গণবাণী ডট কম:
দেশে মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে সরকার সোমবার (২৮শে জুন) থেকে আবার সাতদিনের জন্য সব কিছু বন্ধ (লকডাউন) রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
এর আগে, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ১৪ দিনের সম্পূর্ণ শাট ডাউন দেয়ার সুপারিশ করেছিল।
সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এ সময় জরুরি পরিষেবা ছাড়া সকল সরকারি বেসরকারি অফিস, আদালত বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী ব্যতীত সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। শুধু এ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। জরুরি কারণ ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউ বের হতে পারবে না বলে জানানো হয়েছে। গণমাধ্যম এর আওতাবহির্ভূত থাকবে।
ঝুঁকিতে ৪০টি জেলা :
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের বিস্তারের মুখে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোসহ ৪০টি জেলা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলায় এলাকা ভিত্তিক লক ডাউন রয়েছে। রাজধানী ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করতে চারপাশের ৭ জেলায়ও লক ডাউন চলছে।
এখন জাতীয় পরামর্শক কমিটির সম্পূর্ণ শাট ডাউন দেয়ার সুপারিশের ভিত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে সারাদেশে আবার সবকিছু বন্ধ করে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু লক ডাউন বা কঠোর লক ডাউন-এমন বিভিন্ন শব্দের ব্যবহার করেও সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় মানুষকে ঘরে রাখা যায়নি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
নতুন বিধিনিষেধের কথা কেন ভাবা হচ্ছে?
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অবশ্য বলেছেন, শাট ডাউন বা লকডাউন শব্দের ব্যবহার না করে এবার বিধি নিষেধ পুরোপুরি কার্যকর করার চেষ্টা তাদের থাকবে। “আসলে শাট ডাউন বা লক ডাউন-এগুলো বিষয় না। আমরা বিধিনিষেধ বলছি এটাকে আমরা কঠোর বিধিনিষেধই বলবো।”
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, “সরকার ইতিমধ্যেই চিন্তাভাবনা করছে যে, এরকম কিছু একটা করতে হবে, যাতে করে আমরা সংক্রমণের এই চেইনটা ভাঙতে পারি, করোনা সংক্রমণ নিম্নগামী করতে পারি। ”সেজন্য বিধি নিষেধ আমাদের দিতে হবে। সরকার বিষয়টা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে এবং আমাদের একটা প্রস্তুতিও আছে।” “অল্প সময়ের মধ্যেই কঠোর বিধিনিষেধের একটি ঘোষণা সরকার থেকে দেয়া হবে” বলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
কেন ‘শাট ডাউন’ এর সুপারিশ?
সরকারের সর্বোচ্চ জাতীয় কারিগরি কমিটির পরামর্শক কমিটির সুপারিশে গোটা দেশে সবকিছু বন্ধ করে ‘সম্পূর্ণ শাট ডাউন’ দিতে বলা হয়েছে।
চলমান বিধিনিষেধ এবং বিভিন্ন জেলায় এলাকাভিত্তিক লক ডাউন থাকার পরও কেন এমন সুপারিশ করা হয়েছে-এই প্রশ্নে ঐ কমিটির প্রধান অধ্যাপক মো: শহীদুল্লাহ বলেছেন, বিপর্যয় এড়ানোর জন্য তারা কার্যকর একটা পদক্ষেপ চাইছেন।
“এখন যে লক ডাউনটা চলছে, তাতে অফিস আদালত খোলা, গণ পরিবহণ খোলা, দোকানপাট খোলা-তার ফলে এই লক ডাউন দিলেও আমরা দেখছি যে, লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তাঘাটে যাচ্ছে, অফিসে যাচ্ছে। তাতে যে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল সেটা কিন্তু আমরা পাচ্ছি না।”
“লক ডাউন আমরা এক সপ্তাহ করে করে বাড়িয়েই যাচ্ছে। যেখানে করোনা কমার কথা। কিন্তু সংক্রমণ কমে নাই, স্থিতি অবস্থাতেও নাই। এটা আরও বাড়ছে” বলেন অধ্যাপক শহীদুল্লাহ।
“যদি এভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে ঠেকবো বা আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা দিয়ে তা মোকাবেলা করতে পারবো কিনা-এটা অনেকের মধ্যে আশংকা রয়ে গেছে,” তিনি বলেন।
”সেজন্যে জাতীয় কারিগরি কমিটি শাট ডাউনের কথা বলেছে।”
জীবিকার প্রশ্ন :
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শাট ডাউন বা বিধিনিষেধ যাই বলা হোক, তা বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দরিদ্র বা নিম্ন আয়ের মানুষসহ একটা বড় জনগোষ্ঠীর খাবারের যোগান নিশ্চিত করা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড: মাহফুজা রিফাত বলেছেন, বিধিনিষেধ যথাযথভাবে কার্যকর করা সম্ভব না হলে এর মেয়াদ যখন বাড়তে থাকবে, সেটা নতুন সংকট তৈরি করবে।
“নির্ধারিত সময়ে বিধিনিষেধ কার্যকর করা না হলে অনেক সময় ধরে চলতে থাকবে। তাতে অর্থনৈতিক বা জীবিকার প্রশ্নে মানুষ বিধি নিষেধ মানতে চায় না।”
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন দাবি করেছেন, এবার বিধিনিষেধ কার্যকর করার সমস্যা বা বাধাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করা হচ্ছে। “যে যে কারণে মানুষকে বাইরে আসতে হয়, সে বিষয়গুলোও আমাদের বিবেচনার মধ্যে আছে। অফিস, আদালত এবং গণ পরিবহণ সহ সেই জায়গুলো বন্ধ রাখা হবে” বলেন মি: হোসেন।
আবারো গার্মেন্টস খোলা থাকবে?
গত বছরের মার্চে সংক্রমণ শুরুর পর সাধারণ ছুটি দিয়ে অফিস আদালত এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে শিল্পকারখানাও বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু তখন এক পর্যায়ে গার্মেন্টস মালিকদের দাবির মুখে এই খাতের কারখানা খুলে দেয়া হয়েছিল। এরপর বিভিন্ন সময় বিধিনিষেধ এলেও গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ করা হয়নি।
এবার কী করা হবে- সে প্রশ্ন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বক্তব্যে গার্মেন্টস খোলা রাখার পক্ষেই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
“অর্থনৈতিক দিক থেকে যাতে বড় ক্ষতি না হয়, সেটাও সরকার বিবেচনায় রাখছে। রপ্তানির যে বিষয় আছে, তা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে” বলেন ফরহাদ হোসেন।
“মানুষকে ঘরে রাখতে হলে প্রথম শর্তই হচ্ছে, দিনের কাজের ওপর নির্ভরশীল বা একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা দেয়া।
”সে ব্যাপারে দেশের প্রতিটি এলাকায় আমাদের প্রস্তুতি আছে। যাতে তাদের কোন কষ্ট না পেতে হয়,” তিনি বলেন।
এদিকে, ভ্যাকসিন দেয়ার কার্যক্রম পুরোদমে সহসাই শুরু করা যাবে - এমন কোন ইঙ্গিত দিতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ।
সেই প্রেক্ষাপটে সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে মানুষকে ঘরে রাখা বা স্বাস্থ্য বিধি মানানো ছাড়া বিকল্প দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তবে, এনিয়ে সরকার যত কঠোর অবস্থানের কথাই বলুক না কেন-তার বাস্তবায়ন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ রয়েছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আপাতত সাত দিনের জন্য কঠোর এই বিধিনিষেধ পালন করা হবে। পরে প্রয়োজন হলে আরও বাড়ানো হবে। তিনি বলেন এবার এই সিদ্ধান্ত কঠোর ভাবে মানার জন্য পুলিশ থাকবে, বিজিবি থাকবে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীও থাকতে পারে ।
এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত আদেশ আগামীকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা হবে।
খবর: বিবিসি ও অন্যান্য।