নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপাসিয়া (গাজীপুর):
চলমান লকডাউনের মধ্যে দেশের সবর্ত্রই চলছে পুলিশের কড়া নজরদারি। তাই নিরাপদ মনে করে ৫ জুলাই (সোমবার) রাতে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ভাকোয়াদী গ্রামের ফাইজ উদ্দিন গোয়াল ঘরে ৪টি গরু রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু বিধিবাম, চোরেরা গৃহস্তের গোয়াল ঘর ফাঁকা করে চারটি গরু নিয়ে পগারপা।
কথায় আছে ১০দিন চোরের একদিন গৃহস্তের। চার গরু চুরির পরের কাহিনী আরো রোমাঞ্চকর।
অতি চালাক চোরেরা গরু চুরি করে একটি প্রাইভেট কারে করে নিয়ে পালিয়ে যায়।
পালানোর পথে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গীর গাজীপুরা বাশপট্টি এলাকায় পৌছালে সোমবার ভোর রাতে টহল পুলিশের চেক পোস্টের সামনে পুলিশ প্রাইভেটকারটিকে থামার সংকেত দেয়। কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে চোরেরা প্রাইভেটকারের গতি বাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু হঠাৎ গতি বৃদ্ধির কারণে প্রাইভেটকারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকের ধাক্কা খেয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। এসময় চোরেরা গরুভরর্তি প্রাইভেটকারটি ফেলে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ কাছে গিয়ে দেখে প্রাইভেটকারের পেছনের ডালার ভিতর চারটি গরু। এদেখে পুলিশের চক্ষু চড়ক গাছ। একটি প্রাইভেটকারের পেছনের ডালার ভিতর চারটি জলজ্যন্ত ৪টি গরু, অবিশ্বাস্য বটে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ জানান, ৫ জুলাই ভোরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরা বাশপট্টি চেকপোস্ট পার হওয়ার সময় একটি প্রাইভেটকারকে থামার সংকেত দেয় পুলিশ। কিন্তু গাড়ি না থামিয়ে চালক দ্রুত পালানোর চেষ্টা করেন। তখন সড়ক বিভাজকের সঙ্গে গাড়িটি ধাক্কা খায়। পরে পুলিশের ভয়ে প্রাইভেটকারে থাকা দুই ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যায়। চোরে পালিয়ে যাওয়ার পরে তল্লাশি চালিয়ে প্রাইভেটকারটি থেকে চারটি গরু উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু দুর্ঘটনায় চারটি গরুর মধ্যে একটি গরু মারা গেছে। বাকি তিনটি গরুর মধ্যে একটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে জবাই করা হয়। এবং প্রাইভেটকারসহ বাকী দুটি গরু জব্দ করে থানায় নেওয়া হয়।
চার গরু চুরির পরের কাহিনী এখানে শেষ হলে ভলোই হতো। কিন্তু ঘটনা এখান থেকেই শুরু।
পরে মরা গরু নিয়ে অদ্ভুত কাণ্ড ঘটেছে এরশাদ নগর ওয়ান ব্যাংক শাখার পেছনে। টঙ্গীর গাজীপুরা বাশপট্টি এলাকায় ফেলে রাখা মরা গরু কুড়িয়ে নিয়ে সেখানে সেই মরা গরুর গোস্ত বিক্রি করার সময় জনতা হাতেনাতে মো. দুলাল (৪০) ও আহম্মদ উল্লাহ (৪৫) নামে দুইজনকে আটক পুলিশের হাতে তুলে দেন। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম সোহরাব হোসেন ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচার করে তাদের এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। দুলালের বাড়ি চাঁদপুরের ছেঙ্গারচড়া থানার কলাকান্দা এলাকায়, বাবার নাম আদম আলী। আহম্মদ বরিশালের হিজলা থানার মেমাইন্যা এলাকার আব্দুল জব্বারের ছেলে।
কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আলম চাদ জানান, কাপাসিয়ার চাদপুর থেকে গরু চুরির ঘটনায় চার গরুর মালিক মো. ফাইজুদ্দিন গরুর বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানা একটি (নং ৫) মামলা দায়ের করেছেন। পরে আমরা টঙ্গীর ঘটনা জানতে পারি। আমরা উদ্ধার হওয়া প্রাইভেটকারের নাম্বার ধরে বিআরটিএ থেকে মালিকের নাম জেনে তার কাছে যাই। তিনি এবং পরে আরো ১০ জন প্রাইভেটকারের মালিকানা বদল করেন। পরে আমরা সর্বশেষ ব্যক্তির কাছে গিয়ে ঘটনার দিন কারা প্রাইভেটকারটি ব্যবহার করেছে তার তথ্য পাই। এভাবে তথ্য সংগ্রহ করে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা ঘটনার সাথে জড়িত আন্তঃ জেলা গরু চোর চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি।
গ্রেফতারকৃতরা হলো হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার সুলতানপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে মোঃ মামুন মিয়া (৩৭), একই জেলার শায়েস্তাগঞ্জ থানার বিরামচর গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে মোঃ শাহ আলম শাহ (৩৩) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা বেহাই গ্রামের চান্দু মিয়ার ছেলে শামসুল ইসলাম (৩৬)।
তিনি আরো বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদেরকে গত শনিবার রাতে ঢাকা, আশুলিয়া, টঙ্গী-জয়দেবপুর চৌরাস্তা ও শ্রীপুর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। বিভিন্ন থানায় মামুনের নামে ১০টি শাহ আলমের নামে ৪টি ও শামসুল হকের নামে ৫টি মামলা রয়েছে। তারা আন্তঃজেলা গরু চোরের সদস্য। গতকাল তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।