মোঃ মিলন হোসেন
বিশ্বব্যাপী করোনার ভয়াবহতা বদলে দিয়েছে পুরো পৃথীবির স্বাভাবিক দৃশ্যপট।
থমকে গিয়েছে জনজীবন। প্রভাব পড়েছে শিশু- কিশোর থেকে শুরু করে যুবক-বৃদ্ধ
সকল বয়স, পেশার মানুষের জীবনে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ
রয়েছে সকল প্রকার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। সীমিত পরিসরে স্বল্পসংখ্যক
কর্মক্ষেত্র খোলা থাকলেও বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্র। লকডাউনের এই
কঠিন সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ নজর দিতে পরামর্শ দিচ্ছেন
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কোনো প্রতিষোধক আবিষ্কার না হওয়ায় করোনার জন্য
মানসিক মনোবলই সবচেয়ে কার্যকর প্রতিষোধক বলে জানিয়েছেন তারা।
মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে প্রয়োজন সুস্থ্য বিনোদন। অনির্দিষ্টকালের এই ছুটিতে
বাঙালি যেনো সেই বিনোদন ফিরে পেয়েছে পুরনো ঐতিহ্যে। ঘুড়ি উৎসবে মেতেছে
পুরো দেশ।লাল, নীল, হলুদ, সবুজসহ বাহারি রঙের ঘুড়িতে ছেয়ে যায় প্রতিদিনের
আকাশ। সাধারণ ঘুড়ি, চিলা , চং, বাক্স, সাপ, ব্যাঙ, মানুষ, তারা, হারিকেন,
ড্রাগন, মাছরাঙা এদের এক একটির নাম। শুধু দিনের আলোতেই নয় রাতের আকাশেও
দেখা যায় শত শত ‘আলোকিত’ ঘুড়ি। ঘুড়ির সাথে যুক্ত করা হচ্ছে নানা রঙের
বাতি। অনেকে আবার ঘুড়ি উড়ানোকে কাজে লাগিয়ে রোজগারের একটি মাধ্যম হিসেবে
বেছে নিয়েছেন। ঘুড়ি ভেদে এক একটি ২০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা।
রাতের আকাশের তারার সাথে মিশে যায় এক একটা ঘুড়ি যা দেখলে তারা এবং ঘুড়ির
মাঝে পার্থক্য করা যায় না। পূর্বে এমন দৃশ্য দেখা যেতো না। রাতের আকাশের
ঘুড়ি যেকাউকে মুগ্ধ করবে। লকডাউনে ঘুড়ি উড়ানো প্রকৃতিতে যোগ করেছে ভিন্ন
মাএা। শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি বড়রাও ঘুড়ি উড়ানোর প্রতি আগ্রহী হয়ে
পড়েছেন।
প্রায় ২,৮০০ বছর পূর্বে চীনে প্রথম ঘুড়ির উৎপত্তি ঘটেছে বলে ধারণা করা
হয়। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ, ভারতসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।ধারণা
করা হয় মোগল আমলে ঢাকার অভিজাত লোকজন বিনোদনের জন্য ঘুড়ি উড়াতো। কোনো
কোনো সূএ মতে, ১৭৪০-এর দশকে নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজিশ মুহাম্মদ খান এর আমলে
ঘুড়ি উড়ানো উৎসব ঐতিহ্যে পরিনত হয়। বাড়ির ছাদ, খোলা মাঠ বা উন্মুক্ত
স্থান থেকে আকাশে প্রচুর সংখ্যক ঘুড়ি উড়ানো হতো। বিলুপ্তপ্রায় এই
ঐতিহ্য করোনায় যেনো নতুন করে জন্ম নিল।
লেখক : শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।