শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুরে দুবাই প্রবাসীর আড়াই বছরের এক শিশু কন্যাকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠেছে সৎ মায়ের বিরুদ্ধে। সৎ মায়ের নির্যাতনের শিশুটিকে যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথ ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এঘটনায় সৎ মাকে অভিযুক্ত করে গত বৃহস্পতিবার রাতে শিশুর দাদা শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত সৎ মা আলিফা আক্তার রিপা (৩০)। তিনি মাগুরা জেলার সদর উপজেলার ধনপাড়া গ্রামের রজব আলী বিশ্বাসের মেয়ে।
শিশুর দাদা আফাজ উদ্দিন জানান, ৮ বছর আগে প্রবাস জীবন থেকে দেশে ফিরে সাবিনা ইয়াছমিনকে পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে করেন দুবাই প্রবাসী মোস্তফা ফকির। সেই বিয়ের আড়াই বছর পর তাদের কোল আলোকিত করে জন্ম নেয় এক কন্যা শিশু। কিন্তু দুবাইতে কাজ করার সময় সেখানেই মোস্তফা ফকিরের সাথে পরিচয় হয় আলিফা আক্তার রিপার। পরে রিপার প্ররোচনায় প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেয় মোস্তফা। এসময় শিশুটির বয়স ছিল চার মাস। পরে প্রথম সংসারে জন্ম নেয়া শিশুকে দেখাশোনা, মায়ের যত্নে আদর ও ভালবাসা দেয়ার শর্তে রিপাকে বিয়ে করেন মোস্তফা। বিয়ের পর ৬ মাস পূর্বে তার আড়াই বছরের শিশুকে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে রেখে ফের প্রবাসে (দুবাই) চলে যান মোস্তফা।
আফাজ উদ্দিন আরো জানান, প্রবাসকালীন জীবনে মোস্তফা তার অর্জিত আয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বেড়াইদেরচালা এলাকায় ১৪শতাংশ জমি কিনে পাঁচ তলা ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর আলিফা আক্তার রিপার কোন সন্তান হবে না বলে চিকিৎসক জানানোর পর ভিন্ন ফন্দি আঁকেন মোস্তফার দ্বিতীয় স্ত্রী আলিফা আক্তার রিপা। সেই বাড়িটি লিখে নিতে মোস্তফাকে নানা ধরনের চাপ প্রয়োগ করেন। এতেও বাড়ীটি তার স্ত্রীর নামে লিখে দিতে রাজী হচ্ছিল না সে। পরে বাড়ীটি লিখে নিতে মোস্তফার একমাত্র ভবিষ্যত উত্তরাধিকার এই শিশুটির উপর নানাভাবে নির্যাতন শুরু করেন বলে অভিযোগ করেন তার দাদা আফাজ উদ্দিন। তিনি গত ১১আগষ্ট (বুধবার) তার শিশু নাতিকে দেখতে এসে তাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চিকিৎসকদের পরামর্শ মতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
এ ঘটনায় শিশুটির দাদা বাদী হয়ে তার সৎ মায়ের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আলিফা আক্তার রিপা বলেন, শিশুটি ভাতের মাড়ের উপর পড়ে, আবার পা পিছলে পড়ে পায়ূ পথে ও যৌনাঙ্গে এমন ক্ষত তৈরী হয়েছে। তবে পায়ূপথ ছেঁড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, পা পিছলে পড়ে এমন হতে পারে।
বাড়ীতে কেয়ারটেকার হিসেবে আছেন মোস্তফার মামা মো: মন্নাছ শেখ। তিনি বলেন, সবসময় বাড়ীতে থাকলেও শিশুটির বিষয়ে তাদের কোন তথ্য জানানো হয়নি। আগুনে পুড়লে আমি খোঁজ পেতাম। বাড়ীতে ভাড়াটিয়া রয়েছে তারা খোঁজ পেতেন অথচ কেউই জানেন না। এমন একটি ঘটনা কাউকে কিছু বুঝতে দেননি অভিযুক্ত। হঠাৎ করে দেখি শিশুটিকে নিয়ে সে চিকিৎসকদের কাছে দৌড়াদৌড়ি করছে। তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলছে গরম পানিতে এমন হয়েছে। তার ভাষ্য শিশুটিকে কারো কাছে যেতে দিত না অভিযুক্ত। এমনকি দাদা দাদির কাছেও না। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতি তদন্ত করে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা বের করার দাবী তার।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মইনুল আতিক বলেন, শিশুটিকে মূমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয় গত ১১আগষ্ট বিকেলে। তার পায়ূপথ ছেড়া ছিল ও যৌনাঙ্গে দগদগে ঘাঁ। আমাদের ধারণা শিশুটি মারাত্বক যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছে। দ্রুত শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। সাথে তার স্বজনদের দ্রুত পুলিশ কেসের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শিশুটির ফরেনসিক পরীক্ষা প্রয়োজন। যাতে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, এমন অভিযোগে ইতিমধ্যেই তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।