নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপাসিয়া (গাজীপুর) :
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় আলোচিত রাজিব হত্যাকান্ডের ৭দিনের মাথায় মামলার রহস্য উদঘাটন ও মূল হোতাকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। সোমবার মূল হোতার জবানবন্ধী রেকর্ড করার জন্য গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতার আসামীর নাম মো. শাহীন ইসলাম (৩৪)। সে নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানাধীন মধ্য চালাকচর এলাকার ডাকাত শহীদুল্লাহর ছেলে।
নিহত রাজিব (৩২) কাপাসিয়া উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা সুভাশ ধরের ছেলে। গত ১৩ ডিসেম্বর সকালে কাপাসিয়া সদর ইউনিয়নের সাফাইশ্রী এলাকার শ্রী শ্রী শ্মশান কালী মন্দির ও শ্রী শ্রী শিব মন্দিরের পশ্চিম পাশের কলা বাগান থেকে রাজিব ধরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, শাহিন আগে তার পিতার সাথে ডাকাতি কাজে জড়িত ছিল। ২০০৯ সালের মে মাসে নরসিংদীর মনোহরদী থানায় দায়েরকৃত একটি ডাকাতি মামলার (নম্বর-৪) বিচারে ২০১৬ সালে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। এক বছর সাজা খাটার পর ২০১৭ সালে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হওয়ার পর থেকে সে কাপাসিয়া উপজেলাধীন সাফাইশ্রী এলাকায় তার নানা আব্দুল রশিদের বাড়িতে বসবাস করতো। তার মা কাপাসিয়া থানায় রান্না ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করে। সে সূত্রে শাহিনও থানায় পুলিশের সোর্স হিসাবে কাজ করতো।
রাজিব ধর ঢাকায় প্রাইভেটকার চালক হিসাবে কাজ করতো। কয়েকমাস আগে চাকরি থেকে বরখাস্তের পর কাপাসিয়া ফিরে এসে সাফাইশ্রী এলাকায় মায়ের সাথে ভাড়া বাসায় থাকতো। এসময় সে নেশায় জড়িয়ে পড়ে। নেশার সূত্রে শাহিনের সাথে রাজিবের সখ্যতা গড়ে ওঠে এবং এভাবে তারা হয়ে ওঠে এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। এলাকার আরো কয়েক যুবক মিলে তৈরী করে শক্তিশালী মাদকের সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের মধ্যে সম্প্রতি দুরত্ব তৈরী হলে রাজিব শাহিনের ছোট ভাই ওসমানের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। ওসমান ও রাজিব প্রতিনিয়ত এক সঙ্গে গাঁজা, ইয়াবা সেবনের পাশাপাশি নানা অপকর্ম শুরু করে। নিজের বন্ধু ছোট ভাইয়ের সাথে নেশা করে এবং সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ হাত ছাড়া হওয়ার বিষয়টি মানতে পারেনি শাহিন। এর জের ধরে অপর কতক সহযোগীর সাথে পরামর্শ করে রাজিবকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় শাহিন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১২ ডিসেম্বর রাতে নেশা করার কথা বলে উপজেলার সাফাইশ্রীর বাসা থেকে রাজিবকে ডেকে নিয়ে যায় শাহিন। পরে রাতে সাফাইশ্রী মন্দিরের পাশে নেশা শেষে বাড়ী ফেরার পথে কলা বাগানে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে রাজিবকে। পরদিন ১৩ ডিসেম্বর সকালে অজ্ঞাতনামা হিসাবে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।পরে স্বজনরা তার লাশ শনাক্ত করে।
লাশ উদ্ধারের পরদিন ১৪ ডিসেম্বর নিহত রাজিবের মা প্রতিভা রাণী ধর অজ্ঞাত লোকদের আসামি করে থানায় হত্যা মামলা (নম্বর- ১০) দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কাপাসিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আফজাল হোসাইন তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় রবিবার (২০ ডিসেম্বর) ভোর ৫টায় নরসিংদীর চরসিন্দুর বাজার থেকে শাহিনকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহীন হত্যার দায় স্বীকার ও হত্যার কারণ পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।
এ বিষয়ে আফজাল হোসাইন বলেন, এলকার আধিপত্য ও ছোট ভাইয়ের সাথে নেশা করার বিষয়টি নিয়ে দ্বন্ধের জের ধরে খুনের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহিন দোষ স্বীকার করেছে। শাহিনের দেয়া তথ্য মতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আলামত সংগ্রহের চেষ্টা করেছি।কিন্তু তার দেখানো মতে শীতলক্ষা নদীতে ডুবুরী নামিয়েও হত্যায় ব্যবহৃত দা ও আলামত উদ্ধার করা যায়নি। তবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সোমবার দুপুরে ১৬৪ ধারায় শাহিনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য গাজীপুরের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়েছে।