গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ্যাডভোকেট মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আমি যতটুকু পেরেছি, নাগরিক হিসেবে-মেয়র হিসেবে চেষ্টা করেছি। মেয়র ছাড়াও আমি একজন নাগরিক। আমি একজন মানুষ। আমি একজন মুসলমান। সে হিসেবে আমি করেছি। গাজীপুরে বিভিন্ন বিষয়ে চলমান বিতর্ক নিয়ে মুঠোফোনে খোলামেলা আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। এসময় গাজীপুর মহানগরীর নগর পিতা বলেন, মেয়র হিসেবে আমার বক্তব্য হচ্ছে, সরকার যে বিষয়ে যে সমস্ত লিখিত নির্দেশনা দিয়েছে, সেগুলি আমরা মেনে চলবো, সরকারের নির্দেশনা আমরা মানতে বাধ্য।
আর নাগরিক হিসেবে আমার বক্তব্য হচ্ছ, আমি একজন মানুষ, আমি একজন ভোটার হিসেবে আমার যতটুকু সামর্থ্য ছিল, আমার ব্যক্তিগত মেধা অর্থ যেটুকু ছিল সেটুকুই দিয়ে আমি যতটুকু পেরেছি আমি করেছি। এসময় মেয়র আরো বলেন, আমার নাগরিকরা যেন নিরাপদে বাঁচতে পারে, এ ব্যাপারে আমি সবার কাছে সহযোগিতা চাই। সরকার, রাষ্ট্র যে যেখানে আছে, তাদের কাছে আমার আবেদন, আমার নাগরিকরা যাতে নিরাপদে থাকতে পারে, তারা যাতে করোনাভাইরাস মুক্ত থাকে, তারা যেন ভালো থাকে সে জন্য আমি সকলের সহযোগিতা চাই।
সরকার সাধারণ ছুটি বাড়াচ্ছে, আবার গাজীপুরসহ বিভিন্ এলাকায় পোশাক কারখানা খুলে দিচ্ছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী, মাননীয় যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এবং জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবসহ আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, সাধারণ ছুটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ আগামী মে তারিখ পর্যন্ত পোশাক কারখানা বন্ধ থাকবে। এ নিয়ে সরকারে উর্ধ্বতন মহলে আলোচনা করা হবে। আমরা শহরে ৮০টি মাইক দিয়ে মাইকিং করলাম প্রচার-প্রচারণা করলাম। এই মিটিংয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, গাজীপুর মহানহগর পুলিশের কমিশনার, জেলার ডিসি সবাই ছিল, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কি লাভ হল? আমরা বললাম ৩ তারিখে পোশাক কারখানা খোলার জন্য। সেখানে বিজিএমইএ চিঠি দিয়ে ২৬ তারিখে গার্মেন্টস খুলে দিয়েছে। এখন কে কার কথা শোনে? এখানে আলোচনা কোথায় করবো-কারো সাথে কোন কিছুর সমন্বয় আছে? জেলার সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনার পর কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলো না।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, করোনার প্রাদর্ভাব ঠেকাতে সরকারের সাধারণ ছুটি, ঘরে থাকার কারণে কর্মহীন, অসহায় হয়ে পড়া মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য এ পর্যন্ত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মহানগরী বিভিন্ন এলাকায় ৮০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ২শ টন চাউল খাদ্য সহায়তা হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণকৃত চাউলের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের অর্থে প্রায় ১৮শ থেকে ১৯শ মেট্রিক টন চাউল এবং বাকিটা মেয়রের ব্যক্তিগত অর্থে চাউল ক্রয় করা হয়েছে। এই চাউলের সাথে অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য মিলিয়ে খাদ্য সামগ্রী ৮০ হাজার পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণকৃত খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে ছিল চাউল, আলু, ডাউল, তেল, লবণ, পেঁয়াজ ইত্যাদি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করেন, আপনি এই চাউল কাদেরকে দিয়েছেন? তখন যাতে আমি বলতে পারি, চাউল আমি কাদেরকে দিয়েছি, সে জন্য আমরা আইডি বা নাম পরিচয় লিপিবদ্ধ করি।
মেয়র আরো বলেন, চায়না থেকে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট বাবদ ২৫ কোটি টাকার সামগ্রী আমদানি করা হয়েছে। এসব সামগ্রী মেয়রের নিজস্ব টাকায় আনা হয় এবং গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও এলাকায় বিনামূল্যে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবহার করার জন্য এসব সামগ্রী যেমন পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, থার্মাল থার্মোমিটার ইত্যাদি বিতরণ করা হয়েছে।
মেয়র প্রশ্ন রেখে বলেন, গাজীপুরে হঠাৎ করে এভাবে শতশত পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কে কার সাথে আলোচনা করেছে? বিজিএমইএ এর উচিত ছিল, স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। এখন কি হচ্ছে? কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা করার পর লাখ লাখ শ্রমিক এলাকায় চলে এসেছে। দেখা গেছে, একটি কারখানা খুলেছে-অপরটি খোলেনি, আবার কেউ বেতন দিয়েছে-অন্য আরেকটি কারখানা বেতন দেয়নি। ফলে বন্ধ থাকা এবং বেতন না পাওয়া শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে। অনেক শ্রমিক আমার বাসার সামনে এসে রাস্তা অবরোধ করেছে। এখন এসব শ্রমিকদেরকে তো তাদের প্রশ্নের উত্তর আমাদের দিতে হয়। এখন তো এখানে কোন পোশাক কারখানা মালিক নেই। এখানে তারা থাকে না, ফলে স্থানীয় সমস্যাগুলি তারা না জেনে এভাবে পোশাক কারখানা খুলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, পোশাক কারখানার মালিকরা গাজীপুর সিটি করপোরেশন অথবা আমাদের কারো সাথে কোনো আলোচনা না করেই পোশাক কারখানাগুলো খুলে দিয়েছে। শ্রমিক আন্দোলনসহ সকল দায় আমাদের নিতে হয়, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হয়। সমস্যা সমাধানের সময় আমরা, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ, কিন্তু কে কি করবে এখানে এসব বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। শ্রমিকরা দাবি-দাওয়া নিয়ে আমার বাসার সামনে এসে বসে থাকে, আন্দোলন করে আমি তো কোন জবাব দিতে পারিনা। আমি কিছু জানি না-একথা বললে আমার দেশের নাগরিকরা সেটা কেন মানবে?
এসময় মেয়র বলেন, এখন আমি প্রশ্ন করি-যারা গার্মেন্টস খুলেছে, শ্রমিকদের সামলাবে তারা, সেটা না করে শ্রমিকরা আমার বাসার সামনে এসে কেন বসে থাকবে? বা কেন তারা সড়ক অবরোধ করছে এটার দায়িত্ব কে নিবে? তিনি বলেন, দেশের সকল গণমাধ্যম, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞগণ আজকে এই কারখানা খোলার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে, বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান প্রশ্ন করছে। কিন্তু কেউ কি আর কোন উত্তর দিচ্ছে?
এসময় গাজীপুরর নগরপিতা প্রশ্ন করেন- আগে মানুষ বাঁচবে, নাকি টাকা বাঁচবে, কোনটি আগে? এখানে (গাজীপুরে) যে লক্ষ লক্ষ মানুষ আছে, এই যে লক্ষ লক্ষ বাইরের শ্রমিক গাজীপুরে আসতেছে, বিভিন্ন কারখানার সুপারভাইজার-পিএম তারা ফোন করে করে শ্রমিকদেরকে কারখানায় নিয়ে আসতেছে, তাদেরকে বলা হচ্ছে কাজে যোগ না দিলে চাকরি থাকবেনা-এই অবস্থা। এদের নিরপাত্তা কে দিবে?
এ ব্যাপারে মেয়র বলেন, আমরা (গাজীপুর জেলা প্রশাসক গত ১১ এপ্রিল লকডাউন ঘোষণা করেন) যে লকডাউন ঘোষণা করেছিলাম, সেটি যদি আগামী ৫ মে তারিখ পর্যন্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারতাম, তাহলে বুঝা যেত, গাজীপুরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের কি অবস্থা। সাধারণ কোন বিষয় নিয়ে কথা বললে যদি বলা হয়, কারো বিপক্ষে চলে গেছে-তাহলে আমরা কি করতে পারি? এই জন্য বলি, সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে, সেটা মেনে চলেন, আমাদের এখানে কোন কথা নেই। আপনারা সরকার যা যা নির্দেশনা দিয়েছে, যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তা মেনে চলেন। এখানে আমার কোন বক্তব্য নেই।
মেয়র বলেন, আমি প্রথম লকডাউন চেয়েছি ২৫ শে মার্চ, পরে চেয়েছি ৪ মার্চ আর ঘোষণা করা হয়েছে ১১ মার্চ। পরবর্তীতে সাধারণ ছুটি ২৫ তারিখ থেকে বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই ১০ দিন যদি আমরা লকডাউন মেনে চলতাম, তাহলে করোনার বিষয়গুলি বুঝা যেত। আমরা জনপ্রতিনিধি, আমাদের কথা যদি কেউ না শোনে, তাহলে আমাদের কিছু করার থাকে না।
গাজীপুর সিটি মেয়র এ্যাডভোকেট মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি যতটুকু পেরেছি, নাগরিক হিসেবে-মেয়র হিসেবে চেষ্টা করেছি। মেয়র ছাড়াও আমি একজন নাগরিক। আমি একজন মানুষ। আমি একজন মুসলমান। সে হিসেবে আমি করেছি।
মেয়র হিসেবে আমার বক্তব্য হচ্ছে সরকার যে বিষয়ে যে সমস্ত লিখিত নির্দেশনা দিয়েছে সে গুলি আমরা মেনে চলবো সরকারের নির্দেশনা আমরা মানতে বাধ্য।
আর নাগরিক হিসেবে আমার বক্তব্য হচ্ছ, আমি একজন মানুষ, আমি একজন ভোটার হিসেবে আমার যতটুকু সামর্থ্য ছিল আমার ব্যক্তিগত মেধা অর্থ যেটুকু ছিল সেটুকুই আমি যতটুকু পেরেছি আমি করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে নগর পিতা বলেন, আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে, আমার নাগরিকরা যেন নিরাপদে বাঁচতে পারে-এ ব্যাপারে আমি সবার কাছে সহযোগিতা চাই। সরকার রাষ্ট্র যে যেখানে আছে তাদের কাছে আমার আবেদন, আমার নাগরিকরা যাতে নিরাপদে থাকে, করোনাভাইরাস মুক্ত থাকে, তারা যেন ভালো থাকে, আপনারা সকলে সে বিষয়ে সহযোগিতা করুন।