গণবাণী ডট কম:
গাজায় ইসরায়েল এমন একটি বহুতল ভবন বিমান হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে-যেখানে আল-জাজিরা টিভি ও এপি’র মত বিদেশি সংবাদমাধ্যমের অফিস ছিল।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। এতে বেশকিছু অফিস ও আবাসিক ফ্ল্যাট ছিল।
আক্রমণের আগে ওই ভবনের মালিকের কাছে আগাম সতর্কবাণী দেয় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। বলা হয়, জালা টাওয়ার নামে বহুতল ভবনটিতে আক্রমণ চালানো হবে।
ভবন খালি করার জন্য মাত্র এক ঘন্টা সময় দেয়া হয়। অতিরিক্ত ১০ মিনিট চেয়ে একজন ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে বার বার অনুরোধ করেন মালিক জাওয়াদ মেহেদি - কিন্তু কর্মকর্তাটি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এরপর ভবনটি থেকে সব লোকজনকে বের করে নেয়া হয়। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কেউ হতাহত হবার খবর পাওয়া যায়নি।
আল-জাজিরার সংবাদদাতা সাফওয়াত আল-কাহলুত বলেন, তারা এই ভবনটি থেকে বহু অনুষ্ঠান প্রচার করেছেন। কিন্তু মাত্র দুই সেকেণ্ডে এটিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে।
ভবনটি ধ্বংসের দৃশ্য সরাসরি প্রচার করে আল-জাজিরা। তাদের উপস্থাপক আবেগপূর্ণ ভাষায় বলেন, ‘তাদের চ্যানেলকে চুপ করানো যাবেনা।’
বার্তা সংস্থা এপি-র প্রধান নির্বাহী গ্যারি প্রুইট এক বার্তায় বলেছেন, এ আক্রমণে তারা স্তম্ভিত এবং আতংকিত হয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ইয়েন সাকি এক বার্তায় বলেছেন, এ নিয়ে ইসরায়েলের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং সাংবাদিক ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের বলা হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা এবং ফিলিস্তিনি হামাস গোষ্ঠীর পাল্টা রকেট নিক্ষেপ আজও অব্যাহত ছিল।
শনিবার সবশেষ খবরে গাযায় অন্তত ১৩ জন নিহত হবার কথা জানা যায়, এছাড়া বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছে বলেও জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে ১০ জন ছিল একটি যৌথ পরিবারের, এবং ৮ জন ছিল শিশু। এর আগে কর্মকর্তারা বলেন, গাযায় একটি শরণার্থী শিবিরের ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলায় দুটি পরিবারের সাত জন নিহত হয়েছে।
বলা হয়, ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়া পাঁচ মাস বয়সী একটি শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, এবং সে ছাড়া ওই পরিবারের আর কেউ বেঁচে নেই।
ইসরায়েলি বিমান হামলা ও বোমাবর্ষণের জবাবে ফিলিস্তিনি হামাস গোষ্ঠী দক্ষিণ ইসরায়েলে আরো অন্তত ২০০টি রকেট নিক্ষেপ করেছে।
রকেটের আঘাতে তেলআবিব শহরের রামাত গান উপশহরে এক ব্যক্তি নিহত হয়। ইসরায়েলের বিরশেবা শহরে গাযা থেকে নিক্ষিপ্ত ফিলিস্তিনি রকেট হামলায় আহত ১৯ জনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বিরশেবা ও এ্যাশদদ এই দুই শহরেই বেশ কিছু ভবনের ওপর রকেট আঘাত হেনেছে।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা লড়াইয়ে ফিলিস্তিনি এলাকায় এ পর্যন্ত ১৩৯ জন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলে নিহত হয়েছে ৯ জন।
গত সোমবার থেকে এই সংঘাতের কারণে গাযার বাসিন্দা প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন।
গত ছ’দিন ধরে চলতে থাকা ফিলিস্তিনি-ইসরায়েল সংঘাাত থামানোর চেষ্টায় একজন মার্কিন দূত হাদি আমর ইসরায়েল সফরে এসেছেন।
এই সফরের সময় তিনি ইসরায়েলি, ফিলিস্তিনি ও জাতিসংঘে কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবেন।
শনিবার দিনটি হচ্ছে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনির ঘরবাড়ি হারানোর বার্ষিকী-এবং এ দিনটি ফিলিস্তিনিরা ‘আল-নাকবা’ বা মহাবিপর্যয়ের দিন হিসেবে স্মরণ করেন।
গত কিছু দিন ধরে ফিলিস্তিনি প্রাণহানি হচ্ছিল মূলত গাযায় কিন্তু শুক্রবার পশ্চিম তীরেও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে ফিলিস্তিনিদের সংঘর্ষে ১১ জন নিহত হন।
ইউরোপের বিভিন্ন শহরে ইসরায়েল-বিরোধী বিক্ষোভ
ওদিকে করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ অমান্য করে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকা বহন করেন এবং ইসরায়েল-বিরোধী স্লোগান দেন।
তারা ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হামলাকে সমর্থনের অভিযোগ করেন।
লন্ডনেও ইসরায়েলি দূতাবাস লক্ষ্য করে মিছিলে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেন।
স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের কেন্দ্রস্থলে উপস্থিত কয়েক হাজার মানুষ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ করেন। জার্মানির বার্লিন শহরেও বিক্ষোভ হয়েছে। খবর : বিবিসি।