গণবাণী ডট কম:
মাতৃমৃত্যু মুক্ত কাপাসিয়া মডেল’ এর আদলে আয়না-গয়না কার্যক্রম পরিচালনা করে জন প্রশাসন পদক-২০২০ পেয়েছেন জেলার দুই ও কাপাসিয়া উপজেলার তিন কর্মকর্তা। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কার্যক্রম উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রবর্তিত এ পুরস্কার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মঙ্গলবার সকালে পদক পাওয়া কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
মাতৃমৃত্যু শুন্য কোটা অর্জনে ‘মাতৃমৃত্যু মুক্ত কাপাসিয়া মডেল’ কার্যক্রমের জন্য দলগতভাবে জেলার জেলা প্রশাসকসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে ‘জনপ্রশাসন পদক ২০২০’ প্রদান করা হয়।
পদকপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ হলেন, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম, কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ ইসমত আরা, গাজীপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা লাজু শামসাদ, কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ আব্দুস সালাম সরকার ও কাপাসিয়া পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রহিম।
পদক প্রদান অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সভাপতিত্ব করেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পদক প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
কাপাসিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে একটি সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েদের প্রসব পূর্ব ও প্রসব পরবর্তী সেবা প্রদান করে উপজেলায় গত কয়েক বছর মাতৃমৃত্যু হার শুন্য লক্ষ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। মাতৃমৃত্যু শূন্য কোটায় এনে সারাদেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কাপাসিয়া উপজেলা। কাপাসিয়ায় গত তিন বছরে প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যু শূন্য। প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যু কমাতে কাপাসিয়া মডেল বাস্তবায়নে গর্ভবতী মায়েদের ঝুঁকি, বয়সসহ ২৭ ধরণের তথ্য নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে তথ্যভান্ডার ( ডেটাবেইস সফটওয়্যার), যা ‘গর্ভবতীর আয়না’ নামে পরিচিত। এর পাশাপাশি আছে ‘গর্ভবতীর গয়না’ নামের একটি স্বাস্থ্য নির্দেশিকা। ‘গর্ভবতীর আয়না’ ও ‘গর্ভবতীর গয়না’র সমন্বয়ে চলছে মাতৃমৃত্যুমুক্ত এই কার্যক্রম। দরিদ্র গর্ভবতীর চিকিৎসা সহায়তার জন্য “মানবিক সহায়তা তহবিল” নামে একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। বিনামূল্যে রক্তের গ্রæপ পরীক্ষা, প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রদানসহ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে প্রতি ৬ মাস অন্তর ইউনিয়ন ভিত্তিক ‘গর্ভবতী মা সমাবেশ’ অয়োজন করা হয়।
জানা গেছে, মাতৃমৃত্যু কমাতে কাপাসিয়া মডেলকে আদর্শ ধরে দেশের ১০০টি উপজেলায় তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশ্বমঞ্চেও গুরুত্ব পাচ্ছে এই মডেল। জনসংখ্যা ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সর্বোত্তম অনুশীলন ( বেস্ট প্র্যাকটিস) হিসেবে এই মডেল জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) মাধ্যমে বিশ্বের ২৭টি দেশে প্রদর্শনের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, গত ২০১৭ সালে কাপাসিয়ায় ৮ জন গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু হয়েছিল। তারপর একজন মাও যাতে প্রসবকালীন কোন জটিলতায় মারা না যায় সে লক্ষে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে মাতৃমৃত্যুমুক্ত কাপাসিয়া গড়ার কার্যক্রম শুরু হয়। কর্মসূচি চালুর বছর ২০১৮ সালে মাতৃমৃত্যু নেমে আসে ৪ জনে। ওই বছর গর্ভবতী ছিলেন ৬ হাজার ৩০০ জন। ২০১৯ সালে একজন গর্ভবতী মা মারা যান। সে বছর গর্ভবতী মা ছিলেন ৬ হাজার ৩৫০ জন। আর ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোন গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু হয়নি। গত বছর গর্ভবতী ছিলেন সাড়ে ৬ হাজার।
কাপাসিয়া ইউএনও মোসা: ইসমত আরা জানান, গর্ভধারণের সময় থেকে শুরু করে সন্তান প্রসবের ৪২ দিন পর্যন্ত অন্য কোন দুর্ঘটনা ছাড়া কোনো মায়ের মৃত্যুকে মাতৃমৃত্যু হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি বলেন, সংসদ সদস্য হওয়ার অনেক আগে থেকেই আমি এলাকায় মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেছি। তখন থেকেই যখন কোন মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেতাম তখন তা আমাকে খুব কষ্ট দিত। তখন থেকেই মাতৃমৃত্যু ঝুকি কমাতে নানা স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। জেলা প্রশাসক, ইউএনওসহ অন্যদের আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া এ সফলতা সম্ভব হতো না। তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্যবীমা চালু করতে পারলে মানুষ সহজেই সুস্থ থাকবে। আর মানুষ সুস্থ থাকলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠন, জ্ঞানভিত্তিক জাতি গঠন এবং মানুষকে আইন মানানো সম্ভব।