গণবাণী ডট কম :
গাজীপুর মহানগরীর লক্ষ্মীপুরা (তিনসড়ক) এলাকার স্টাইল ক্র্যাফ্ট পোশাক কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা আজ রবিবারও প্রতিশ্রুত বকেয়া বেতন ভাতা ও ঈদ বোনাস না পেয়ে পঞ্চম দিনের মতো মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। তারা সকাল থেকে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করার সময় ঢাকা-গাজীপুর-জয়দেবপুর মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে দুপুরের পর হঠাৎ আন্দোলনকারীরা চান্দনা চৌরাস্তার দিকে মিছিল নিয়ে যাবার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। তবে, এতে কেউ হতাহত হয়নি।
আর আগে গত মঙ্গল, বুধ বৃহস্পতি ও শনিবার একই দাবী নিয়ে এই কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ও শ্রমিকরা সড়কে নেমে এলে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় প্রতিদিন বিকালে তারা ঘরে ফিরে যায়। সর্বশেষ রবিবার তারা প্রশাসনের আলোচনার বদলে টিয়ারশেল পেল।
আন্দোলনকারীরা জানায়, গাজীপুর মহানগরের তিনসড়ক এলাকার স্টাইল ক্র্যাফ্ট পোশাক কারখানায় প্রায় সাড়ে ৭শ’কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ মাসিক বেতন ও বোনাস সঠিক সময়ে পরিশোধ করে না। বিভিন্ন সময়ে পরিশোধের সময় নির্ধারণ করা হলেও তারা তা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এভাবে পর্যায়ক্রমে স্টাফদের (কর্মকর্তা-কর্মচারীরা) চলতি বছরের মার্চ, মে ও জুন এবং সেপ্টেম্বর মাসের পূর্ণ বেতন ভাতা ও গত দুই বছরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর, ২০২০ সালের মার্চ ও আগস্ট মাসের শতকরা ৫০ ভাগ, অক্টোবর মাসের ৩৫ ভাগ, নভেম্বর মাসের ১৫ ভাগ বেতন পাওনা রয়েছে। এ ছাড়াও কারখানার কর্মচারীরা ইনক্রিমেন্টসহ তাদের চার বছরের বাৎসরিক ছুটির ও ২ বছরের ঈদ বোনাসের টাকা পাওনা রয়েছে। তারা বেশ কিছুদিন ধরে এসব পাওনা পরিশোধ করার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল। কারখানা কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধের একাধিকবার তারিখ ঘোষণা করলেও তা পরিশোধ করেনি।
শ্রমিকদের অভিযোগ, প্রতি মাসেই তাদের বেতন ভাতার জন্য আন্দোলন করতে হয়। শ্রমিকেরা আন্দোলন করলে তাঁদের বেতন পরিশোধ করা হয়। গত রোজার ঈদের আগেও বকেয়া বেতন ভাতার জন্য শ্রমিকদের আন্দোলন করতে হয়। পরে গাজীপুরের সিটি মেয়র ও জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন ভাতা পেলেও স্টাফদের বকেয়া থেকে যায়।
এসব আদায়ের লক্ষে গত মঙ্গলবার থেকে শ্রমিকরা ঢাকা-চান্দনা-জয়দেবপুর মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে। গত ৪দিন আন্দোলনকারীরা কারখানার সামনে সড়কে সীমাবদ্ধ থাকলেও আজকে রবিবার তারা মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ কঠোর অবস্থান নেয়। এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এবং সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এসময় আশপাশের এক আতংকজনক অবস্থা সৃষ্টি হয়। শ্রমিকরা ভয়ে দিক্বিদিক ছুটোছুটি করে পালিয়ে যায়।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মো: জাকির হাসান জানান, দাবী পুরণ না হওয়ায় আজও কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন শুরু করেছে। এক পর্যায়ে তারা মহাসড়কে মিছিল করার চেষ্টা করলে মৃদু শক্তি প্রয়োগ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, ঢাকায় বিজিএমইএর মাধ্যমে টাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আশা করছি খুব শীঘ্রেই এ সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরী জানান, আজও শ্রমিকরা দাবী পুরণ না হওয়ায় সড়কে অবস্থান নেয়। পরে শ্রমিকরা মিছিল নিয়ে চান্দনার দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এসময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেণেড ব্যবহার করে। আমরা মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা ককরছি। মালিককে পাওয়া যায়নি। তবে, তার একজন প্রতিনিধির সাথে আমাদের কথা হয়েছে। টাকা কিছু টাকার ব্যবস্থা করেছেন। উক্ত টাকা দিয়ে চলতি মাসের বেতন-ভাতা প্রদান করা হতে পারে। বকেয়া পাওনাদি নিয়ে আলোচনা চলছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য স্টাইল ক্র্যাফ্ট পোশাক কারখানায় মালিক সামস আলমাস রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।