে কাজ করতে থাকে। মেয়েটি পুলিশের সাথে ঠিকমতো কথাও বলতে পারে না, জায়গার ব্যাপারেও সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারে না। পুলিশের কাছে ভরসা বলতে ছিলো লম্পট ছেলেটির ফোন নম্বর। কিন্তু ঘটনার পর থেকে সেটাও ছিলো বন্ধ। মেয়েটির কাছে ছেলেটা তার নাম বলেছিল শুভ। কিন্তু মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশনে শুভ নামে কেউ ছিলো না।
পরে অনেক কৌশল (সঙ্গত কারণে বর্ণনা করা হলো না) ব্যবহার করে কথিত শুভকে ধরা হয়। জানা যায়, তার নাম শুভ নয়। আসল নাম মাফিউল ইসলাম স্বপন (২৫)। সে বগুড়া সদর উপজেলার বাঘোপাড়া সুলতান পাড়ার জহুরুল ইসলামের ছেলে। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবার পর স্বপন পেশাদার অপরাধীদের মতো ঘটনা অস্বীকার করে। কারণ অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম ব্যবহার করে সে এই কুকর্ম করেছিল। কিন্তু পুলিশের কৌশল ও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশের কাছে সমস্ত ঘটনা স্বীকার করে। পরে সে ঘটনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, একটা হাবাগোবা কিশোরীর সর্বনাশের হো তাকে ধরতে পেরে কিছুটা ভালো লাগছে। খবর পেয়ে মেয়েটির বাবা দ্রুত বগুড়া চলে আসেন এবং মামলা দায়ের করেন। চিকিৎসার পর মেয়েটি কিছুটা সুস্থ হলে সে তার পিতার সাথে গাজীপুরে ফিরে আসে।