গণবাণী ডট কম:
গাজায় ইসরাইলী হামলা শুরু ১১ দিনের মাথায় আজ শুক্রবার থেকে মধ্যপ্রাচ্যের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের গাজায় যুদ্ধবিরতী কার্যকর হলো। কার্যকর হওয়া এই যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে গাজায় মুলত ইসরাইলী সহিংসতার অবসান হলো, যাতে নিরপরাধ ৫৬ জন শিশুসহ অন্তত ২৪০ জন মানুষ মারা গেছেন এবং যাদের বেশির ভাগই গাজার বাসিন্দা।
যুদ্ধবিরতি শুরুর পর পরই ফিলিস্তিনিরা গাজায় রাস্তায় নেমে আসে এবং ‘আল্লাহ মহান’ ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ’ এসব শ্লোগান দিতে থাকে।
যুদ্ধবিরতীর পর ইসরায়েল ও হামাস-দু পক্ষই এবারের সংঘাতে তাদের জয় দাবি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতি উন্নতির জন্য সত্যিকার সুযোগ এনে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবারও গাজার উত্তরে হামাস স্থাপনাগুলোতে অন্তত একশ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল এবং জবাবে রকেট ছুঁড়েছে হামাস। উভয় পক্ষের মধ্যে গত ১০ই মে লড়াই শুরু হয়েছিলো।
অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলার পর আল আকসা মসজিদের প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ শুরু হয়। এই এলাকাটি মুসলিম ও ইহুদিদের কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত।
সেখান থেকে ইসরায়েলি সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য সতর্ক করে দিয়ে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস রকেট ছুঁড়তে শুরু করে। এর জবাবে গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
ইসরায়েল বলেছে, অন্তত একশ যোদ্ধা গাযায় নিহত হয়েছে। তবে, হামাস অবশ্য তার যোদ্ধাদের ক্ষয়ক্ষতির কোন তথ্য প্রকাশ করেনি।
আর ইসরায়েলে দুটি শিশুসহ ১২জন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের দাবি গাজা থেকে তার ভূখণ্ড লক্ষ্য করে অন্তত চার হাজার রকেট ছুড়েছে হামাস।
হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে এ সহিংসতায় গাযায় প্রায় একশ নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২৩২ জন নিহত হয়েছে ।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে দুই পক্ষ যা বলছে :
ইসরায়েল বলছে তারা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছে সর্বসম্মতভাবেই। আর নজিরবিহীন সামরিক সাফল্য দাবি করে টুইট করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
অন্যদিকে হামাসের একজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছে, ইসরায়েল যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে, সেটি ফিলিস্তিনের মানুষের কাছে জয়ের মতো এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু’র একটি পরাজয়।
গাজার মসজিদগুলোতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধ জয়ের ঘোষণা দেয়া হচ্ছে।
তবে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক হামাস কাউন্সিলের বাসেম নায়েম বৃটিশ গণমাধ্যম বিবিসির কাছে এ যুদ্ধবিরতি কতটা স্থায়ী হয় তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
“ফিলিস্তিনের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত না করে বা ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ না করে এ যুদ্ধবিরতি হবে ভঙ্গুর,” বলছিলেন তিনি।
ফিলিস্তিনিদের বিভক্ত করার কৌশল ব্যর্থ :
ইসরায়েলের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আকিভা এলদার বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের বিভক্ত করার জন্য বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকারের কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
আকিভা বলান, ‘আমি মনে করি গাজায় ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়কে বিভক্ত করতে যে কৌশল ইসরায়েল নিয়েছিল তা বহু বছর পর প্রথমবারের মতো ব্যর্থ হয়েছে।’ এই যুদ্ধবিরতির কারণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার পার্টনারদের কাছ থেকে সমর্থন হারাতে পারেন। কেননা তারা এই যুদ্ধবিরতিতে খুবই অসন্তুষ্ট।