গণবাণী ডট কম:
বিষাদ সিন্ধু বইটিতে মুলত নবীর প্রানপ্রিয় দুই দৌহিত্র হযরত হাসান এবং হযরত হোসেনের করুন এবং মর্মান্তিক মৃতুর ঘটনা বর্ননা করেছেন লেখক মীর মোশাররফ হোসেন,এবং তা খুব আবেগ নিয়ে। প্রতিটি অধ্যায় পড়লে মনে হয় যেন হৃদয়টা ক্ষত হচ্ছে। এত সুন্দর লেখনী।
একদিন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স:) মসজিদে সাহাবাদের নিয়ে আলোচনা করছিলেন, তখন হঠাৎ করে উনার শরীর ঘর্মাক্ত হয়ে উঠলো এই লক্ষনটা হতো যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত জীব্রাইল (আ:) বার্তা নিয়ে নবীজির কাছে আসেন। আর এই লক্ষনের ব্যাপারটা সাহাবাদের তখন জানা হয়ে গিয়েছিলো। কিছুক্ষণ পর নবীজি স্বাভাবিক হলে, উনার মুখোমন্ডল চিন্তায়, মনোকষ্টে অন্য রকম হয়ে গিয়েছিল। তখন সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন ‘হে আল্লাহর নবী, জীব্রাইল এসে কি এমন বললেন যে আপনার মুখ এমন বিমর্ষ হয়ে গিয়েছে’?
নবীজি অনেকক্ষন কিছু বললেন না। তারপর পুনরায় জিজ্ঞেস করায় কিছুক্ষণ পর তিনি বললেন,
তোমাদের মধ্যে একজনের বংশধরের হাতে আমার বংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে’
এ কথা শুনে সকলে একযোগে বলে উঠেন
কোন সে ব্যক্তি, নাম বলুন হুজুর?’
নবীজি বলেন না।
সাহাবাদের অনেক মিনতির পর নবীজি বলেন ‘মাবিয়ার পুত্র এজিদ’
মাবিয়া তখনো অবিবাহিত। আর মাবিয়া ছিলেন নবীর খুব ভালো অনুসরণকারী এবং সাহাবিদের একজন।
মাবিয়া তৎক্ষনাৎ বলে উঠেন ‘আমি জীবিত থাকা কালীন বিয়ে করবোনা। নবীজি কান্নারত কন্ঠে বলেন, ‘মাবিয়া তুমি কি করে আল্লাহর লিখে দেয়া ভাগ্য খন্ডন করবে? যা হবে তা আল্লাহর ইচ্ছেতেই হবে।’
এবং নবীজির করে যাওয়া ভবিষৎ বানী এক সময় সত্যিতে পরিনত হয়।
একদিন নবীজির কাছে উনার দুই প্রান প্রিয় নাতি ‘হযরত হাসান (রা:) এবং হযরত হুসাইন (রা:) এসে নতুন জামার আবদার করলে নবীজি তাঁদের জিজ্ঞেস করেন কার কোন রঙের জামা পছন্দ?
জবাবে বড় ভাই হাসানের পছন্দ সবুজ রঙের জামা আর ছোট ভাই হুসাইনের লাল রঙের জামা পছন্দ বললেন।
তাঁদের পছন্দের কথা শুনে নবী কাঁদতে থাকেন। নবীজির মেয়ে, হাসান হোসেনের মা হযরত ফাতেমা রাঃ কে তিনি ব্যাথিত হৃদয় নিয়ে জানালেন যে হাসান মারা যাবে বিষ প্রয়োগে, এবং হোসেন প্রান হারাবে কারবালার ময়দানে।
মাবিয়া বিয়ে করতে চান না, কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছাকে কে খন্ডাতে পারে? তাই তার এমন এক দুরারোগ্য ব্যাধি হয়, যা বিয়ে না করলে ভালো হবেনা, সারবে না।
এমন কি এর জন্য মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। একপ্রকার বাধ্য হয়ে তিনি বিয়ে করলেন। তাঁর স্ত্রী হলেন নামে মাত্র। কারন তিনি তার থেকে অনেক বেশী বয়স্কা প্রায় বৃদ্ধা এক মহিলাকে বিয়ে করলেন, এবং ঐ মহিলা ছিলেন আবার সন্তান ধারনে অক্ষম।
সৃষ্টিকর্তার লীলা খেলা বোঝে কার সাধ্য? এত কিছুর পরেও এজিদ” জন্ম নিলো। তখন মাবিয়া ঠিক করলো বাচ্চা মেরে ফেলবেন। তলোয়ার হাতে যখন বাচ্চার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো মাবিয়া, তখন আল্লার রহমতে তার দিল নরম হয়ে যায়। একেতো সদ্য জন্মানো বাচ্চা, তার উপর বাচ্চাটা এত মায়া কাড়া চেহারা নিয়ে জন্মালো যে তিনি আর মারতে পারেন না।
তারপরও তাঁর মনে দুঃখ রয়ে গেলো। তিনি মনের দু:খে এবং আসন্ন ভয়ের কথা স্মরন করে এজিদকে নিয়ে দেশ ত্যাগ করে মক্কা থেকে দামেস্কের উদ্দেশ্যে চলে যান। দামেস্ক আবার হাসান হোসেনের পিতা হযরত আলী(রা:)র বিজিত নগর ছিলো।
এজিদ বড় হয় যুবকে পরিনত হয়। তার চোখে ভালো লেগে যায় জয়নব নামের রুপসীকে। এজিদ তাকে যেভাবেই হোক পেতে চায়। এজিদ নানা কৌশল করে। জয়নব থাকে বিবাহিত। তিনি ছিলেন অল্পে সন্তুষ্ট, এবং খোদা ভীরু মহিলা। কিন্তু তার স্বামীর ছিলো অর্থ লোভী। তাই এজিদ জয়নবের স্বামীকে লক্ষবস্তু করে জয়নবকে পেতে চায়।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত এজিদ কি পেয়েছিলো জয়নবকে? অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয় জয়নবকে ঘিরে।
নারী মন পেতে এজিদ কি কি কুকর্ম করে ছিলো, কি কি করুন লোমহর্ষক, ঘৃণ্য ঘটনার অবতারণা করেছিলো তা লেখক তাঁর লেখনী যাদুতে খুব সুন্দর ভাবে এবং সম্পূর্ণ আবেগ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন।
প্রতি পাতায় ছিলো টুইষ্ট।
হাসানেকে কি ভাবে বিষ দেয়া হয়, আদৌ কি বিষ দিয়েছিলো? এরকম আরো অনেক টুইস্ট ছিলো।
প্রতিটি যুদ্ধের লোহর্ষক বর্ননা, রাজ্য দখলের কাহিনী ঘটনা পড়ে মনে হয় উঁচু কোনো পাহাড়ে দাঁড়িয়ে সব ঘটনা দেখা যাচ্ছে।
প্রতিটি ক্ষণ চরিত্র গুলোর অসাধারণ গুণ, ক্ষমা করার শক্তি, ব্যবহার উপভোগ্য।
কত সুন্দর করে এসব মহত্ত্ব, গুন লেখক কতটা সুন্দর করে তুলে ধরেছেন তা না পড়লে কিছুই বুঝা যায়না।
কারবালা প্রান্তরে সেকি করুন কাকুতি মিনতি, যা পড়লে একজন কঠিন মানুষেরও চোখে পানি আসবেই।
বাংলা সাহিত্যের অমর এক সৃষ্টি এই বিষাদ সিন্ধু। ইতিহাস নির্ভর সত্য কাহিনীর নিয়ে উপন্যাস তৈরী করে লেখক তাঁর সাহিত্য মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।