গণবাণী ডট কম:
বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তি তারকা আর্জেন্টিনার ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনা আজ হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর।
বলা হচ্ছে বুয়েনাস আয়ার্সে তার বাসভবনে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। আর্জেন্টিনার সাবেক এই ফুটবল মিডফিল্ডার এবং ম্যানেজার ম্যারাডোনার মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে এ মাসের গোড়ার দিকে তার মস্তিষ্কে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছিল। ওই সময় তার মস্তিষ্ক থেকে রক্তপিন্ড অপসারণ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক। চিকিৎসা শেষে তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়াও পেয়েছিলেন। ছাড়া পাবার দুই সপ্তাহ পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন এই ফুটবল কিংবদন্তী।
সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই ফুটবলারের অধিনায়কত্বে আর্জেন্টিনা ১৯৮৬র ফুটবল বিশ্বকাপ জয় করে।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি তার বিখ্যাত ‘হাত দিয়ে গোল’টি করেন, যেটি ‘হ্যান্ড অফ গড’ নামে কিংবদন্তি গোল হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।
সামাজিক মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন “এই তারকার মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে”। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে: “আপনার আসন চিরকাল আমাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থলে থাকবে”।
ম্যারাডোনার কেরিয়ার:
মারাডোনাকে গত ৫০ বছরে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন বলে গণ্য করা হয়।
বিতর্ক থাকলেও অনেকেই তাকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে মনে করেন। ২০০২ সালে ফিফা অনলাইনের ভোটে ‘শতাব্দীর সেরা গোল’ হিসেবে নির্বাচিত হয় ১৯৮৬ সালের কোয়ার্টার ফাইনালে তার করা দ্বিতীয় গোলটি। যেখানে ইংল্যান্ডের ৫ জন ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষককে ধোঁকা দিয়ে গোলটি করেন তিনি। তার এই গোলটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এস্তাদিও আজেতেকা সামনে স্থাপন করা হয় আর্জেন্টিনাকে দুইবার বিশ্বকাপ এনে দেয়া ম্যারাডোনার ‘গোল অব দ্যা সেঞ্চুরি’র প্রতিমূর্তি।
তিনি বার্সেলোনা এবং নাপোলির মতো ক্লাবেও খেলেছেন। আর্জেন্টিনার হয়ে ৯১টি ম্যাচে তিনি ৩৪টি গোল করেন। চারটি বিশ্বকাপে তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেন।
১৯৯০ সালে আর্জেন্টিনা যখন ফাইনালে ওঠে তখন দলকে নেতৃত্ব দেন ম্যারাডোনা। ইতালিতে ওই খেলায় তাদের হারিয়ে দেয় পশ্চিম জার্মানি। এরপর ১৯৯৪ সালে তিনি আবার আমেরিকায় আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়কত্ব করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু অবৈধ মাদক পরীক্ষায় ফেল করার কারণে তাকে আর্জেন্টিনা ফিরে যেতে হয়।
তার জীবনের পরের দিকে ম্যারাডোনা কোকেন আসক্তি নিয়ে সমস্যায় ছিলেন এবং ১৯৯১ সালে তার শরীরের মাদকের উপস্থিতি ধরা পড়লে তাকে ১৫ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।
তার ৩৭তম জন্মদিনে ১৯৯৭ সালে তিনি পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেন। সেসময় তিনি আর্জেন্টিনার বড় দল বোকা জুনিয়ার্সে খেলছিলেন।
ম্যারাডোনা ২০০৮ সালে জাতীয় দলের কোচ নিযুক্ত হন। এবং ২০১০ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা জার্মানির কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যাবার পরে তিনি কোচের পদ থেকে অবসর নেন।
ক্যারিয়ার শেষভাগে অবশ্য বারবার বিতর্কে জড়িয়েছেন এই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ফুটবলার। যার শুরু নিজ ক্লাবের ট্রেনিংয়ে দেরি করে আসা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ৭০ হাজার ডলার জরিমানার মধ্য দিয়ে। এরপর একে একে মাদকাসক্তিসহ আরো বেশ কিছু অভিযোগ আসতে থাকে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও বিতর্কিত মন্তব্য, নিয়ম বহির্ভূত আচরণ এবং ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বারবার আলোচনায় উঠে এসেছেন এই শতাব্দী সেরা ফুটবলার। আলোচনা-সমালোচনা যাই হউক না কেনো, ভক্তদের হৃদয় কুঠরে চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবেন দিয়েগো ম্যারাডোনা।